ঈদ বাজার: আড়াই লাখ কোটি টাকা বাণিজ্যের প্রত্যাশা

গৃহীত ছবি

মূল্যস্ফীতির চাপ, ডলার সংকট ও নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের উচ্চমূল্য—এসবের মধ্যেও ঈদকে ঘিরে এবার দেশের অর্থনীতি অনেকটা চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। এবারের ঈদ বাজার থেকে আড়াই থেকে পৌনে তিন লাখ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।

এবারের ঈদের বাজারে ফ্যাশন হাউসগুলোর ব্যবসার পরিধি বেড়েছে। এত দিন এই ব্যবসা শুধু আউটলেটগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।

গত কয়েক বছরে বিভিন্ন করপোরেট হাউসেও যাচ্ছে তাদের পণ্য। ফলে ব্যবসায়ীদের আশা, এবার শুধু পোশাকের বাজারেই লেনদেন হতে পারে ৮০ থেকে ৯০ হাজার কোটি টাকা।

এ ছাড়া নিত্যপণ্যের বাজারে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা লেনদেনের প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এর বাইরে ইলেকট্রনিকস, মিষ্টির বাজার, বিনোদন ও পরিবহন খাতে বাড়তি  অর্থ যোগ হবে।

এর সঙ্গে সাড়ে ১২ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ঈদ বোনাস, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় দেড় কোটি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ঈদ বোনাস এবং দোকান কর্মচারী, পোশাক ও বস্ত্র খাতের শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার শ্রমজীবীদের ঈদ বোনাসও যুক্ত হবে ঈদ বাজারে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি হেলাল উদ্দিন এফবিসিসিআইয়ের এক সমীক্ষার তথ্য উল্লেখ করে বলেন, ঈদ বাজারকে ঘিরে এর আগে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। এবার সেটা আড়াই লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে শুধু পোশাকের বাজারেই যোগ হবে ৮০ থেকে ৯০ হাজার কোটি টাকা।

এ ছাড়া নিত্যপণ্যের বাজারে বাড়তি যোগ হবে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা।

দেশের অন্যতম শীর্ষ ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড অঞ্জনসের কর্ণধার শাহীন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ফ্যাশন হাউসগুলোতে এবার ক্রেতা-বিক্রেতার চাপ থাকলেও আশানুরূপ ব্যবসা হয়নি। অঞ্জনের বিক্রির লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কম হয়েছে। তিনি মনে করেন অর্থনৈতিক মন্দা, পণ্যের চড়া দাম এ জন্য অনেকটা দায়ী।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির দেওয়া তথ্য মতে, ধনীদের দেওয়া জাকাত ও ফিতরা বাবদ যুক্ত হবে প্রায় ৩৮ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা।

পরিবহন খাতে অতিরিক্ত বাণিজ্য হবে এক হাজার কোটি টাকা। ঈদকে কেন্দ্র করে ভ্রমণ ও বিনোদন বাবদ ব্যয় হয় চার থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা।

এ ছাড়া আয়ের হিসাবে সাড়ে ১২ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ৬০ লাখ দোকান কর্মচারী, তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ৭০ লাখ শ্রমিকের বোনাসও ঈদের অর্থনীতিতে যুক্ত হয়। রয়েছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। ঈদের সময় প্রবাসীরা তাঁদের আত্মীয়-স্বজনের বাড়তি চাহিদা মেটাতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা পাঠান। এর সঙ্গে যুক্ত হবে সরকারি ও বেসরকারি খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদ বোনাস।

ঈদে সব ধরনের ভোগ্য পণ্যের চাহিদা অনেক বাড়ে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ভোজ্য তেল, মাংস, চিনি, ডাল, সেমাই এবং পেঁয়াজ। ফলে এসব পণ্যের আমদানিও বাড়ে। রোজা ও ঈদে ভোজ্য তেলের চাহিদা প্রায় আড়াই লাখ টন, চিনি সোয়া দুই লাখ থেকে পৌনে তিন লাখ টন, ডাল ৬০ হাজার টন, ছোলা ৫০ হাজার টন, খেজুর ১৩ হাজার টন, পেঁয়াজ তিন লাখ ২৫ হাজার থেকে তিন লাখ ৫০ হাজার টন, রসুনের চাহিদা প্রায় ৮০ হাজার টন। এসব পণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীদের নিজস্ব টাকার পাশাপাশি ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের টাকার জোগান দেওয়া হয়।

ভোগ্য পণ্য বাজারে রমজান মাসজুড়ে অস্থিরতা থাকলেও সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির সেবা মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে বলে মনে করেন কনজিউমার অ্যাসোশিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এ এস এম নাজের হোসাইন।

তিনি বলেন, ভোগ্য পণ্য বাজারের মধ্যস্বত্বভোগীদের রাজত্ব ছিল রমরমা। বিশেষ করে তরমুজসহ কৃষি পণ্যে চাহিদা ছিল বেশ। কিন্তু এ ব্যবসা দাদন ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যাওয়ায় কৃষকরা বঞ্চিত হয়েছেন।

ঈদ উৎসবের অর্থনীতিতে দেশের দোকান কর্মচারীদের বোনাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির হিসাবে দেশে ২৫ লাখ দোকান, শপিং মল ও বাণিজ্য বিতান রয়েছে। গড়ে একটি দোকানে তিনজন করে প্রায় ৬৫ লাখ জনবল কাজ করছে। সংগঠনটির হিসাবে কম করে হলেও একজন কর্মীকে পাঁচ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বোনাস দেওয়া হয়। ওই হিসাবে গড়ে বোনাস আট হাজার টাকা ধরে চার হাজার ৮০০ কোটি টাকা বোনাস দেওয়া হয়।

দোকান মালিক সমিতির হিসাব অনুসারে, ঈদ উপলক্ষে সামাজিক কর্মকাণ্ড বেড়ে যায়। প্রতিটি মুসলমানের জন্য দান বাধ্যতামূলক। বিশেষ করে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশে প্রায় ৪৯৫ কোটি টাকা ফিতরা দেওয়া হয়। এ ছাড়া বড় বড় শিল্পগোষ্ঠী এই রোজার বিপুল পরিমাণ ঈদ সামগ্রী এবং ইফতার বিতরণ করে।

সব কিছু মিলিয়ে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বিপুল অর্থ লেনদেনের কারণে অর্থনীতিতে বড় ধরনের গতিশীলতা এসেছে। সেই সুফল পেয়েছে দেশের মানুষ। ব্যাংকিং খাতে লেনদেন ব্যাপক বেড়েছে। ঈদের কেনাকাটায় এটিএম বুথ থেকে প্রতিদিন শত কোটি টাকার বেশি উত্তোলন করছেন গ্রাহকরা। মোবাইল লেনদেন প্রতিদিন বাড়ছে। এ ছাড়া মানুষের চাহিদা পূরণে বাজারে অতিরিক্ত নতুন নোট ছেড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।


LEAVE A REPLY