মার্কিন মুলুকে ‘বাংলা ফোর্স’

আফতাব আহমেদ। ফাইল ছবি

ফোনের ওপারের শোঁ শোঁ শব্দে তাঁর কথা বুঝতেই সমস্যা হচ্ছিল। রুদ্ধশ্বাসে ছুটতে থাকা আফতাব আহমেদের সঙ্গে তবু এর মধ্যেই কথোপকথন চালিয়ে নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না, ‘আমার একটু তাড়া আছে। না হলে গাড়ি থামাতাম।’

তাঁর সঙ্গে ফোনালাপ শুরুর সময়টি বাংলাদেশে প্রায় মাঝরাত।

কিন্তু সময় পার্থক্যের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় তখন সকাল। বিশ্বের আরেক প্রান্তের শহরে থিতু হওয়া বাংলাদেশ দলের সাবেক ব্যাটার এই সুযোগে এক পাক দিয়ে যান নিজ শহরের খুব আপন জায়গাগুলোতেও, ‘ঠিক এই সময়ে চট্টগ্রামে আমাকে খুঁজে পেতেন হয় আসকার দীঘির পশ্চিমপারের আড্ডায়, নয়তো এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের আশপাশে কিংবা রয়েল হাট রেস্তোরাঁয়।’

আটলান্টায় অলস আড্ডায় পার করার মতো সময় কমই পান আফতাব, ‘এখানে জীবন গতিময়। এই দেখুন না, সকালবেলা আমিও ছুটছি।

যাচ্ছি বাসা থেকে ৪০ মিনিট দূরের একটি ইনডোরে। এখানে ওয়ান টু ওয়ান কোচিং সেশন হয়। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক ছেলেকে তেমনই একটি সেশন করাতে যাচ্ছি। এসব থেকেও রোজগার খারাপ হয় না।

’ এমনিতে মাইনর লিগের দল আটলান্টা ফায়ারের হেড কোচ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে যান তিনি। অচিরেই তাঁর দল মেজর লিগেও জায়গা করে নেবে বলে বিশ্বাস করেন। তবে কোচিংয়েই শুধু নয়, মার্কিন মুলুকের ক্রিকেট বাজার নিত্যনতুন দুয়ারও খুলেছে আফতাবের জন্য।

তাঁর নামের আগে তাই এখন ‘সাবেক ক্রিকেটার’ পরিচয় সাদরে গ্রহণ করেন না। হাসতে হাসতেই বলছিলেন, ‘এখানে এসে কিন্তু আমি আবার ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করেছি।

স্থানীয় লিগে নিয়মিত খেলছি গোল্ডেন বুলসের হয়ে।’ ২০০৫ সালে কার্ডিফে বাংলাদেশের অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর মহাকাব্যে জেসন গিলেস্পিকে যেভাবে অবলীলায় ছক্কা মেরেছিলেন, এই ৩৮ বছর বয়সেও সেভাবেই মারতে পারার দক্ষতার দাবি আফতাবের, ‘অস্ত্র জমা দিয়েছি, ট্রেনিং তো আর দিইনি! বুলসের হয়ে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি আসরেও অনেক রান করেছি। সর্বোচ্চ ইনিংস ৫৬ বলে ৮৫ রানের। ছক্কাও মেরেছি বেশ কয়েকটি।’

এটিকে একজন পেশাদার কোচের স্রেফ মনের আনন্দে খেলে যাওয়া বলে ধরে নিলে ভুলই হবে। জানা যাক আফতাবের নিজের মুখ থেকেই, ‘এখানে কিন্তু অনেকের ক্যারিয়ারই নতুন করে শুরু হয়েছে। কোরে অ্যান্ডারসন থেকে শুরু করে ভারতের বেশ কয়েকজন সাবেক ক্রিকেটারও যুক্তরাষ্ট্র দলে সুযোগ পেয়েছে। আমিও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। স্থানীয় লিগে ভালো খেলে, নজরে পড়ে ওদের মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার সুযোগ থাকলে আমি কেন সেটি নেব না?’ ২০১৪ সালে ৩৬ বলে শহীদ আফ্রিদির দ্রুততম ওয়ানডে সেঞ্চুরির (৩৭ বলে) বিশ্ব রেকর্ড ভাঙা অ্যান্ডারসনের অবশ্য নিউজিল্যান্ডের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার খুব একটা এগোয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে খেলার ভাবনায় তাই ২০২০ সাল থেকে থিতু হন সেখানে। সম্প্রতি তাঁর মতো মার্কিন জাতীয় দলে ঢোকার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে দুই ভারতীয় হারমিত সিং ও মিলিন্দ কুমারেরও। ভারতের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক উন্মুক্ত চাঁদের জন্যও যুক্তরাষ্ট্র দলের দরজা খুলে যেতে পারে যেকোনো সময়।

সেই দরজায় নিজেকেসহ অনেক বাংলাদেশি ক্রিকেটারকেই দেখতে পান আফতাব, ‘এখানে দিন দিন খেলাটি বিকশিত হচ্ছে। বাংলাদেশে যাদের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছে, ওরা যুক্তরাষ্ট্রে চেষ্টা করে দেখতে পারে। অনেকে তো এর মধ্যে চলেই এসেছে।’

তাপস বৈশ্য কোচিং করাচ্ছেন আগে থেকেই। সোহরাওয়ার্দী শুভ ও মোহাম্মদ শরীফরা নিউ ইয়র্কের লিগে খেলছেন। আবুল হাসান রাজু খেলেন ওয়াশিংটন লিগে। আটলান্টার লিগে খেলা আফতাব আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার জন্য বয়সকেও এখন আর বাধা মনে করেন না, ‘পারফরম করতে পারলে এবং ফিটনেস ঠিক থাকলে সবই সম্ভব।’ কিন্তু ফিটনেসে উদাসীনতার জন্য তাঁর কুখ্যাতির কথা মনে করিয়ে দিতেই হাসতে হাসতে বললেন, ‘একটা বয়স থাকে, যখন মানুষ অনেক কিছু বোঝে না। এখন বুঝি। তাই প্রতিদিন দুই ঘন্টা জিম করি।’ একদিন মার্কিন মুলুকের ক্রিকেটে ‘বাংলা ফোর্স’ গড়ে ওঠার সিঁড়িই যেন দেখালেন আফতাব।

LEAVE A REPLY