নাহিদ রানা। ফাইল ছবি
আনুষ্ঠানিকভাবে পাওয়া খবরটা নিয়ে তখনো মা-বাবার সঙ্গে কথা বলা হয়নি নাহিদ রানার। ফোন দিতেন একটু পর। মাঝখান দিয়ে ‘অনাহূত অতিথি’ হয়ে এই প্রতিবেদকের ফোন কল। অভিনন্দন জানাতেই ওপাশ থেকে নাহিদের উত্তর, ‘আলহামদুলিল্লাহ, অনেক ভালো লাগছে।
অনেক খুশি।’
নাহিদের এই খুশি প্রথমবার জাতীয় দলে ডাক পাওয়া নিয়ে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আগামী ২২ মার্চ থেকে শুরু হতে যাওয়া প্রথম টেস্টের দলে সুযোগ পেয়েছেন ২১ বছর বয়সী তরুণ ফাস্ট বোলার। অনানুষ্ঠানিকভাবে খবরটা তাঁকে পরশুই জানিয়েছিলেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ম্যানেজার শাহরিয়ার নাফীস।
তখনই মা-বাবার সঙ্গে কথা হয়েছিল। তবু আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর একটা আলাদা ব্যাপার তো আছেই। সেই কারণেই আগে থেকে ধারণা থাকার পরও প্রথম টেস্টের জন্য ১৫ সদস্যের দলে নিজের নাম দেখে রোমাঞ্চের কমতি নেই নাহিদের। সেটার উত্তরও নাহিদ দিলেন, ‘প্রথমবার জাতীয় দলে তো প্রতিদিন ডাক পাব না।
এমন ঘটনা জীবনে একবারই আসে।’
নাহিদের এই উত্থান হয়েছে খুব অল্প সময়ের মধ্যে। ক্রিকেট বলে খেলাই শুরু করেছিলেন ২০২০ সালে। এক বছরের মাথায় অভিষেক হয়ে যায় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে। উচ্চতা আর গতি দিয়ে নাহিদ চলে আসেন সবার মনোযোগের কেন্দ্রে।
পাদপ্রদীপের আলোটা সবচেয়ে বেশি পড়েছিল বিপিএলের নবম আসরে। খুলনা টাইগার্সের হয়ে নিয়মিত ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটারের ওপরে বোলিং করে চতুর্দিকে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন। এ মৌসুমে তো সর্বোচ্চ ১৪৯.৭ কিমি গতি তোলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের এই তরুণ। নাহিদকে দলে নেওয়ার কারণ হিসেবে বিসিবির দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচক প্যানেলের সদস্য আবদুর রাজ্জাক তো শুধু শুধু বলেননি, ‘রানা সম্ভাবনাময়। সে সম্ভবত এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে দ্রুতগতির বোলার এবং উইকেট থেকে তীক্ষ্ণ বাউন্সও আদায় করতে পারে। যদিও মাত্র শুরু করল সে। তবে ওর প্রথম শ্রেণির রেকর্ড খুব ভালো।’ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত ১৫ ম্যাচ খেলে ৬৩ উইকেট নিয়েছেন নাহিদ। টেস্ট দলের নিয়মিত দুই পেসার এবাদত হোসেন ও তাসকিন আহমেদ না থাকায় নাহিদের মতো তরুণ পেসারদের সুযোগ দেওয়ার এখনই সেরা সময় বলে মনে করছেন নির্বাচকরা।
নেটে ঝলক দেখিয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ও বিপিএলে যাত্রা শুরু হয়েছিল নাহিদের। জাতীয় দলের যাত্রাও তেমনই বললে অত্যুক্তি হবে না। গত বছর ইংল্যান্ড সিরিজের সময় নাহিদসহ কয়েকজন পেসারকে ডেকেছিলেন চন্দিকা হাতুরাসিংহে। নেট থেকে আগেও ক্রিকেটার পছন্দ করেছেন জাতীয় দলের হেড কোচ হাতুরাসিংহে। সে সময়ই কি নাহিদকে মনে ধরেছিল বাংলাদেশ কোচের? হতে পারে। নাহিদ জানালেন তখনই কোচ বলেছিলেন, ‘তোমাদেরকে এখানে ডাকার অর্থ তোমরা একদিন জাতীয় দলে আসবে। তখন যেন জাতীয় দলের পরিবেশ অন্য রকম মনে না হয়।’