রাফাহর রাস্তায় বের হলেই গুলি

ইসরাইলের লাগাতার হামলায় ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে গাজার দক্ষিণের শহর রাফাহ। চলতি মাসের শুরু থেকেই এ শহরটিতে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে আসছে ইসরাইল। 

জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে ‘নিরাপদ স্থান’ হিসাবে চিহ্নিত আশ্রয়শিবিরগুলোও। কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না তারা। হামলা চালাতে চালাতে রাফাহর কেন্দ্রেও ঢুকে পড়েছে বর্বর ইসরাইলি বাহিনী। 

ক্ষমতার বড়াই চলছে সেখানেও। রাফাহর রাস্তায় কাউকে দেখলেই গুলি করে হত্যা করছে ইসরাইলি সেনারা। এক প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে এমন তথ্যই জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার ইসরাইলি ট্যাংক প্রথমে রাফাহর প্রাণকেন্দ্রের আল-আওদা মোড় দখলে নেয়। সেখানে মসজিদের কাছে ইসরাইলের ট্যাংক এবং মেশিনগান সজ্জিত সাঁজোয়া যান দেখা গেছে। কাউকে রাস্তায় দেখলেই ইসরাইলি ট্যাংক এবং ড্রোন থেকে গুলিবর্ষণ করা হচ্ছে। 

রাফাহর বাসিন্দা আবদেল খাতিব বলেছেন, মানুষ বর্তমানে তাদের ঘরের মধ্যে রয়েছে। কারণ, রাস্তায় যে কাউকে চলাচল করতে দেখলেই গুলি চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। 

মঙ্গলবার রাফাহ শহরের পশ্চিমে আল-মাওয়াসি এলাকার আশ্রয়শিবিরে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সর্বশেষ এ হামলায় নিহত হয়েছেন ২১ জন। যাদের মধ্যে অন্তত ১৩ জন নারী ও শিশু। হামলায় আহতও হয়েছেন অনেকেই।

এর আগে রোববার রাফাহর তেল আল-সুলতান আশ্রয়শিবিরে ইসরাইলের হামলায় ৪৫ জন নিহত হন। এ ঘটনায় বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় বইছে। তবে কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। 

গাজাজুড়ে ইসরাইলি হামলার আতঙ্কে শহর ছাড়তেও বাধ্য হচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। চলতি মাসের প্রথম থেকেই ইসরাইলের আগ্রাসনে ১০ লাখের মতো ফিলিস্তিনি রাফাহ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। নিহতের সংখ্যাও বেড়েই চলেছে উপত্যকাটিতে। ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরাইলের হামলায় কমপক্ষে ৩৬ হাজার ৯৬ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৮১ হাজার ১৩৬ জন আহত হয়েছেন।

পুরো বিশ্ব ইসরাইলের সমালোচনা করলেও এখনো বর্বর সেনাদের সাফাই গাইছে যুক্তরাষ্ট্র। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে হামলা চালিয়ে ইসরাইল ‘রেডলাইন’ অতিক্রম করেছে বলে মনে করে না যুক্তরাষ্ট্র। 

এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা রাফায় পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসন শুরু হয়নি। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কিরবি। 

যদিও এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, লাখো বেসামরিকের আশ্রয়স্থল রাফায় ইসরাইল পূর্ণমাত্রায় হামলা চালালে ‘রেডলাইন’ অতিক্রম করবে। 

সংবাদ সম্মেলনে কিরবিকে ইসরাইলের রোববার রাফায় চালানো বিমান হামলা ও তাঁবুতে থাকা ৪৫ জন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনির মৃত্যুর বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয়। এর উত্তরে কিরবি বলেন, রোববারের হামলায় নারী, শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের মৃত্যুর খবর ‘হৃদয়বিদারক’ এবং ‘ভয়াবহ’। 

এরপর কিরবি স্বীকার করেন, ইসরাইল ঘটনার তদন্ত করছে। এছাড়াও রাফায় হামলার পর এ নিয়ে কথা বলার কোনো নীতি পরিবর্তন হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে জোর দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখনো বিশ্বাস করি না যে রাফায় বড় ধরনের স্থল অভিযানের নিশ্চয়তা আছে। আমরা এই মুহূর্তে তা দেখছি না।’

LEAVE A REPLY