প্রতীকী ছবি
গত অক্টোবর থেকে জন্ম নিবন্ধন দেওয়া শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। তাদের দেওয়া জন্ম নিবন্ধনে শিশুরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারলেও পাসপোর্ট করানো যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পাসপোর্টের মতো সরকারি অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ডিএসসিসির সার্ভারে কানেক্টিভিটি করা সম্ভব হয়নি।
ডিএসসিসি সূত্র জানায়, তারা এরই মধ্যে ২৬টি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছে, যাতে পাসপোর্ট বা এ জাতীয় সেবা পেতে কোনো ধরনের সমস্যা না হয়।
কিন্তু সেই সার্ভারগুলো এখনো ডিএসসিসির নিজস্ব সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত হয়নি। তবে ডিএসসিসির সার্ভারের মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন করে শিশুদের স্কুলে ভর্তিসহ কিছু সুবিধা পাচ্ছে নগরবাসী। প্রতিদিনই নতুন জন্ম নিবন্ধন নিচ্ছে অনেকে। গত বছর অক্টোবর থেকে শুরু করে চলতি বছর মার্চ মাস পর্যন্ত ডিএসসিসি থেকে মাসে গড়ে প্রায় ১৫ হাজার জন্ম নিবন্ধন নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, গত বছর অন্তত ছয় মাস বন্ধ ছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের শিশুদের জন্ম সনদ প্রদান কার্যক্রম। যার মধ্যে তিন মাস সম্পূর্ণরূপে কার্যক্রমটি বন্ধ রাখে তারা। পরে গত অক্টোবরে নিজস্ব সার্ভার চালু করে জন্ম নিবন্ধন সেবা দিতে শুরু করে ডিএসসিসি। তবে নিজস্ব সার্ভারের সঙ্গে অন্যান্য সেবাকেন্দ্রিক সার্ভারের সংযোগ না থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
লালবাগের বাসিন্দা আজহার শাহীন বলেন, ‘গত বছর মার্চ মাসে মেয়ের জন্ম নিবন্ধন করাতে কাউন্সিলর অফিসে গেলে জানানো হয় সার্ভারে সমস্যা। কয়েক দিন পরে গেলেও একই কথা জানায়। পরে জানতে পারি, সিটি করপোরেশন নাকি জন্ম নিবন্ধন করে দিচ্ছে না। এমন অবস্থায় মেয়েকে শর্তসাপেক্ষে একটি বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করাই। পরে অক্টোবর মাসে জোন অফিসে গিয়ে জন্ম নিবন্ধন করতে পারি।
’
আজহার শাহীন জানান, চলতি বছরের শুরুতে মেয়ের পাসপোর্টের আবেদন করলে সেটি গ্রহণ করা হচ্ছিল না। পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, জন্ম নিবন্ধনের যে নম্বরটি দেওয়া আছে সেটি পাসপোর্ট অফিসের অনলাইনে পাওয়া যায় না। বিষয়টি তিনি সিটি করপোরেশনকে জানালে তারা বলে, একটা সমস্যা আছে। তবে দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে।
জানা যায়, নাগরিকদের বেশ কিছু সেবা পেতে জন্ম নিবন্ধন থাকতে হয়। বিশেষত ব্যাংকে হিসাব খোলা, বিবাহ নিবন্ধন, আমদানি-রপ্তানির লাইসেন্স প্রাপ্তি, পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাস ও টেলিফোন সংযোগ প্রাপ্তি, ট্যাক্স আইডেনটিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) প্রাপ্তি, পাসপোর্ট ইস্যু, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, সরকারি-বেসরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় নিয়োগ, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু, ভোটার তালিকা প্রণয়ন, জমি-ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন, ঠিকাদারের লাইসেন্স প্রাপ্তি, বাড়ির নকশা অনুমোদন, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, ট্রেড লাইসেন্স, জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তি এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে বয়স প্রমাণ করতে জন্ম নিবন্ধন থাকতে হয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাসের কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পাসপোর্টের সঙ্গে ডিএসসিসির সার্ভার কানেক্টিভিটির কাজ চলছে। দ্রুত সেটি হয়ে যাবে। এ ছাড়া আরো ২৫টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো সম্মতিও দিয়েছে। বাস্তবায়নে একটু সময় লাগছে।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা জানান, কেন্দ্রীয়ভাবে জন্ম নিবন্ধনের জটিলতা দেখা দেওয়ায় নিজস্ব সার্ভারে জন্ম নিবন্ধনের কাজ শুরু করে ডিএসসিসি। কিন্তু জন্ম নিবন্ধন সার্ভারের সঙ্গে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সার্ভার কানেক্ট না থাকায় ভোগান্তি হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত বছর জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের ফি সিটি করপোরেশন পাবে নাকি সরাসরি সরকারি কোষাগারে জমা হবে—এ নিয়ে সমস্যার সূত্রপাত হয়। ফি পরিশোধে ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু করে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, যার ফলে এই ফি সরাসরি চলে যায় রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। এ কারণেই বন্ধ রাখা হয়েছিল দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জন্ম নিবন্ধন সেবা। পরে নিজস্ব সার্ভারে সেবা দেওয়া শুরু করে ডিএসসিসি।
তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পুরনো ওয়ার্ডগুলোতে কাউন্সিলর অফিসের মাধ্যমেই জন্ম নিবন্ধন সনদ গ্রহণ করা যাচ্ছে। তারা আগের পদ্ধতিতে, আগের ওয়েবসাইট থেকেই জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন প্রক্রিয়ার কাজ সম্পন্ন করছে। উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন বলেন, ‘সব এলাকার বাসিন্দারাই নিজ নিজ ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় গিয়ে তাদের সন্তানদের জন্ম নিবন্ধন করিয়ে নিতে পারছে।’