প্রধানমন্ত্রী ভারত যাচ্ছেন আজ : সম্পর্ক আরো জোরদারের লক্ষ্য

ফাইল ছবি

মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে আজ শুক্রবার আবারও ভারত সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ৮ থেকে ১০ জুন শেখ হাসিনার ভারত সফরের উদ্দেশ্য ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানে যোগদান। আর এবারের সফরটি পুরোপুরি দ্বিপক্ষীয়; উদ্দেশ্য—সম্পর্ক আরো জোরদার করার ভবিষ্যৎ রূপরেখা নির্ধারণ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আগামীকাল শনিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

  এই সফরে দুই দেশের মধ্যে ১৪টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তুতি চলছে। শেষ পর্যন্ত কয়টি স্বাক্ষরিত হবে তা গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। শেষ পর্যন্ত সাত থেকে ১০টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। এগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি পুরনো চুক্তি বা সমঝোতার নবায়ন।

গত জানুয়ারি মাসে টানা চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর এটিই তাঁর বিদেশে প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ ও ২২ জুন ভারতে রাষ্ট্রীয় সফর করবেন। ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ভারতে সরকার গঠনের পর দেশটিতে কোনো বিদেশি নেতার এটিই প্রথম দ্বিপক্ষীয় রাষ্ট্রীয় সফর। এই সফরে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ছাড়াও শেখ হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরো জানায়, গত ৯ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া আন্তর্জাতিক নেতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং জানায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট আজ দুপুর ২টার দিকে শেখ হাসিনা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যাবে। ফ্লাইটটি বিকেল ৪টায় (দিল্লি সময়) নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। ভারত সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাবেন।

আজ সন্ধ্যায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর হোটেলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

এবারের সফরটি দ্বিপক্ষীয় ও রাষ্ট্রীয় হওয়ায় নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ মর্যাদা পাবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে আগামীকাল শনিবার সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে ফোরকোর্টে লাল গালিচা বিছানো হবে। এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে অভ্যর্থনা জানাবেন। সেখানে দুই দেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘গার্ড অব অনার’ পরিদর্শন করবেন। ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ছবিও তোলা হবে এই সংবর্ধনা পর্বে।

এরপর প্রধানমন্ত্রী রাজঘাটে ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। সেখানে তিনি পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করবেন।

আগামীকাল নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র প্রথমে একান্ত বৈঠক করবেন। এরপর দুই শীর্ষ নেতার নেতৃত্বে বৈঠকে বসবে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিনিধিদল।

বৈঠক শেষে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে দুই দেশের প্রতিনিধিরা কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করবেন। দুই নেতাও গণমাধ্যমের সামনে বক্তব্য দেবেন। এরপর তাঁরা হায়দরাবাদ হাউসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত ভোজসভায় যোগ দেবেন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর ভারত নাকি চীনে হবে, তা নিয়ে বিশেষ আগ্রহ ছিল বিভিন্ন মহলে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ গত মে মাসে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে ভারতে যাবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এ মাসের প্রথমার্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের পরপরই দ্বিপক্ষীয় সফর চূড়ান্ত হয়। ভারত তার ‘প্রতিবেশীই প্রথম’ নীতিতে বাংলাদেশকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দুটি সফরে। এ ছাড়া আগামী মাসের প্রথমার্ধে চীন সফরের কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। চীনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের মধ্যেও ভারতের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ককে যে বাংলাদেশ গুরুত্ব দেয় তারই প্রতিফলন ঘটছে এবারের সফরে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, এই সফরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তি বিষয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত এক দশকে শক্তিশালী আঞ্চলিক অংশীদারির অংশ হিসেবে বেশ কিছু আন্তঃসীমান্ত উদ্যোগ চালু করা হয়েছে। আগামী দিনে আরো নতুন কিছু উদ্যোগ যোগ করার চেষ্টা চলছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অমীমাংসিত ইস্যুগুলো যেমন সীমান্ত হত্যা, পানি বণ্টন সমস্যা বা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অশুল্ক বাধার মতো বিষয় কয়েক বছর ধরে আলোচনা চলছে। আগামীকালের বৈঠকেও এ বিষয়ে আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মহাকাশ, প্রতিরক্ষা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে সহযোগিতা কানেক্টিভিটি বা যোগাযোগ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা সংকটের মতো আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হতে পারে। বাংলাদেশ, ভারত—দুই দেশই এ সফরকে গুরুত্ব দিচ্ছে। বিশেষ করে, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের কারণে এ দেশের দিকে ভারতসহ বড় শক্তিগুলোর দৃষ্টি রয়েছে।

সফরসূচি অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল শনিবার বিকালে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখারের সঙ্গে তাঁর দপ্তরে সাক্ষাৎ করবেন। এরপর শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সাক্ষাৎ শেষে সন্ধ্যা ৬টায় (দিল্লি সময়) প্রধানমন্ত্রী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন। আগামীকাল রাত ৯টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর ঢাকায় ফেরার কথা।

LEAVE A REPLY