সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়তে থাকে আমাদের বয়স। চাইলেই যেমন সময়কে আটকে ফেলা যায় না, তেমনি বয়সকেও বেঁধে রাখা যায় না, দু’টোই ক্রমাগত বাড়তে থাকে। সুন্দর ও মসৃণ ত্বক সবারই কাম্য। ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সবাইই চায়। কিন্তু প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে বয়স তো বাড়বেই, তাই ত্বকেও বয়সের ছাপ পড়তে থাকবে। বয়সের ছাপ পড়া পুরোপুরি বন্ধ করা না গেলেও চাইলেই এটিকে স্স্নো ডাউন করে ফেলা সম্ভব। ভাবছেন কীভাবে? কিছু অভ্যাস আছে যা প্রতিদিন মেনে চলার মাধ্যমে খুব সহজেই যেমন ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখা সম্ভব, তেমনি শারীরিক সুস্থতাও বজায় রাখা সম্ভব। আজকের ফিচার প্রতিদিনকার সেই অভ্যাসগুলো সম্পর্কে যা মেনে চললে সহজেই ত্বকের তারুণ্য বজায় রাখা সম্ভব হবে।
অনেকেই মনে করেন, বয়সের ছাপ দূর করতে শুধু কিছু প্রোডাক্টই পারে। আসলে বিষয়টি সেরকম নয়। ত্বকের যত্ন নেওয়া অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, এর পাশাপাশি কিছু অভ্যাস তৈরি করাও জরুরি। চলুন জেনে নেওয়া যাক সে অভ্যাসগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত।
১. বিশুদ্ধ পানি পান করা
ত্বক ও শরীর সুস্থ-সুন্দর রাখতে পানির বিকল্প কিছুই নেই। তবে পান করার পানি অবশ্যই হতে হবে বিশুদ্ধ। অনেকেরই একটি ভুল ধারণা হচ্ছে যত বেশি পানি পান করা যায় ততই নাকি ভালো, কিন্তু এটি মোটেও সঠিক নয়। প্রত্যেকেরই উচিত দেহের চাহিদা অনুযায়ী পরিমিত পানি পান করা। মনে রাখতে হবে, কম পানি পান করা যেমন ত্বক ও শরীর উভয়ের জন্য খারাপ, তেমনি অতিরিক্ত পানি পান করাও স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ। চেষ্টা করুন প্রতিদিন অন্তত দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করার। পানি ত্বকের হাইড্রেশন ধরে রাখে এবং খাদ্য হজমে সাহায্য করে। যতক্ষণ দেহে পানির ঘাটতি না থাকে, তখন ত্বকে সহজে বলিরেখা পড়তে পারে না।
২. প্রতিদিন অন্তত একটি হলেও ফল খাওয়া
আমরা সবাই জানি, ফলমূলে থাকা বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও নিউট্রিয়েন্ট আমাদের শরীরের জন্য কতটা জরুরি। বিভিন্ন ধরনের ফল ত্বকের কোলাজেন বৃদ্ধি করে ত্বকের তারুণ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই অন্ততপক্ষে একটি হলেও ফল প্রতিদিন খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। যে কোনো ধরনের ফলই আপনি খেতে পারেন, মৌসুমি ফল থেকে শুরু করে কলা, সফেদা, পেঁপে ইত্যাদি। ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে ফল খাওয়ার অভ্যাস শুরু করুন, কিছুদিন পর পার্থক্য নিজেই বুঝতে পারবেন।
৩. প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় শাকসবজি রাখা
শাকসবজি যে আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বলে শেষ করা যাবে না। এতে আছে ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার, উদ্ভিজ্জ প্রোটিন ইত্যাদি। প্রতিদিন তাই বেশি বেশি শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রতিদিন শাকসবজি খেলে শরীর সুস্থ থাকার পাশাপাশি ধীরে ধীরে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং ত্বক আগের চাইতে তরুণ দেখাতে শুরু করে। তাই বেশি বেশি সবজি গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৪. চিনিযুক্ত ও কার্বোনেটেড সফট ড্রিংকস এড়িয়ে চলা
