দেশের যেসব স্থানে ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা, বাড়তে পারে তাপমাত্রা

দেশে তাপপ্রবাহের এলাকা গত দুই দিনে কিছুটা কমেছে। কোনো কোনো অঞ্চলে স্বল্প পরিসরে বৃষ্টিও হচ্ছে। অথচ সামগ্রিকভাবে দেশের তাপমাত্রা ও গরমের অনুভূতি সেভাবে কমছে না। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বৃষ্টি বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে না হয়ে খুব অল্প জায়গায় হচ্ছে।

বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণও বেশি। তাপপ্রবাহের এলাকা কমলেও দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। গরমের অনুভূতি এসব কারণেই তেমন কমছে না।

আবহাওয়া অফিস বলছে, ওপরের কারণগুলোর জন্যই আজ শুক্রবার দেশের ছয় বিভাগের কোথাও কোথাও ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা সত্ত্বেও দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।

প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে রাতের তাপমাত্রা। বাতাসে জলীয়বাষ্প বেশি থাকায় অস্বস্তিকর গরমের অনুভূতি আরো বাড়তে পারে। আগামীকাল শনিবার দিন ও রাতের তাপমাত্রা দুটিই প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

চলমান গরমের বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন যে পরিসরে বৃষ্টি হচ্ছে, তা তাপমাত্রার ওপর তেমন একটা প্রভাব ফেলে না।

এই সময়টায় খুব ক্ষুদ্র পরিসরে কোনো একটা এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি হওয়া এলাকায় তাত্ক্ষণিকভাবে কিছু সময়ের জন্য তাপমাত্রা কমলেও সামগ্রিকভাবে পুরো দেশে এর তেমন কোনো প্রভাব নেই।’

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, দেশে বাতাস এখন দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে আসছে। অর্থাৎ সমুদ্র থেকে স্থলভাগে জলীয়বাষ্প আসছে। বাতাসের দিক পরিবর্তন হলে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে।

তখন অস্বস্তিকর গরমের অনুভূতিও কমতে পারে।

আবহাওয়াবিদ নাজমুল হক বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, এখন (গতকাল সন্ধ্যায়) যেমন সিলেট, ময়মনসিংহ ও রংপুরে বাতাস দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বমুখী। অর্থাত্ এসব অঞ্চলে বাতাস পুরোপুরি সমুদ্র থেকে আসছে না। ফলে সেখানে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ স্বাভাবিকভাবেই দক্ষিণের চেয়ে কম।

বুধবার দেশের পাঁচ বিভাগে তাপপ্রবাহ থাকলেও গতকাল বৃহস্পতিবার তা অনেকটাই কমেছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ (৪০-৪১.৯ ডিগ্রি) বয়ে গেছে। এ ছাড়া দিনাজপুর, চাঁদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু (৩৬-৩৭.৯ ডিগ্রি) থেকে মাঝারি (৩৮-৩৯.৯ ডিগ্রি) তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। আজও এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।

গতকাল সারা দেশে অঞ্চলভেদে দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র। চুয়াডাঙ্গা ও ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৩ ডিগ্রি বেশি ছিল। রাতের তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের চেয়ে ১ থেকে ৩ ডিগ্রি বেশি।

এদিকে এ নিয়ে টানা তিন দিন চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হলো। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যৌথভাবে যশোর ও চুয়াডাঙ্গায়, ৪০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া বাগেরহাটের মোংলা ও কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি। ঢাকায় এ সময় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৬.৮ ডিগ্রি।

তাপপ্রবাহের এলাকা এখন কিছুটা কমলেও আগামী শনিবারের (২০ এপ্রিল) পর থেকে তা আবার বাড়তে পারে বলে জানান আবহাওয়াবিদ নাজমুল হক। এ সময় তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রিও ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

আজকের পূর্বাভাস

এদিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টিও হতে পারে কোথাও কোথাও। তবে আগামী দুই দিনে বৃষ্টিপাতের এলাকা কিছুটা কমতে পারে। আগামীকাল শনিবার রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগ এবং পরদিন রবিবার ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশের ৯ জেলায় সামান্য থেকে মাঝারি বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। সর্বোচ্চ ২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে ফেনীতে। ঢাকাতে এ সময় সামান্য (১ মিলিমিটারেরও কম) বৃষ্টি হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গায় তিন দিন ধরে তীব্র তাপপ্রবাহ

সাত দিন ধরে টানা তাপপ্রবাহ চলছে চুয়াডাঙ্গায়। এর মধ্যে তিন দিন ধরে চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। দুপুরের পর থেকে রাস্তায় লোকজন কমে যাচ্ছে।

তীব্র তাপপ্রবাহ প্রভাব ফেলছে স্থানীয় কৃষিতেও। সদর উপজেলার বেলগাছি গ্রামের কৃষক ইনতাজ আলী বলেন, এখন রোদ ও গরমে ক্ষতি হচ্ছে মাঠে থাকা ফসলের। রোগবালাই দেখা দিচ্ছে। গাছ নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। গাছ থেকে অপরিপক্ব কলা ঝরে পড়ে যাচ্ছে। ধান চিটা হওয়ারও ভয় আছে।

* প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
 

LEAVE A REPLY