দুই দশক আগে বড় পর্দায় অভিনয় শুরু বাঙালি অভিনেত্রী রিমি সেন। অভিনয়জগতে যাত্রা শুরুর আগে শুভমিত্রা সেন থেকে নাম পরিবর্তন করেন। অক্ষয় কুমার, অমিতাভ বচ্চন, সালমান খান, অভিষেক বচ্চন, অজয় দেবগানের মতো তারকাদের সঙ্গে অভিনয়ও করেন। কিন্তু যত দ্রুততার সঙ্গে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন, ঠিক ততখানি দ্রুততার সঙ্গেই বলিপাড়া থেকে হারিয়ে গেছেন তিনি।
তবে এই হারিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে সিনেমায় ভালো কোনো চরিত্র না পাওয়ার কথা উল্লেখ করেন রিমি সেন। ১৯৮১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর কলকাতার বাঙালি পরিবারে জন্ম রিমির। ছোটবেলা থেকে অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন ছিল রিমির। কলকাতা থেকে স্কুল এবং কলেজের পড়াশোনা শেষ করে বাণিজ্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন রিমি।
পড়াশোনা শেষ করার পর ২০০০ সালে অপর্ণা সেনের পরিচালনায় ‘পারমিতার একদিন’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। যদিও পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান রিমি। এরপর একাধিক বাংলা ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি বাংলা বিজ্ঞাপনেও অভিনয় করতে দেখা যায় রিমিকে। আমির খানের মতো বলি তারকার সঙ্গেও বিজ্ঞাপনে অভিনয় করেন তিনি। খুব কম সময়ের মধ্যে বিজ্ঞাপনের জগতে পরিচিতি লাভ করেন রিমি।
২০০১-’০২ সালে দু’টি তেলুগু ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় রিমিকে। ২০০৩ সালে বলিপাড়ায় আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। অক্ষয় খান্না, পরেশ রাওয়াল এবং আফতাব শিবদাসানির সঙ্গে ‘হাঙ্গামা’ ছবিতে অভিনয় করেন রিমি। ‘হাঙ্গামা’ মুক্তির পর নবাগতা অভিনেত্রী হিসাবে রাতারাতি প্রচারে আসেন রিমি। ২০০৩ সালে অমিতাভ বচ্চন এবং হেমা মালিনীর ছবি ‘বাগবান’-এ পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি।
২০০৪ সালে ‘ধুম’ ছবিতে অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে জুটি বেঁধে বলিপাড়ায় জনপ্রিয় হয়ে যান রিমি। এর পর একের পর এক হিন্দি ছবির প্রস্তাব পেতে থাকেন তিনি। ‘গরম মশলা’, ‘কিঁউ কি’, ‘দিওয়ানা হুয়ে পাগল’, ‘ফির হেরা ফেরি’, ‘গোলমাল: ফান আনলিমিটেড’, ‘ধুম ২’, ‘হ্যাটট্রিক’, ‘জনি গদ্দার’, ‘দে তালি’, ‘থ্যাঙ্ক ইউ’-এর মতো একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেন রিমি। এক দশক জুড়ে বলিপাড়ায় থাকলেও হঠাৎ করে ছবির সংখ্যা কমে যেতে থাকে তার ক্যারিয়ারের ঝুলিতে।
২০১৫ সালে ছোট পর্দায় জনপ্রিয় রিয়্যালিটি শো ‘বিগ বস্’-এ প্রতিযোগী হিসাবে অংশগ্রহণ করেন রিমি। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পর সেই শো থেকে বাদ প়ড়েন। কানাঘুষো শোনা যায়, প্রতিযোগিতায় তেমন সক্রিয় ছিলেন না বলে শো থেকে বাদ দেওয়া হয় তাকে।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ‘বিগ বস্’-এর নবম পর্বে অংশগ্রহণ করে দু’কোটি টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন রিমি। ২০১১-তে পরিচালক তিগমাংশু ধুলিয়ার ‘শাগির্দ’ ছবিতে শেষ বার বড় পর্দায় দেখা গিয়েছিল রিমিকে। পাঁচ বছরের বিরতির পর আবার হাজির হন তিনি। তবে এ বার আর ক্যামেরার সামনে নন, ক্যামেরার পিছনে। অভিনয় থেকে সরে যাওয়ার পর জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ‘বুধিয়া সিংহ’ নামে একটি ছবির প্রযোজনা করেন রিমি।
অভিনয় থেকে কেন দূরে সরে গিয়েছেন সে প্রশ্ন করা হলে রিমি জানান, তাকে বাড়ির আসবাবের মতো ছবিতে ব্যবহার করা হতো। তাই আর অভিনয় করতে চাননি তিনি।
হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রিমি বলেন, ‘কমেডি ঘরানার ছবিতে অভিনয় করে করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। আমার জন্য বিশেষ কোনো চরিত্র ছিল না। ঘরের আসবাবের মতো পড়ে থাকতাম। ‘হাঙ্গামা’ এবং ‘জনি গদ্দার’-এর মতো ছবিতে অন্য রকম চরিত্র পেয়েছিলাম। আমি ওই ধরনের চরিত্রেই অভিনয় করতে চাইতাম।’
বলিপাড়ার প্রথম সারির তারকাদের সঙ্গে রিমি অভিনয় করেছেন। কিন্তু এখন কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না তিনি। অভিনেত্রীর কথায়, ‘আমি কারও কাছে সাহায্য চাইতে পারি না। সবাই তো নিজের সুবিধাটাই দেখবেন। ষেচে পড়ে কেউই অন্য কাউকে সাহায্য করতে চান না। যত ক্ষণ না তুমি অন্য কারও হাতে-পায়ে পড়ছ, তত ক্ষণ কেউ তোমাকে সাহায্য করবে না। আমি এগুলো করতে পারি না।’
রিমি বলেন, ‘অভিনয়দক্ষতা তো অনেক পরে আসে। তুমি লোকজনের সঙ্গে কতটা মিশতে পারছ, সেটাই আসল। না হলে কিছুই হবে না। ঘরের এক কোণে পড়ে থাকতে হবে। আমি পিআর করতে পারতাম না। নিজেকে বিক্রি করতে পারতাম না আমি।’