অতিরিক্ত চিনিযুক্ত জুস, যেমন: ফলের জুস বা কার্বোনেটেড সফট ড্রিংকস ত্বক ও শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার ত্বকের কোলাজেন ভেঙে ফেলে। এর বদলে বাসায় তৈরি অল্প চিনিযুক্ত মিল্কশেক, কফি, আইসড টি, ইয়োগার্ট শেক খেতে পারেন।
৫. বাইরের অতিরিক্ত তেল, মশলাযুক্ত ও ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলা
বাইরের খাবার একে তো হাইজেনিক বা স্বাস্থ্যসম্মত নয়, তার ওপর এসব প্রসেসড খাবারে থাকে অতিরিক্ত মশলা, লবণ, চিনি, তেল ইত্যাদি। বাইরের খাবার খাওয়ার অতিরিক্ত প্রবণতা একদিকে যেমন ওজন বাড়ায়, অপরদিকে এসিডিটি তৈরি করে এবং ত্বকের স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে নষ্ট করে ফেলে। তাই বাহিরের খাবার গ্রহণের অভ্যাস ধীরে ধীরে কমিয়ে ফেলুন। একই সঙ্গে ভাজাপোড়া খাবার ও প্যাকেটজাত খাবার খাওয়ার পরিমাণও কমিয়ে আনুন। সব সময় বাড়িতে বানানো খাবার খান। চেষ্টা করুন ব্যালেন্সড ডায়েট মেনটেইন করার।
৬. প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণে বাদাম খাওয়া
চেষ্টা করুন প্রতিদিন যে কোনো ধরনের বাদাম খাওয়ার। একমুঠো চিনা বাদাম অথবা কয়েকটি কাঠবাদাম, কাজুবাদাম ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। বাদামে থাকে ভিটামিন ই, অ্যাসেনশিয়াল ফ্যাট ও অয়েল। বাদাম ত্বক মসৃণ করে এবং ত্বক টানটান রাখতে সাহায্য করে, যাতে করে ত্বকের তারুণ্য দীর্ঘদিন ধরে রাখা সম্ভব হয়। তাই বাদাম বা বাদামজাতীয় খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৭. লাইফ থেকে স্ট্রেস দূর করা
মানুষের জীবনে স্ট্রেস, জটিলতা, টেনশন থাকবে আর এটাই স্বাভাবিক। চেষ্টা করুন স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমিয়ে হ্যাপি থাকতে। যে মানুষ আপনার জীবনে স্ট্রেস বাড়ায় এবং টক্সিসিটি তৈরি করে, সে মানুষকে এড়িয়ে চলুন। একটি বিষয় মাথায় রাখবেন, অতিরিক্ত টেনশন বা মানসিক চাপ ত্বককে অকালে বুড়িয়ে ফেলে। তাই হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করুন এবং জীবনকে ভালোবাসুন। মানসিক শান্তি বজায় থাকলে ত্বকও সুন্দর থাকবে।
৮. অতিরিক্ত রাত জাগার অভ্যাস থাকলে ধীরে ধীরে কমিয়ে ফেলা
ঘুম শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ঘুমের মাধ্যমে আমাদের শরীর পুনরায় কর্মক্ষম হয়। আমাদের ত্বকের কোষ পুনর্গঠন ছাড়াও অন্যান্য ত্বকের সমস্যাও ঘুমানোর মাধ্যমে ধীরে ধীরে দূর হতে পারে। প্রত্যেকের জন্য ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো খুবই প্রয়োজন। অতিরিক্ত রাত জাগা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। চোখের চারপাশে কালো দাগ, চোখ গর্তে চলে যাওয়া, ত্বকের মলিনতা এ সবকিছুই হয়ে থাকে রাত জেগে থাকার কারণে। তাই ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে রাতে অতিরিক্ত জেগে থাকা কমিয়ে ফেলুন এবং দ্রম্নত ঘুমানোর অভ্যাস তৈরি করুন।
এই অভ্যাসগুলো কিছুদিন মেনে চললেই যে ত্বকে আহামরি পরিবর্তন দেখতে পাবেন, তা কিন্তু নয়, বরং ধৈর্য ধরে আপনাকে অভ্যাসগুলো মেনে চলতে হবে। পাশাপাশি অবশ্যই বেসিক স্কিন কেয়ার জরুরি। স্কিন কেয়ারের বেসিক রুলসগুলো মেনে চলতে হবে। নিয়মিত এসপিএস যুক্ত সানস্ক্রিন ডে টাইমে অ্যাপস্নাই ও রিঅ্যাপস্নাই করতে হবে। তাহলেই আপনারা ত্বকের তারুণ্য দীর্ঘদিন ধরে রাখতে পারবেন।