রাজধানীসহ সারা দেশে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোববার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, ঢাকার অদূরে গাজীপুরের টঙ্গী শিল্পাঞ্চলে সক্রিয় অন্তত ৫০ কিশোর গ্যাং। চুরি-ডাকাতি, খুন-ধর্ষণ, ছিনতাই-চাঁদাবাজি এবং মাদক, অস্ত্র ও দখল বাণিজ্যসহ এমন কোনো অপরাধ নেই, যা এরা করে না।
শুধু সাধারণ মানুষই নয়, এসব কিশোর অপরাধী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপরও হামলা করেছে। একশ্রেণির গডফাদারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকায় এদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। দুর্ধর্ষ এসব কিশোর গ্যাং এখন এ শিল্পাঞ্চলের আতঙ্ক। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ সমস্যাটি এখন ক্রমেই সারা দেশে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কদিন আগে যুগান্তরেই প্রকাশ পেয়েছিল, সাভারের পাড়া-মহল্লায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের মদদে কীভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে শতাধিক কিশোর গ্যাং। দেখা যাচ্ছে, এদের পৃষ্ঠপোষক স্থানীয় নেতাকর্মীরা আইনি জটিলতা এড়াতে কিশোরদের ব্যবহারের কৌশল নিয়েছেন।
শুধু আমরাই নই, ইতঃপূর্বে নানা মহল এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও কিশোর গ্যাং দমনে চালিয়েছে বিশেষ অভিযান। তা সত্ত্বেও বন্ধ হয়নি কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এদের পৃষ্ঠপোষকের মধ্যে রয়েছেন বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলর, স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা, এমনকি সাবেক সংসদ-সদস্যও। কাজেই কিশোর গ্যাং দমন করতে হলে কেবল গ্যাংয়ের সদস্যদের গ্রেফতার করলেই চলবে না, তাদের গডফাদারদের বিরুদ্ধেও নিতে হবে ব্যবস্থা।
এখানেই শেষ নয়, কিশোরদের অপরাধে সম্পৃক্ত হওয়ার পেছনে অভিভাবকরাও দায় এড়াতে পারেন না। দেখা যায়, কোনো কোনো অভিভাবকের উদাসীনতা তো আছেই, এলাকায় সন্তানের প্রভাব ও অর্থের লোভ তাদেরও আকর্ষণ করে। তাই আমরা মনে করি, প্রয়োজনে এসব কিশোর গ্যাং সদস্যের পরিবারকেও সামাজিকভাবে বয়কটের মতো শাস্তির আওতায় আনা দরকার।
ভুলে গেলে চলবে না, এ সমস্যার এখনই লাগাম না টানলে তা বল্গাহীন হয়ে উঠবে। কিশোর গ্যাংয়ের কারণে দেশে অপরাধই যে শুধু বাড়ছে তাই নয়, এতে সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জীবনপাঠের গোড়াতেই অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে। আমরা আশা করব, সরকারের নীতিনির্ধারকরা এটা অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন। কিশোর গ্যাংয়ের পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন কোনো অদৃশ্য বাধার সম্মুখীন না হয়; বরং তারা যেন সরকারের কাছ থেকে এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা পায়, এটাই প্রত্যাশা।