প্রাথমিক অনুসন্ধান : বেনজীরের অবৈধ সম্পদের তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে দুদক

বেনজীর আহমেদ

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রাথমিক অনুসন্ধানে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই সব নথি পর্যালোচনা শেষে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে শিগগিরই কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করবে দুদকের অনুসন্ধান টিম। বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী এবং দুই মেয়ের সম্পদ বিবরণী দাখিলের সুপারিশ করে অনুসন্ধান প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করা হবে। কমিশনের অনুমতি পেলে তাঁদের বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ করা হবে।

দুদকের নির্ভরযোগ্য সূত্র কালের কণ্ঠকে এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তৃতীয় দফায় বেনজীর এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের জব্দকৃত সম্পদের ওপরও রিসিভার নিয়োগের আদেশ দিয়েছেন।

একাধিক মামলার প্রস্তুতি

সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ পাঠানো হলে এরপর ২১ কর্মদিবস এবং পরে সময়ের আবেদন করলে আরো ১৫ কর্মদিবস সময় পাবেন বেনজীর আহমেদ। তবে বিদেশে অবস্থান করায় বেনজীর যেমন দুদকের নোটিশ গ্রহণ করতে পারবেন না, তেমনি দুদকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতেও ব্যর্থ হবেন বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা।

সম্পদ বিবরণী দাখিল না করলে তিনটি মামলা করা হবে। দুদকে সম্পদ বিবরণী দাখিল না করার জন্য হবে নন-সাবমিশন মামলা, আর বেনজীর এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের যেসব অবৈধ সম্পদের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে, তার ভিত্তিতে আরেকটি অবৈধ (জ্ঞাত আয়বহির্ভূত) সম্পদ অর্জনের মামলা হবে। এ ছাড়া তৃতীয় মামলাটি করা হবে বেনজীরের নজিরবিহীন পাসপোর্ট জালিয়াতির অভিযোগে। দুদক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

দুদক আইনে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় ১০ বছর এবং নন-সাবমিশন মামলায় তিন বছরের সাজার বিধান রয়েছে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

বেনজীর পর্তুগালে, পরিবার দুবাইয়ে

গত ৩১ মার্চ ও ২ এপ্রিল কালের কণ্ঠে সংবাদ প্রকাশের পরপরই স্ত্রীর চিকিৎসার নামে সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমায় বেনজীর এবং তাঁর পরিবার। সেখান থেকে তারা ‘মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম’ প্রকল্পের অধীনে বেনজীরের কেনা মালয়েশিয়ার বাড়িতে গিয়ে ওঠে। এরপর মালয়েশিয়া থেকে বেনজীর সপরিবারে চলে যান দুবাই। সেখানে পরিবারের সদস্যদের রেখে তিনি পর্তুগালে পাড়ি জমান বলে জানা গেছে।

দুদকের ডাকে সাড়া দেয়নি বেনজীর পরিবার

গত ২৮ মে বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী জীশান মীর্জাসহ তাঁদের দুই মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে চিঠি দেয় দুদক। চিঠিতে ৬ জুন বেনজীর আহমেদ এবং ৯ জুন তাঁর স্ত্রী জীশান মীর্জা, মেয়ে ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির থাকতে বলা হয়। আরেক মেয়ে জাহরা বিনতে বেনজীর নাবালিকা হওয়ায় তাকে তলব করা হয়নি। তবে প্রথম দফায় দুদকের ডাকে হাজির হননি বেনজীর আহমেদ। দ্বিতীয় দফায় ২৩ জুন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে ফের দুদকে তলব করে চিঠি দেওয়া হয়। তাঁর স্ত্রী ও কন্যাদের ২৪ জুন তলব করা হয়। দ্বিতীয় দফায়ও বেনজীর এবং তাঁর স্ত্রী-সন্তানরা দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হননি।

বেনজীরের সম্পদ জব্দে হ্যাটট্রিক

দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ পর্যন্ত তিন দফায় বেনজীর এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও ফ্রিজের আদেশ দিয়েছেন আদালত। সর্বশেষ তৃতীয় দফায় গত ১২ জুন বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের নামে থাকা আরো আটটি ফ্ল্যাট এবং ২৫ একর (৬০.৫ কাঠা) ২৭ কাঠা জমি জব্দের (ক্রোক) আদেশ দিয়েছেন আদালত। এই ফ্ল্যাটগুলোর অবস্থান ঢাকার বাড্ডা ও আদাবরে। জমি নারায়ণগঞ্জ, বান্দরবান ও উত্তরায়। একই সঙ্গে বেনজীর এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা বেসরকারি সিটিজেন টেলিভিশন ও টাইগার ক্রাফট অ্যাপারেলস লিমিটেডের শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশও দিয়েছেন আদালত।

নজিরবিহীন পাসপোর্ট জালিয়াতি

দুদকের অনুসন্ধানে বেনজীরের পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে পরিচয় গোপন করে সাধারণ পাসপোর্ট নেওয়ার নজিরবিহীন জালিয়াতির তথ্য পাওয়া গেছে। অভিযোগ অনুসন্ধানে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ১১ কর্মকর্তাকে এবং র‌্যাবের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। পুলিশ পরিচয় গোপন করে বেসরকারি চাকরিজীবী পরিচয়ে সাধারণ পাসপোর্ট তৈরি করেন তিনি। কিন্তু নবায়নের সময় ধরা পড়লে তা আটকে দেয় পাসপোর্ট অধিদপ্তর। চিঠি দেওয়া হয় র‌্যাব সদর দপ্তরে। কিন্তু প্রভাব খাটিয়ে সব ম্যানেজ করেন বেনজীর।

LEAVE A REPLY