সংগৃহীত ছবি
পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত রাজধানীর গুলশানের বাড়ি সরকারকে হস্তান্তর করতে সংসদ সদস্য, ব্যবসায়ী ও সাবেক ফুটবলার আব্দুস সালাম মুর্শেদীকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে তা হস্তান্তর করতে বলা হয়েছে।
এ সংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তি করে আজ মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
সাবেক ফুটবলার আব্দুস সালাম মুর্শেদী এনভয় গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
তিনি বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ছিলেন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে ২০১৮ সালে তিনি খুলনা-৪ আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও নৌকা প্রতীক নিয়ে একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে পরিত্যক্ত বাড়ি দখলের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্টে রিট আবেদনটি করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
বর্তমানে সুমনও সংসদ সদস্য। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে হবিগঞ্জ-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন সুমন। বিপুল ভোটের ব্যবধানে বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীকে হারিয়ে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
রিটে বলা হয়, রাজধানীর গুলশান-২-এর ১০৪ নম্বর সড়কে সি ই এন (ডি)-২৭-এর ২৯ নম্বর বাড়িটি ১৯৮৬ সালের অতিরিক্ত গেজেটে ‘খ’ তালিকায় পরিত্যক্ত বাড়ি হিসেবে তালিকাভুক্ত।
কিন্তু আব্দুস সালাম মুর্শেদী বাড়িটি দখল করে বসবাস করছেন। এ দাবির পক্ষে আইনজীবী সুমন তার রিট আবেদনে ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল, ২০১৬ সালের ২০ জানুয়ারি ও ২০২২ সালের ৪ জুলাই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যানকে দেওয়া গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তিনটি চিঠি যুক্ত করেন। এসব চিঠির ভাষা প্রায় একই ছিল। পরিত্যক্ত বাড়ির তালিকা থেকে বাড়িটি অবমুক্ত না হওয়ার পরও আব্দুস সালাম মুর্শেদী কিভাবে বাড়িটি দখল করে আছেন, ২০১৫ ও ১৬ সালে দেওয়া চিঠিতে রাজউক চেয়ারম্যানের কাছে ব্যাখ্যা চায় পূর্ত মন্ত্রণালয়। কিন্তু রাজউক চেয়ারম্যান সে চিঠি আমলে না নেওয়ায় ২০২২ সালের ৪ জুলাই ফের চিঠি দেওয়া হয়।
এ চিঠিতে বলা হয়, পরিত্যক্ত বাড়ির তালিকা থেকে বাড়িটি অবমুক্ত না হওয়ার পরও কিভাবে রাজউক চেয়ারম্যানের দপ্তর থেকে বাড়িটির নামজারি ও দলিল করার অনুমতি দেওয়া হলো, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে অনুরোধ করা হলেও রাজউক চেয়ারম্যান সে ব্যাখ্যা দিতে অনীহা দেখিয়েছেন।
রিটের পর ২০২২ সালের ১ নভেম্বর আদালত রুলসহ আদেশ দেন। অন্তর্বর্তী আদেশে বাড়ি সংক্রান্ত যাবতীয় নথি আদালতে দাখিল করতে গণপূর্তসচিব, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান এবং আব্দুস সালাম মুর্শেদীকে নির্দেশ দেওয়া হয়। আর পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত বাড়ি দখলের কারণে আব্দুস সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, জানতে রুল জারি করা হয়। এ রুলটিই নিষ্পত্তি করে রায় দিলেন উচ্চ আদালত।
আদালতে রিটকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অনীক আর হক। আবদুস সালাম মুর্শেদীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী, মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ রাজা ও সালাম মুর্শেদীর মেয়ে সেরিনা সালাম ঐশী। আর দুদকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
রায়ের পরে আইনজীবী অনিক আর হক সাংবাদিকদের বলেন, “আদালত বলেছেন এটা পরিত্যক্ত সম্পত্তি। যেহেতু এটা পরিত্যক্ত সম্পত্তি তাই এ রায় পাওয়ার ৩ তিন মাসের মধ্যে আব্দুস সালাম মুর্শিদীকে বাড়িটি সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব সম্পত্তি বুঝে পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে আদালতকে তা হলফনামা করে জানাতে বলা হয়েছে।”
তবে এ রায়কে ‘বিরল’ উল্লেখ করে সালাম মুর্শেদীর আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ রাজা সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘এটি যে পরিত্যক্ত সম্পত্তি তা কোনো দেওয়ানী মামলার রায় দ্বারা স্বীকৃত নয়। সাধারণত দেওয়ানী আদালতের সুনির্দিষ্ট রায় ছাড়া সরাসরি সরকারের কাছে সম্পত্তি হস্তান্তরের এরকম আদেশ দেয় না। ফলে এটি বিরল একটি রায়।”
এ রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান এই আইনজীবী।