আইসিসির প্রধান কৌঁসুলিকে হুমকি দিয়েছিলেন মোসাদের সাবেক প্রধান

ইসরাইলের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক প্রধান ইয়োসি কোহেন একাধিক গোপন বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলিকে হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি যেন ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত বাদ দেন, সে জন্য চাপ প্রয়োগের চেষ্টা হিসেবে এ হুমকি দেওয়া হয় বলে গার্ডিয়ানের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।

ফিলিস্তিনের দখলকৃত এলাকাগুলোতে ইসরাইল যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করছে বলে যে অভিযোগ রয়েছে, তার আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আইসিসির সাবেক কৌঁসুলি ফাতাউ বেনসুদা। এটা নিয়ে কয়েক বছর ধরে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন মোসাদের সাবেক প্রধান ইয়োসি কোহেন।

এ বিষয়ে ২০২১ সালে শুরু হওয়া অনুসন্ধান গত সপ্তাহে শেষ হয়। এমন সময়ে এ তথ্য বেরিয়ে আসে, যখন ফাতাউ বেনসুদার উত্তরসূরি করিম খান গাজায় ইসরাইলের চলমান যুদ্ধে যেসব অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, তার জন্য দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আরজি জানান।

হামাসের তিন নেতার পাশাপাশি নেতানিয়াহু ও তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির জন্য আবেদন জানিয়েছেন আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি। এ পদক্ষেপকেই দীর্ঘদিন ধরে ভয় করে আসছিল ইসরাইলের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব।

ইয়োসি কোহেন মোসাদের পরিচালক থাকাকালে আইসিসির কৌঁসুলিদের বিরুদ্ধে কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছিলেন। ইসরাইলের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার তথ্য মতে, দেশের উচ্চ পর্যায় থেকে তার এসব কর্মকাণ্ডের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।

এ বিষয়ে অবগত আরেকটি ইসরাইলি সূত্র জানিয়েছে, মোসাদের লক্ষ্য ছিল ফাতাউ বেনসুদার সঙ্গে সমঝোতা করা বা তাকে এমন একজন হিসেবে তালিকাভুক্ত করা, যিনি ইসরাইলের চাওয়াগুলো পূরণে সহযোগিতা করেন।

সংশ্লিষ্ট তৃতীয় আরেকটি সূত্রের মতে, ইয়োসি কোহেন তখন নেতানিয়াহুর ‘অনানুষ্ঠানিক বার্তাবাহক’ হিসেবে ভূমিকা রাখছিলেন।

সে সময় নেতানিয়াহুর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠজনদের অন্যতম কোহেন রাজনৈতিক ক্ষমতাধর হিসেবে উঠে আসছিলেন। তিনিই আদালতকে দুর্বল করার জন্য দেশটির প্রায় এক দশক ধরে চলা প্রচেষ্টায় মোসাদকে যুক্ত করার বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

চারটি সূত্র নিশ্চিত করে বলেছে, কোহেনের ক্রমাগত হুমকি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেও বেনসুদা আইসিসির কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার কাছে কোহেনের বিরুদ্ধে তাকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টার বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছিলেন।

ওই সূত্রগুলোর মধ্যে তিনজন বিষয়টি সম্পর্কে আইসিসির কাছে বেনসুদার আনুষ্ঠানিক অভিযোগের বিষয়ে জ্ঞাত ছিলেন। তারা বলেন, বেনসুদার ওই সময় বলেছিলেন যে কোহেন তাকে বেশ কয়েকবার ফিলিস্তিন নিয়ে আইসিসির ফৌজদারি তদন্তে এগোতে চাপ দিয়েছেন। আইসিসির কর্মকর্তাদের কাছে দেওয়া ভাষ্য অনুযায়ী, কোহেন তাকে বলেছেন, ‘আপনার আমাদের সাহায্য করা উচিত এবং আমাদেরও আপনাকে সেবা করতে দিন। আপনি এমন কোনো কিছুর মধ্যে জড়াবেন না, যাতে আপনার বা আপনার পরিবারের নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করা লাগতে পারে।’

কোহেনের কার্যক্রম সম্পর্কে এক ব্যক্তি বলেন, কোহেন মূলত বেনসুদাকে ভয় দেখাতে ও প্রভাবিত করার চূড়ান্ত প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে জঘন্য কৌশল প্রয়োগ করেছিলেন কিন্তু তা ব্যর্থ হয়েছিল। তারা কোহেনের এই আচরণকে ‘নিপীড়নের’ সঙ্গে তুলনা করেন। 

যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান ইসরাইলি ম্যাগাজিন প্লাস ৯৭২ ও হিব্রু ভাষার গণমাধ্যম লোকাল কলের সঙ্গে মিলে কোহেনের এই কার্যক্রমের বিষয়টি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে তুলে এনেছে। এটা তারই অংশ। এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ইসরাইলের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এক দশকের বেশি সময় ধরে আইসিসির বিরুদ্ধে গোপনে ‘যুদ্ধ’ করে যাচ্ছে।

LEAVE A REPLY