ম্যাথু মিলার
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ভারতের চাপে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আত্মগোপন করেছিলেন- এমন ধারণা নাকচ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সোমবার রাতে ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস প্রসঙ্গে সাবেক ভারতীয় এক হাইকমিশনারের বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
প্রশ্নোত্তর পর্বে একজন সাংবাদিক বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচনের প্রাক্কালে কথিত ভারতীয় চাপে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আত্মগোপন করেছিলেন-এটি কি সত্য? ভারতের একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক, যিনি বাংলাদেশে একসময় ভারতের হাইকমিশনার ছিলেন তিনি নয়াদিল্লিতে একটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এ অভিযোগ করেছেন।
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেন, আমি নয়াদিল্লিতে সব বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানের দিকে নজর রাখিনি।
পিটার হাস প্রসঙ্গে হাসতে হাসতে তিনি বলেন, না। এটি সঠিক তথ্য নয়।
সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক নির্বাচনের আগে কূটনৈতিক তৎপরতার কিছু তথ্য ওঠে আসে।
দিল্লির থিংক ট্যাংক ‘অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনে’ (ওআরএফ) নিজের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে ভারতের সাবেক শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক ও ঢাকায় সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ ভারত যে মোটেই পছন্দ করছে না, বাইডেন প্রশাসনের কাছে দিল্লি এটা স্পষ্ট করে দেওয়ার পরেই ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে অনেকটা আত্মগোপনে চলে যেতে হয়েছিল।
অনুষ্ঠানের প্রশ্নোত্তর পর্বে একটি প্রশ্নের জবাবে পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি— ভারতের পক্ষ থেকে তখন এই কড়া বার্তাটা যুক্তরাষ্ট্রকে শুনিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যার পরিণতিতে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত, যিনি তার কিছু দিন আগেও অমুক বিএনপি নেতাকে দাওয়াত দিয়ে বাড়িতে ডেকে আনছিলেন বা তমুক বিএনপি নেতার বাসায় গিয়ে হাজির হচ্ছিলেন– তাকে আর ভোটের সময় দেখাই গেল না! কোথায় যে তিনি গা ঢাকা দিলেন সেটা তিনিই জানেন!’
গত ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের সংসদীয় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ বলা যায় কিনা, এমন একটি প্রশ্নের জবাবে পিনাক বলেন, কোনো দল যদি নিজেদের সিদ্ধান্তে নির্বাচনে না অংশ নেয়, তাহলে তার জন্য বিজয়ী দলকে দোষারোপ করা সাজে না।
পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘আমাদের ভারতেও হামেশাই দেখা যায় যে, দল জানে তারা ভোটে হারবে, তারা অনেক আগে থেকে বলতে শুরু করে ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটযন্ত্র) কারচুপি করা হচ্ছে। কাজেই তাদের অজুহাতের অভাব হয় না।
’
অনুষ্ঠানে অন্যতম আলোচক, সাবেক ভারতীয় কূটনীতিবিদ ও ঢাকায় সাবেক হাইকমিশনার বিনা সিক্রি বলেন, তার মূল্যায়ন হলো যুক্তরাষ্ট্র আসলে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীকে একটি ‘মডারেট’ (মধ্যপন্থি) ইসলামপন্থি দল হিসেবে বিবেচনা করে এবং তাদের কোনো ধারণাই নেই যে, জামায়াতের চিন্তা-চেতনা ও কর্মকাণ্ড কতটা উগ্রবাদী। বিনা সিক্রি মনে করেন, এই ‘ভুল ধারণা’র ভিত্তিতেই জামায়াত ও তাদের রাজনৈতিক সঙ্গী বিএনপি আমেরিকার কাছ থেকে প্রশ্রয় পেয়ে আসছে।
এই প্রসঙ্গে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করে পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, তিনি মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রও আসলে জানে জামায়াতের প্রকৃত রূপটা কী। কিন্তু সেই একাত্তর থেকে আওয়ামী লীগের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের যে বিদ্বেষমূলক একটা মনোভাব ছিল, তার প্রতিফলন আজও রয়ে গেছে। এ কারণেই ওয়াশিংটন আজ অর্ধশতাব্দী বাদেও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের তোল্লাই দিয়ে যাচ্ছে।
সেদিনের আলোচনায় আরো অংশ নেন বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক এবং ওআরএফ কলকাতার পরিচালক অনুসুয়া বসুরায় চৌধুরী। সঞ্চালনা করেন ওআরএফ দিল্লির সিনিয়র ফেলো তথা স্ট্র্যাটেজিক বিশ্লেষক সুশান্ত সারিন।