ইমরান খান ও বুশরা বিবির ১৪ বছরের সাজা স্থগিত

কারাগারে বন্দি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রীর দুর্নীতির দায়ে ১৪ বছরের কারাদণ্ড সোমবার দেশটির একটি উচ্চ আদালত স্থগিত করেছেন। ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) এ তথ্য জানিয়েছে।

২০২২ সালের এপ্রিলে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরান খান দুই শতাধিক আইনি মামলায় জড়িয়েছেন। তিনি এসব মামলাকে তাঁকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখার প্রচেষ্টা বলে অভিহিত করেছেন।

৭১ বছর বয়সী এ নেতা রাষ্ট্রদ্রোহ, বেআইনি বিয়েসহ আরো দুটি মামলায় এক দশক পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত রয়েছেন।

পিটিআইয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ইসলামাবাদ হাইকোর্ট রাষ্ট্রীয় উপহার বিক্রির অভিযোগে দুর্নীতিবিরোধী আদালতের দেওয়া এ দম্পতির সাজা প্রত্যাহার করেছেন। এ ছাড়া তাঁদের দোষী সাব্যস্ততার বিরুদ্ধে আপিল মুলতবি রয়েছে।

মুখপাত্র আহমেদ জানজুয়া বলেছেন, ট্রায়াল কোর্ট ‘সীমিত কৌঁসুলির প্রবেশাধিকার দিলেও আত্মপক্ষকে যুক্তি উপস্থাপন করার অনুমতি না দিয়ে তাড়াহুড়া করে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে’।

আইনজীবী ব্যারিস্টার আলী জাফর বলেছেন, ইসলামাবাদ হাইকোর্ট বলেছেন, দোষী সাব্যস্ত হওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত এ দম্পতির দুর্নীতির সাজা স্থগিত থাকবে। ঈদের ছুটির পর প্রধান আবেদন হিসেবে যুক্তি ও প্রমাণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের আইনজীবী বলেন, দোষী সাব্যস্ত করার জন্য কোনো প্রমাণ নেই। এ কারণেই আদালত আপিলের প্রথম শুনানিতে সাজা স্থগিত করেছেন।

ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে পাঁচ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের এবং ২০১৮-২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রিত্বের সময় স্থানীয়ভাবে তোশাখানা নামে পরিচিত একটি রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে প্রাপ্ত উপহার বিক্রির অভিযোগ আনা হয়েছিল। সাবেক তথ্যমন্ত্রীর দেওয়া উপহারগুলো তালিকার মধ্যে রয়েছে পারফিউম, হীরার গহনা, ডিনার সেট এবং সাতটি ঘড়ি। ঘড়িগুলোর মধ্যে ছয়টি রোলেক্স কম্পানির, যার মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল একটি প্রায় তিন লাখ ডলার মূল্যের ‘মাস্টার গ্রাফ লিমিটেড সংস্করণ’।

পাকিস্তানের ৮ ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনের আগের দিনগুলোতে কারাবন্দি ইমরান খানকে নির্বাচনে দাঁড়াতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবিকেও দুর্নীতির দায়ে সাজা দেওয়া হয়েছিল।

আদালত বলেছিল, বুশরার আগের বিবাহবিচ্ছেদের পর ইসলামী আইন লঙ্ঘন করে খুব দ্রুত ইমরান খানের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলেছেন, এটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর দল পিটিআইকে ভোট থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য একটি প্রচেষ্টা ছিল। তবে এ প্রচেষ্টা ভোটের আগে ও পরে কারচুপির ব্যাপক অভিযোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গ্রেপ্তার ও দমন সত্ত্বেও ইমরান খানের অনুগত প্রার্থীরা অন্য যেকোনো দলের চেয়ে বেশি আসন জিতেছে। তবে দেশ শাসন করার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার চেয়ে তা অনেক কম ছিল। পরে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বে পাকিস্তানের শক্তিশালী সামরিক সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত দলগুলোর একটি জোট ক্ষমতা দেশটির গ্রহণ করেছে।

ইমরান খান ২০১৮ সালে শীর্ষস্থানীয়দের সমর্থনে ক্ষমতায় বসেছিলেন। কিন্তু নাটকীয়ভাবে পতনের চার বছর পর অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। এরপর তিনি বিরোধী নেতা হিসেবে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রচারণা চালান। তিনি উসকানিমূলক দাবি করে বলেন, সেনারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য ষড়যন্ত্র করেছিল এবং তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল, যা তাঁকে আহত করেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইতিহাসের কয়েক দশক ধরে সরাসরি পাকিস্তানকে শাসন করা এবং পর্দার আড়ালে অপরিমেয় শক্তি প্রয়োগ করে চলা সামরিক বাহিনী প্রতিশোধের জন্য ইমরানকে বেসামরিক রাজনীতি থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছিল।

গত সপ্তাহে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের ছয়জন শীর্ষ বিচারক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে ইমরানের মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় চাপ প্রয়োগের জন্য অভিযুক্ত করেছেন। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী পরিচালনা করে। এ ছাড়া সরকার ম্যাজিস্ট্রেটদের অভিযোগ তদন্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যারা অভিযোগ করেছে, তাঁদের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ভয় দেখিয়েছেন এবং নজরদারি করেছেন।

সূত্র : এএফপি, রয়টার্স

LEAVE A REPLY