গাজা এখন মৃত্যুপুরী! অবরুদ্ধ অঞ্চলটিতে ইসরাইলের নৃশংসতা এখনো চলমান। ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া নারকীয় তাণ্ডবের ১৭৬তম দিন (রোববার পর্যন্ত)। জাতিসংঘের যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তকে তোয়াক্কা না করে ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে ইসরাইল বাহিনী। তাদের এই অমানবিকতায় প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে অসহায় ফিলিস্তিনিরা।
গত ১৩ দিনে গাজায় নিহত হয়েছে ৪০০ নিরীহ মানুষ। শুধুমাত্র দেশটির বৃহৎত্তম আল-শিফা হাসপাতালেই নিহতদের এই সংখ্যার তথ্য পাওয়া গিয়েছে। পাশাপাশি ধ্বংস করা হয়েছে ১,০৫০ টিরও বেশি বাড়িঘর। রোববার সশস্ত্র বাহিনী হামাস নিয়ন্ত্রিত সরকারি দপ্তর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। আলজাজিরা।
ইসরাইলের আগ্রাসনের শুরু থেকেই হাসপাতালগুলো ছিল মূল টার্গেট। এর আগেও হামাসের সদর দপ্তর হিসাবে ঘোষণা করে আল-শিফায় একাধিক হামলা চালিয়েছে তারা।
হাসপাতালের আশপাশে শত শত রোগী, বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি এবং স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের আটক ও নির্যাতন করেছে। তাদের মধ্যে অসংখ্য নারী, শিশু এমনকি নবজাতকরাও ছিলেন। অমানবীয় পরিস্থিতিতে রাখা হয়েছিল তাদের। কোনো রকম পানি, খাবার এবং বিদ্যুৎ ছাড়াই আটকে রাখা হয়েছিল ১০৭ রোগী এবং ৬০ জন স্বাস্থ্যসেবা কর্মীকে। এমনকি যারা বিভিন্ন ধরনের সহায়তার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন তাদের ওপরও হামলা চালানো হচ্ছে। ফলে রেড ক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন সহায়তা সংস্থার সদস্যরা হামলায় হতাহত হচ্ছেন। গাজায় প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিআরসিএস) জানিয়েছে, গাজায় সংঘাত শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত সংস্থাটির ২৬ সদস্যকে হত্যা করেছে ইসরাইলি বাহিনী। সংস্থাটি বলছে, তাদের প্রায় ১৫ জন কর্মী মানবিক দায়িত্ব পালনের সময় ইসরাইলি হামলায় নিহত হয়েছেন। সে সময় তারা রেড ক্রিসেন্টের পোশাক পরা ছিলেন। তার পরেও তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এদিকে হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তি এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করছে ইসরাইলিরা।
এ ঘটনায় ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হাজার হাজার ইসরাইলি পতাকা ও প্ল্যাকার্ড হাতে সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দেখা যায়। সেসময় পুলিশি বাধার সম্মুখীন হয় তারা। অপরদিকে গাজায় অবিলম্বে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে মিসর, ফ্রান্স এবং জর্ডান। একই সঙ্গে হামাসের হাতে জিম্মি থাকা লোকজনকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বানও জানানো হয়। শনিবার মিসরের রাজধানী কায়রোতে তিন দেশের কূটনীতিকদের মধ্যে বৈঠকের পর তারা গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। গাজার উদ্দেশে সাইপ্রাস বন্দর ছেড়েছে তিনটি জাহাজ।
শনিবার (৩০ মার্চ) প্রায় ৩৩২ টন খাবার ও অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী নিয়ে লারনাকা বন্দর ছাড়ে জাহাজগুলো। সমুদ্রপথে প্রায় ৬০ ঘণ্টা চলার পর আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকে জাহাজগুলো অবরুদ্ধ গাজায় পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মার্কিন দাতব্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন (ডব্লিউসিকে) জানিয়েছে, জাহাজগুলোতে চাল, পাস্তা, ময়দা, লেবু, টিনজাত শাকসবজি এবং প্রোটিনজাত খাবার রয়েছে যা অন্তত ১০ লাখের বেশি খাবার প্রস্তুত করা জন্য যথেষ্ট। এছাড়া পবিত্র রমজান মাসে রোজা ভাঙার জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত খেজুর। গাজার উপত্যকায় সাহায্য পৌঁছানোর জন্য পশ্চিমা চাপের মুখে প্রায় ১৭ বছরের নৌ অবরোধ শিথিল করার পর এই মাসে দ্বিতীয়বারের মতো ত্রাণভর্তি জাহাজ এলো। মার্চের শুরুর দিকে প্রায় ২০০ টন ত্রাণ নিয়ে প্রথমবারের মতো গাজার উপক‚লে আসে স্পেনের ওপেন আর্মস জাহাজটি। গাজাবাসীর জন্য ত্রাণ দিতে অর্থায়ন করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। গাজায় সর্বশেষ গত ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরাইলি হামলায় গাজায় কমপক্ষে ৩২ হাজার ৭৮২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৭৫ হাজার ২৯৮ জন।