মধ্য থাইল্যান্ডে একটি এশিয়ান হাতি যমজ সন্তানের জন্ম দিয়েছে, যা একটি বিরল ঘটনা। হাতিটিকে যারা দেখাশোনা করেন তারা এই ঘটনাকে ‘অলৌকিক’ ঘটনা বলে অভিহিত করেছেন। সেভ দ্য এলিফ্যান্টস নামে একটি গবেষণা সংস্থার মতে, মাত্র এক শতাংশ হাতির যমজ সন্তান হয় এবং তা আবার যদি হয় ছেলে ও মেয়ে, তা আরো বিরল। যমজ সন্তানের মধ্যে একটি পুরুষ এবং অন্যটি মাদি হাতি।
৩৬ বছর বয়সী এই মা হাতির নাম চামচুরি। সে যমজ সন্তান প্রসব করবে বলে প্রত্যাশিত ছিল না। গত শুক্রবার প্রথমে সে প্রথম সন্তান (পুরুষ) প্রসব করে। তখন আয়ুথায়া এলিফ্যান্ট প্যালেস এবং রয়্যাল ক্রালের কর্মীরা ভেবেছিলেন একটি সন্তানই প্রসব করেছে।
কিন্তু প্রসবের পর বিকট শব্দ শুনতে পেয়ে বুঝতে পারেন চামচুরি আরো একটি মাদি সন্তানের জন্ম দিয়েছে।
দ্বিতীয় সন্তান জন্ম দেওয়া পর মা হাতিটি চমকে যায় এবং সদ্য জন্ম নেওয়া সন্তানের ওপর যাতে পা ফেলে না দেয় তাই হাতিটির মাহুতরা তাকে বাধা দিতে গেলে একজন আহত হন। এর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়েছে।
হাতিটির মাহুত ৩১ বছর বয়সী চারিন সোমওয়াং মা হাতিকে আটকাতে গিয়ে তার পা ভেঙে ফেলেন।
তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমি এতোটাই খুশি হয়েছি যে পা ভাঙার ব্যথা অনুভব করতে পারিনি তখন।’ তিনি জানান, যখন তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল তখনই তিনি আঘাতের পরিমাণ বুঝতে পারেন।
চারিন সোমওয়াং আরো বলেন, ‘এটা স্বাভাবিক যে নতুন মা সবসময় বাচ্চাকে লাথি বা ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করবে… আমি ভয় পেয়েছিলাম যে সে তার সন্তানের ক্ষতি করতে পারে। তাই আমি এগিয়ে গিয়ে মা হাতিকে আটকানোর চেষ্টা করেছিলাম।’ সোমওয়াং ১৫ বছর ধরে পার্কে কাজ করছেন।
পশুচিকিত্সক লার্ডথংটার মীপান বিবিসিকে বলেন, ‘দ্বিতীয় সন্তানটিকে মা হাতি থেকে দূরে সরিয়ে আনার পর সে উঠে দাঁড়ায়। আমরা সবাই তখন উল্লাসে ফেটে পরেছিলাম, কারণ এটি একটি অলৌকিক ঘটনা।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সবসময় যমজ হাতি দেখতে চেয়েছিলাম কিন্তু সবাই এই ঘটনা দেখার সৌভাগ্য হয় না। কারণ এটি খুব সচরাচর ঘটে না।’ নিজের সম্পর্কে তিনি জানান, ‘তিনিও হাতি পার্কে বড় হয়েছেন এবং নিজেও যমজ সন্তানের মা।’ থাইল্যান্ডে হাতি পবিত্র বলে বিবেচিত। সেখানে বেশিরভাগ জনসংখ্যা বৌদ্ধ। হাতি দেশটির একটি জাতীয় প্রতীকও বটে।
জন্মের পর থেকে আয়ুথায়া এলিফ্যান্ট প্যালেস এবং রয়্যাল ক্রাল সোশ্যাল মিডিয়ায় যমজ হাতিগুলোর লাইভ করছে। শিশুসহ পার্কের দর্শনার্থীদেরও যমজ সন্তানদের দেখতে দেওয়া হয়, তবে তার আগে পা এবং হাত জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। নার্সারির কাছে একটি চিহ্ন দিয়ে লেখা, ‘দয়া করে হাতির বাচ্চাদের স্পর্শ করবেন না’।
থাই রীতি অনুযায়ী জন্মের সাত দিন পর তাদের নামকরণ করা হবে। ৫৫ কেজি (১২১ পাউন্ড) মাদী বাছুরটি স্বাভাবিকের চেয়ে সামান্য ছোট আর তার ভাইয়ের ওজন ৬০ কেজি। দর্শনার্থীরা যমজ বাচ্চা হাতিদের নামের অপেক্ষায় আছে এবং তাদের দেখতে আয়ুথায়ার পার্কে ভিড় জমাচ্ছেন। পার্কটি দাবি করেছে, হাতিগুলোকে দিয়ে রাস্তায় ভিক্ষা করানো হতো। সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়েছিল।
সূত্র : বিবিসি