কে এই ইব্রাহিম রাইসি?

প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। ছবি: এএফপি

হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। স্থানীয় সময় আজ সোমবার সকালে ইরানি সংবাদমাধ্যম ‘তেহরান টাইমস ও মেহের নিউজ’সহ স্থানীয় আরো কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে। 

৬৩ বছর বয়সী ইব্রাহিম রাইসির জন্ম ১৯৬০ সালে উত্তর-পূর্ব ইরানের শহর মাশহাদে। মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি তেহরানের পার্শ্ববর্তী শহর কারাজের প্রসিকিউটর-জেনারেল নিযুক্ত হন।

১৯৮৯ থাকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত রাইসি তেহরানের প্রসিকিউটর-জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪ সাল থেকে তিনি এক দশক জুডিশিয়াল অথোরিটির উপপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালে তাকে বিচার বিভাগের প্রধান নিযুক্ত করেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি।

কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত রাইসি পরবর্তীতে ৮৮ সদস্যের বিশেষজ্ঞ সভার উপচেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা নির্বাচনসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে এ সভা। তাকে দীর্ঘদিন ধরেই ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির স্বাভাবিক উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০২১ সালে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচন করে ইরানের অষ্টম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ইব্রাহিম রাইসি।

ইব্রাহিম রাইসি ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ছয়টি প্রধান শক্তির সঙ্গে স্থগিত আলোচনায় দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন।

তিনি ইরানের ক্রমবর্ধমান উন্নত পারমাণবিক কর্মসূচিতে শুধুমাত্র ন্যূনতম নিষেধাজ্ঞার বিনিময়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থেকে উল্লেখযোগ্য ত্রাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়েছিলেন। ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ছয় বড় শক্তির সঙ্গে তেহরান যে পারমাণবিক চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল তা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয় এবং ইরানের ওপর কঠোর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করে। জবাবে তেহরান ধীরে ধীরে চুক্তির পারমাণবিক বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করতে শুরু করে। প্রতিবেশী আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার এবং ওয়াশিংটনের সুইং পলিসির কারণে ইরানের কট্টরপন্থীদের কাছ থেকে বরাবরই উৎসাহ পেয়ে এসেছেন তিনি।

দেশীয় রাজনীতিতেও রাইসির কট্টরপন্থী অবস্থান ছিল স্পষ্ট।

তার নির্বাচনের এক বছর পর ইরানে হিজাব এবং সতীত্ব আইনের প্রয়োগকে কঠোর করা হয়। এর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সেই আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে নৈতিকতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর মাহসা আমিনি নামে এক তরুণ কুর্দি ইরানি মহিলা হেফাজতে থাকা অবস্থায় মারা যান। এর প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভের ফলশ্রুতিতে বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তাকর্মীদের হামলায় প্রায় ৫০০ জন নিহত হয়। এ সময় দেশব্যাপী আটক করা হয় ২২ হাজার মানুষকে। তবে নিজের এ কঠোর রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে সমালোচনার মুখে পড়লেও ইরানের কট্টরপন্থীদের কাছে রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন ইব্রাহিম রাইসি। 

জানা গেছে, রবিবার আজারবাইজান সীমান্তবর্তী এলাকায় একটি বাঁধ উদ্বোধন করতে যান ইরানি প্রেসিডেন্ট। সেখানে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভও ছিলেন। সেখান থেকে তিনটি হেলিকপ্টারের বহর নিয়ে পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের রাজধানী তাবরিজে ফিরছিলেন ইব্রাহিম রাইসি ও তার সঙ্গে থাকা অন্য কর্মকর্তারা। পথে পূর্ব আজারবাইজানের জোলফা এলাকার কাছে প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়।

সূত্র : বিবিসি

LEAVE A REPLY