ঈদের ছুটি নিয়ে বিড়ম্বনা

প্রতীকী ছবি

ঈদে সরকারি ছুটি থাকে মাত্র তিন দিন। অথচ ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় জেলার মানুষকে ঈদের আগের দিন ঢাকা থেকে বাড়ি যেতে সময় লাগে প্রায় ২০ থেকে ২৫ ঘণ্টা। যানজট বাড়লে সময় আরো বেশি লাগে। ফলে কোনো রকমে রাত পার করে ঈদের পরদিন আবার ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিতে হয়।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কর্মরত ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় জেলার কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রায় এক যুগ ধরে শুনছি ঈদের ছুটি বাড়ানো হবে। কিন্তু এখনো বাড়েনি। অথচ চাকরিতে যোগদানের পর বাড়িতে গিয়ে ভালোভাবে ঈদ উদযাপন করতে পারিনি।’

সরকার সাধারণত ২৯ রোজা ধরেই বর্ষপঞ্জি তৈরি করে।

চাঁদের কারণে ২৯ রোজা শেষে ঈদ না হলে সরকার নির্বাহী আদেশে এক দিন ছুটি বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু এবার ৩০ রোজা ধরেই বর্ষপঞ্জি করা হয়েছে। এ কারণে বর্ষপঞ্জিতে ঈদের সম্ভাব্য তারিখ দেখানো হচ্ছে ১১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার। বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করতে গিয়ে জটিলতায় পড়েছেন সরকারি চাকরিজীবীরা।

তাঁরা ৯ এপ্রিল পর্যন্ত অফিস ধরে ১০ এপ্রিলের টিকিট কাটতে চান। কিন্তু ২৯ রোজা হলে ১০ এপ্রিলেই ঈদ হবে। চাকরিজীবীদের রাস্তায় ঈদের নামাজ পড়তে হবে। একই সংকট বেসরকারি চাকরিজীবীদেরও।

ছুটি নির্ধারণেই জটিলতা

২০২৩ সালে ২৯ রোজা ধরে ২২ এপ্রিল শনিবার ছিল ঈদুল ফিতরের সাধারণ ছুটি।

ঈদের আগের দিন শুক্রবার ও পরদিন রবিবার ছিল নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি। শুক্র-শনিবার ঈদের ছুটি হওয়ায় ২০ এপ্রিল বৃহস্পতিবারও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার।

এ বছর ৩০ রোজা ধরে ১১ এপ্রিল ঈদুল ফিতরের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ২৯ রোজা হলে ঈদ হবে ১০ এপ্রিল। এতে ঈদের আগের দিন ৯ এপ্রিল অফিস করতে হবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। ফলে ৯ এপ্রিল অফিস শেষে পরদিন ঈদ করতে পারবে না অনেক জেলার মানুষ।

এমন প্রেক্ষাপটে গত কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাড়তি ছুটির আশায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি শাখায় ঘোরাঘুরি করছেন। এ ছাড়া এবার রোজার ঈদে মানুষের যাতায়াত ‘নির্বিঘ্ন’ করতে সরকারি ছুটি একদিন বাড়ানোর সুপারিশ করেছে আইন-শৃঙ্খলাসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। 

গতকাল রবিবার সচিবালয়ে এই কমিটির সভায় আগামী ৯ এপ্রিল ছুটি ঘোষণার সুপারিশ করা হয়। বৈঠকের পর কমিটির আহ্বায়ক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ৯ এপ্রিল ছুটির আওতায় আনার সুপারিশ মন্ত্রিপরিষদে পাঠানো হবে। যাতে মানুষ নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে।

এ বিষয়ে অন্তত আটটি মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীরা গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, বহু বছর ধরে চলে আসা রীতি অনুযায়ী ২৮ রমজান অফিস শেষে ঈদের ছুটি শুরু হয়। এবার আমাদের মৌলিক ছুটি বাদ দেওয়া হয়েছে। অথচ যানজট কমাতে বিভিন্ন মহল থেকে ঈদের ছুটি বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে। এখন বাড়তি ছুটি তো নেই-ই, মৌলিক ছুটিও বাদ দিচ্ছে সরকার।

৯ এপ্রিলের ছুটি অনুমোদন হতে পারে আজ

আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে ৯ এপ্রিলের সাধারণ ছুটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হতে পারে।

ছুটি বাড়ানোর প্রস্তাব ৯ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি

২০১৫ সালের ২ নভেম্বরের মন্ত্রিসভার বৈঠকে ঈদের ছুটি বাড়ানোর বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছিল। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈদের ছুটি নিয়ে মন্ত্রীদের বক্তব্য আছে কি না জানতে চাইলে তৎকালীন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ঈদের সময় সরকারি ছুটি বাড়ালে মানুষ ঝক্কিঝামেলা থেকে রক্ষা পাবে, সড়কের ওপর চাপ কমবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীও সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে। বিষয়টি নিয়ে ওই সময়ের কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও মন্ত্রিপরিষদসচিব শফিউল আলম ছুটি বাড়ানোর পক্ষেই মত দেন। এরপর আর বিষয়টি আগায়নি।

LEAVE A REPLY