ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ-সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ড নিয়ে একের পর এক বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। হত্যা মিশন বাস্তবায়নকারীদের দুই কোটি টাকা দেওয়ার দায়িত্ব ছিল ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবুর। হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনের প্রতিনিধি হিসাবে হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী চরমপন্থি নেতা শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহকে এ টাকা দেওয়ার কথা ছিল।
শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠকও করেন আওয়ামী লীগের এ নেতা। টাকা দেওয়ার আগেই আনার হত্যার বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ায় আত্মগোপনে চলে যান তারা। শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে বাবুর টাকা লেনদেনের কথোপকথনের একাধিক হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিংয়ের তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এছাড়া শিমুল ভূঁইয়া আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলেছেন। ডিবির তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র আরও জানায়, কলকাতার সঞ্জীবা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে সংসদ-সদস্য আনারকে হত্যা ও লাশ গুমের পর ১৫ মে বাংলাদেশে আসেন শিমুল ভূঁইয়া। এ সময় আক্তারুজ্জামান শাহীন শিমুল ভূঁইয়াকে বলেন, বাবুর কাছ থেকে দুই কোটি টাকা নিতে। ১৬ মে বাবুর সঙ্গে এ বিষয়ে হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলেন শিমুল ভূঁইয়া। ১৭ মে তারা ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের পাশে পরস্পর গাড়ির ভেতর সাক্ষাৎও করেন। সেসময় বাবু বলেন, ২৩ মে দুই কোটি টাকা শিমুল ভূঁইয়াকে দেবেন তিনি। কোনো কারণে ওইদিন দিতে না পারলে ২৬ মে টাকা দেবেন। তবে ২২ মে এমপি আনার হত্যার বিষয়টি প্রকাশ পেলে তারা আত্মগোপনে চলে যান।
এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা বাবু বুধবার ঝিনাইদহ সদর থানায় তার যে তিনটি ফোন হারানোর জিডি করেছেন, সে ফোনগুলো তিনি নিজেই ধ্বংস করেছেন বলে জানায় ডিবি। এমপি আনার অপহরণ মামলায় ডিবি শনিবার বাবুকে গ্রেফতার করেছে। রোববার তাকে আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালত সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
জানা যায়, ঝিনাইদহ পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক পদেও রয়েছেন বাবু। তিনি ঝিনাইদহ জেলা শহরের ভুটিয়ারগাতি গ্রামের মৃত রায়হান উদ্দিনের ছেলে।
আওয়ামী লীগ নেতা বাবুকে রিমান্ড আবেদনে ডিবির তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, শিমুল ভূঁইয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এমপি আনার হত্যায় বাবুর বিষয়টি উঠে আসে। ১৫ মে কলকাতা থেকে বাংলাদেশে এসে পরদিন বাবুর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করেন। ১৭ মে তারা সাক্ষাৎ করেন।
আলামত উদ্ধারে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) শনিবার বিকালে শিমুল ভূঁইয়ার সাভারের লুটের চরে ভাড়া বাসায় অভিযান চালায়। ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন পায় ডিবি। মোবাইল ফোনের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আনার হত্যার পর ১৬ মে হোয়াটসঅ্যাপে বাবুর সঙ্গে শিমুল ভূঁইয়ার যোগাযোগ ও কথোপকথনের তথ্য রয়েছে। তারা আনারকে অপহরণ এবং পরে হত্যাসংক্রান্ত ছবি, টাকাপয়সা লেনদেন বিষয় নিয়ে গোপন বৈঠক করে। তাদের পরিকল্পনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছেন কি না, সেটা জানতে চাইলে আসামি বাবু ভিন্ন ভিন্ন কথা বলে বিভ্রান্ত করেন।
এদিকে আনার হত্যা মামলার তদন্তকারী পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি পুলিশ দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার একটি খাল থেকে কিছু হাড় উদ্ধার করেছে। এ হাড়গুলো এমপি আনারের বলে ধারণা সিআইডির। সিআইডির এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার কাশিপুর এলাকায় একটি খালের পাড় থেকে রোববার সকালে কিছু হাড় উদ্ধার করা হয়েছে। এমপি আনার হত্যায় গ্রেফতার সিয়ামকে জিজ্ঞাসাবাদের পর সেখানে অভিযান চালানো হয়।
পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির ডিজি এ কে চতুর্বেদী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা কিছু হাড় উদ্ধার করেছি। প্রাথমিকভাবে এটি মানুষের হাড় বলে মনে হচ্ছে। সেগুলোকে ফরেনসিক বিশ্লেষণের জন্য পাঠাচ্ছি। হাড়গুলো পাঁজরের খাঁচা ও বাহুর বলে মনে হচ্ছে। মাথার খুলি এখনো উদ্ধার করা যায়নি।