সংগৃহীত ছবি
বিচারকাজ বাধাগ্রস্ত এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুলনার মহানগর হাকিম তরিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে হেয়প্রতিপন্ন করার অভিযোগে সেখানকার বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) জহিরুল ইসলামকে তলব করেছেন হাইকোর্ট।
আজ বুধবার (৩ এপ্রিল) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ
স্বপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ এ আদেশ দেন। আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে কেন তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। আগামী ৭ মে পিপি জহিরুল ইসলামকে আদালতে হাজির হয়ে এর ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা।
প্রধান বিচারপতির কাছে করা তরিকুল ইসলামের অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ২৫ মার্চ একটি মামলার বিচারকাজ চলার মধ্যে জহিরুল ইসলাম অন্য একটি মামলার শুনানি নিয়ে উচ্চবাচ্য করেন। বিচারক তাঁকে নিভৃত করার চেষ্টা করলে তিনি তখন বিচারকের সঙ্গে ঔদ্ধত্বপূর্ণ আচরণ করেন। পরে অন্য এক আইনজীবী হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হলে বিচারক তরিকুল ইসলাম ন্যায় বিচারের কথা বলে পিপি জহিরুল ইসলাম সংশ্লিষ্ট মামলাটি না শুনে খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে পাঠিয়ে দেন।
এ আদেশ শুনে পিপি জহিরুল ইসলাম বিচারককে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। এরপর ওই বিচারককে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ করেন জহিরুল ইসলাম। তাঁর এ ধরনের কর্মকাণ্ডের ব্যাখ্যা চেয়ে গত ২৭ মার্চ সংশ্লিষ্ট আদালত কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন।
পরদিন অর্থাৎ ২৮ মার্চ নোটিশের জবাবে দুঃখ প্রকাশ করে নিঃশর্ত ক্ষমা চান।
কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা না থাকায় গত ৩১ মার্চ প্রধান বিচারপতির কাছে জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন ওই বিচারক। অভিযোগ পেয়ে প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে ব্যবস্থা নিতে বলেন। সে ধারাবাহিকতায় অভিযোগটি হাইকোর্টে উপস্থাপন করা হয়। প্রাথমিক শুনানির শুনানির আদালত অবমাননার রুলসহ আদেশ দেন উচ্চ আদালত।
২০২২ সালে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক (বর্তমানে যুগ্ম জেলা জজ) নির্মলেন্দু দাশের সঙ্গে অশোভন-অভব্য আচরণের পর পিরোজপুরের মুখ্য বিচারিক হাকিম (সিজেএম) আবু জাফর মো. নোমানের বিচারিক কাজে বাধা ও অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ ওঠে আইনজীবী ও আইনজীবী নেতাদের বিরুদ্ধে।
এ দুই ঘটনায় উচ্চ আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে পার পান তাঁরা। তবে এসব ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুককে গালাগাল ও তাঁর সঙ্গে অশালীন আচরণের অভিযোগ আসে প্রধান বিচারপতির দপ্তরে।
এর কদিন পরেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা জজ শারমিন নিগারের নামে কুরুচিপূর্ণ স্লোগান ও বিচারকাজ বিঘ্ন সৃষ্টি করার অভিযোগ আসে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এ দুই ঘটনার একটিতে গত বছর ৫ জানুয়ারি জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ তিন আইনজীবী ও গত বছর ১০ এপ্রিল জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ ২১ আইনজীবীকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। একের পর এক এ ধরনের ঘটনাকে বিচার বিভাগের জন্য অশনি সংকেত হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন হাইকোর্ট।