বাংলাদেশ প্রসঙ্গে যে বিবৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার ফেডারেশন

বাংলাদেশ সরকারের জোরপূর্বক গুম, নির্যাতন, মৃত্যুদণ্ড এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দায়মুক্তি, সেই সঙ্গে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও এলজিবিটিআইকিউ জনগণের অধিকারসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনগুলোকে মোকাবিলা করতে অস্বীকৃতির বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ফেডারেশন। 

সোমবার (২৫ মার্চ) আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ফেডারেশন (এফআইডিএইচ) বাংলাদেশের বিষয়ে সর্বজনীন পর্যায় ক্রমিক পর্যালোচনার (ইউপিআর) দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের (ইউএন) মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫৫তম অধিবেশন চলাকালীন একটি বিবৃতি প্রদান করে। 

দীর্ঘস্থায়ী মানবাধিকার লঙ্ঘনগুলো মোকাবিলায় সরকারকে চাপ দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার ফেডারেশন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ফেডারেশন (এফআইডিএইচ) বাংলাদেশে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে জাতিসংঘের অনেক সদস্য রাষ্ট্রের উদ্বেগকে বৈধতা দেওয়ার পাশাপাশি এ বিষয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের একজন সদস্য হয়েও বাংলাদেশ সরকারের এহেন আচরণ অশোভনীয়। মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সুশীল সমাজের ওপর দমনপীড়ন সর্বজনীন পর্যালোচনার দাবি রাখে। সরকার আবারও বলপূর্বক গুমের ঘটনা অস্বীকার করেছে। পাশাপাশি বলপূর্বক গুম থেকে সব ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক কনভেনশন এবং নির্যাতনের বিরুদ্ধে কনভেনশনের প্রটোকলের সব সুপারিশ গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে। উপরন্তু সরকার মৃত্যুদণ্ড সংক্রান্ত সব সুপারিশ গ্রহণ করেনি, তারা বিস্ময়করভাবে মৃত্যুদণ্ডকে ‘শাস্তির একটি বৈধ রূপ’ হিসাবে বর্ণনা করেছে।

লিঙ্গ সমতার বিষয়ে, সরকার সব সুপারিশ গ্রহণ করেনি। সুপারিশে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার আহ্বান জানানো হয়েছিল। নারীর প্রতি সব প্রকার বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত কনভেনশনের ধারা ২ এবং ১৬ থেকে সংরক্ষণ প্রত্যাহার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে অস্বীকার করেছে বাংলাদেশ সরকার। পাশাপাশি সরকার এলজিবিটিআইকিউ জনগণের অধিকার সম্পর্কিত সব সুপারিশ গ্রহণ করতেও অস্বীকার করেছে, যা এটিকে ‘একটি ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নৈতিক সমস্যা’ হিসাবে গুরুত্ব দেয়।

সরকার অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনের সুপারিশ গ্রহণ করার পরও দেশের জাতীয় নির্বাচন উপহাসে পরিণত হয়েছে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন সরকারের রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন এবং সুশীল সমাজের ওপর আক্রমণের কারণে বিঘ্নিত হয়েছিল। এটিও উপহাসের বিষয় যে, সরকার সুশীল সমাজের কর্মী, আইনজীবী এবং সাংবাদিকদের নির্বিচারে গ্রেফতার ও আটক থেকে রক্ষা করার সুপারিশ গ্রহণ করেও সব ধরনের ভিন্নমতকে নীরব করার জন্য বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে চলেছে। প্রবাসে ভিন্নমতাবলম্বীদের ভয় দেখানোর সঙ্গে সঙ্গে দেশে মানবাধিকার রক্ষাকারীদের অপরাধীর তকমা দেওয়া হচ্ছে। আমরা জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে দীর্ঘস্থায়ী মানবাধিকার লঙ্ঘন, দায়মুক্তির অবসান, জবাবদিহিতা, ক্ষতিপূরণ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের পুনরাবৃত্তি না হওয়ার গ্যারান্টি নিশ্চিত করতে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায়বিচার প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দেওয়ার আহ্বান জানাই।

LEAVE A REPLY