দল আছে কিন্তু খেলা নেই

ফিফা-এএফসির টুর্নামেন্ট ছাড়াও বছরের বিভিন্ন সময়ে প্রীতি ম্যাচ খেলে থাকে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। সিনিয়র দল বছরজুড়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ব্যস্ত থাকলেও উল্টো চিত্র বয়সভিত্তিক দলগুলোতে। প্রতিবছর সাফ কিংবা এএফসির টুর্নামেন্ট ছাড়া উঠতি খেলোয়াড়দের প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলার আর কোনো সুযোগ নেই। তাতে সাফের গণ্ডি পেরিয়ে শক্তিতে এগিয়ে থাকা কোনো দেশের বিপক্ষে খেলার সুযোগও মিলছে না।

টুর্নামেন্ট এলে সেটিকে লক্ষ্য ধরে অনুশীলনেই সারতে হচ্ছে প্রস্তুতি।

বিশ্ব ফুটবলের দিকে তাকালেই দেখা যায়, শুধু সিনিয়র জাতীয় দল নয়; বয়সভিত্তিক দলগুলোও নিয়মিত প্রীতি ম্যাচ খেলে থাকে। পাশের দেশ ভারতও সম্প্রতি সেই পথ ধরেছে। দেশটির অনূর্ধ্ব-২৩ দল গত মাসেই মালয়েশিয়ার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলে এসেছে।

তাহলে বাংলাদেশ কেন নয়? বাফুফের ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মানিক এ ব্যাপারে বলছিলেন, ‘প্রীতি ম্যাচ খেলাতে পারলে খুবই ভালো হতো। নানা কারণে সেটা সম্ভব হয় না। বছরজুড়েই অনেক শিডিউল থাকে। যে কারণে আগে কখনো এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

তবে আমরা চেষ্টা করব ম্যাচের ব্যবস্থা করার।’ ফুটবল ফেডারেশনের নতুন টেকনিক্যাল ডিরেক্টর সাইফুল বারীও ম্যাচ আয়োজনের পক্ষে, ‘আমরাও চাই এই ছেলেরা বেশি বেশি ম্যাচ খেলুক। কিন্তু প্রতিপক্ষ খুঁজে পাওয়ার একটা ব্যাপার আছে। দক্ষিণ এশিয়ায় এই রীতি নেই। আমাদের তাই এশিয়ার অন্য দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে আয়োজন করতে হবে।

সাফের আসরগুলোতে বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক দলগুলো ভালো করলেও এশিয়ান পর্যায়ে গিয়ে বরাবর কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। যেমন, গত বছর এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে অনূর্ধ্ব-২৩ দল তিন ম্যাচেই বড় হার নিয়ে ফিরেছে। ২০২১ সালেও ছিল করুণ অবস্থা। বিভিন্ন ক্লাবে বা একাডেমিতে থাকা ফুটবলারদের এমন টুর্নামেন্টের আগে এক ছাদের নিচে আসা হয়। কয়েক দিন ক্যাম্প করেই নামিয়ে দেওয়া হয় মাঠের লড়াইয়ে। কিন্তু এত দ্রুত সময়ে দলের মধ্যে বোঝাপড়ায় যে ঘাটতি থেকে যায় সেটা ম্যাচের ফলেই বলে দেয়। যে কারণে নিজেদের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে ও প্রতিযোগিতামূলক মনোভব বাড়াতে প্রীতি ম্যাচ খেলার বিকল্প নেই। বাফুফের এলিট একাডেমির দায়িত্বে থাকা ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলারও মনে করেন সেটাই, ‘প্রীতি ম্যাচকে সব সময় স্বাগত জানাই। আমাদের ওখানে (ইংল্যান্ডে) এ ধরনের দলগুলো নিয়মিত ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়। এতে তরুণরা যেকোনো পর্যায়ের ম্যাচ খেলতে প্রস্তুত থাকে। এখানে যদি সেই ব্যবস্থা করা যায় তাহলে দারুণ হবে। ছেলেদের লড়াইয়ের মানসিকতা বাড়বে।’ এ বছরের সেপ্টেম্বরে আছে অনূর্ধ্ব-১৯ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। সেই টুর্নামেন্টে এলিট একাডেমিতে থাকা দলটিই অংশ নেবে। যারা এখন চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ খেলেই প্রস্তুত হচ্ছে। কিন্তু পাচ্ছে না বাইরের কোনো দলের বিপক্ষে খেলার সুযোগ। গত বছর অনূর্ধ্ব-১৬ সাফ খেলেছিল বাংলাদেশ। এর পর থেকেই আছে খেলার বাইরে। যদিও ওই দলের অনেকেই এবার অনূর্ধ্ব-১৯ সাফেও খেলবেন। ম্যাচ প্রস্তুতির ঘাটতিটা তাই থেকেই যাবে।

টুর্নামেন্টের বাইরে ম্যাচ না থাকায় অনেক তরুণ ফুটবলারকে প্রতিযোগিতামূলক খেলার বাইরে থাকতে হচ্ছে লম্বা সময়। সেটা পাঁচ-ছয় মাস থেকে পেরিয়ে গেছে বছরখানেকও। আবার অনেকেই বয়সভিত্তিক ফুটবল মাতিয়ে এখন লাল-সবুজের জার্সিতেও নিয়মিত খেলছেন। ২০২২ সালে অনূর্ধ্ব-২০ সাফে খেলা জাতীয় দলের রফিকুল ইসলাম, মজিবুর রহমান জনিরা নজরে আসেন সাফের এই টুর্নামেন্ট খেলেই। আরো কয়েকজন জাতীয় দলে আসা-যাওয়ার মধ্যেই আছেন। বয়সভিত্তিক ফুটবলে নৈপুণ্য দেখাতে পারলে জাতীয় দলের দরজাও খুলে যায়। সে ক্ষেত্রে তরুণ ফুটবলাদের প্রস্তুত রাখতে টুর্নামেন্টের পাশাপাশি প্রীতি ম্যাচেরও ব্যবস্থা রাখা অত্যাবশ্যক।


LEAVE A REPLY