ব্যাটিংয়ে সহজ রিশাদের পৃথিবী

তাঁর ব্যাটিংয়ের লক্ষণীয় দিকটি হলো অনসাইড খোলা জানালা হলেও অফসাইড অনেকটাই বন্ধ দরজা। মারার জন্য রিশাদ হোসেনের বেছে নেওয়া শটগুলো এমন উপসংহারে অবলীলায় পৌঁছে দেয়। সিলেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচটিতেই যেমন। সেদিন ৩০ বলে ৫৩ রানের ইনিংসে ছক্কার মার ছিল সাতটি, যা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এক ম্যাচে কোনো বাংলাদেশির সর্বোচ্চ।

প্রতিটি ছক্কাই মেরেছিলেন হয় মিড উইকেট, স্কয়ার লেগ নয়তো মিড উইকেট আর লং অনের মাঝামাঝি জায়গা দিয়ে। ওই ইনিংস যদিও দলের হার ঠেকাতে পারেনি, হারের ব্যবধানই কমাতে পেরেছে শুধু। তবে চট্টগ্রামে লঙ্কানদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে ১৮ বলে অপরাজিত ৪৮ রানের বিধ্বংসী ইনিংস রিশাদকে বানিয়ে দিয়েছে জয়ের নায়ক। এই ইনিংসের ৪ ছক্কাও যথারীতি তাঁর শক্তির জায়গা অনসাইড দিয়ে।

তাই বলে অফসাইডে রিশাদের সীমাবদ্ধতা নিয়ে এখনই প্রশ্ন তোলার সুযোগ দেখেন না ক্রিকেট কোচ ও বিশ্লেষক নাজমুল আবেদীন ফাহিম, ‘অফসাইড ও অনসাইড, দুই দিকেই ভালো খেলে, এ রকম খেলোয়াড় খুব কম আছে। ওর শক্তির জায়গা যেটি, সেদিকেই তো আক্রমণ করবে। তবে অফসাইডেও সে খেলতে পারে। অফস্টাম্পের বাইরে হাসারাঙ্গার (যে ওভারে দুই ছক্কা ও তিন চারে তুলেছেন ২৪ রান) শর্ট বলে ব্যাকফুটে গিয়ে চার মেরেছে কিন্তু।

আমি নিশ্চিত সে অফস্টাম্পের বাইরের বলও টেনে ছক্কা মেরে দিতে পারবে।’

ছক্কা মারার ক্ষেত্রে ফাহিমের কাছে যে জিনিসটি ভীষণ জরুরি বলে মনে হয়েছে, শেষ ওয়ানডেতে রিশাদের ব্যাটিংয়ে সেটির উপস্থিতিও দেখতে পেয়েছেন তিনি, “একটি জিনিস লক্ষণীয় যে সে প্রথম বলেই ছক্কা মারল (হাসারাঙ্গাকে)। এর সঙ্গে টেকনিকের কোনো সম্পর্ক নেই। এর সঙ্গে সম্পর্ক হলো মানসিকতার। সে এত স্বচ্ছন্দ্য ও আত্মবিশ্বাসী! প্রথম বলে ছয় মারতে গিয়ে আউট হওয়ার ভয় সবারই আছে।

কিন্তু ও যে সাহস করে মারল, এটি এত সহজ ব্যাপার নয় কিন্তু। এত বড় ছয় মারে ও ক্লিন হিট করে যে এটি ‘ভেরি স্পেশাল গিফট’। দিন দিন সে আরো পরিণত হবে।”

যদিও বিধ্বংসী ইনিংসে ম্যাচ জেতানোর আগে বোলিংয়ে কুশল মেন্ডিসের উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হওয়া রিশাদকে নিয়ে মাতোয়ারা হওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা জারি করেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ওয়ানডে সিরিজ জেতার পর সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক মনে করিয়ে দিয়েছেন যে তাঁর অনেকটা পথ যাওয়া এখনো বাকি, ‘এখনই খুব বেশি রোমাঞ্চিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। (রিশাদের) অনেক উন্নতির জায়গা আছে।’ ফাহিমও বোলিংয়েই তাঁর উন্নতির জায়গাটি নির্দিষ্ট করতে পারেন বেশি, ‘শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ ওয়ানডেতে ওর বোলিং আমার চোখে একটু পিছিয়ে পড়া ছিল। রক্ষণাত্মক মানসিকতা নিয়ে বোলিং করতে দেখেছি। ওর যে উচ্চতা, বল যেমন ঘোরাতে পারে এবং নিখুঁত থাকার যে ব্যাপারটি, আমার প্রত্যাশা ছিল আরো আক্রমণাত্মক বোলিং। বেশ কিছু উইকেট হারিয়ে এই ম্যাচে শ্রীলঙ্কার যে পরিস্থিতি ছিল, ওই বোলিং করাই যেত।’

সেই সঙ্গে নির্দিষ্ট একটি ডেলিভারিও রিশাদের রপ্ত করা জরুরি বলে মনে করেন ফাহিম, ‘আমার মনে হয় না গুগলির বিষয়ে ওর খুব আগ্রহ আছে। গুগলি আমি ওকে করতে দেখিনি। শেষ ওয়ানডেতে তো নয়ই। যেটি একজন লেগ স্পিনারের বড় সম্পদ। গুগলি ছাড়া একজন লেগ স্পিনার কিন্তু টিকতে পারবে না। ওখানেও উন্নতি করার সুযোগ আছে।’ বোলিংয়ে উন্নতির জায়গাগুলো দৃশ্যমান করে তোলা রিশাদের ব্যাটিং অবশ্য তাঁর পৃথিবী অনেকটা সহজও করে দিয়েছে, ‘ওর ব্যাটিংয়ের কারণে সাদা বলের ক্রিকেটে রিশাদ প্রায় অটোমেটিক চয়েস হয়ে গেল। এই দুই সংস্করণে ওর ব্যাটিংটা সবার মাথায় থাকবে। এতে দলের ভারসাম্যও অনেক সহজ হবে। ব্যাটিংটা ওর বোলিংকেও সমৃদ্ধ করবে। দলে জায়গা শক্ত হবে। দলের নতুন আসা খেলোয়াড় হিসেবে যে অস্বস্তির জায়গাগুলো ছিল, সেগুলো সরে যাবে। নিজেকে আরো ভালোভাবে প্রকাশ করতে পারবে। বিশেষ করে বোলিংয়ে।’

LEAVE A REPLY