গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন ও গণহত্যার ‘আসল কাহিনি’ ফাঁস!

অধিকৃত গাজায় সম্প্রতি ইসরাইলি হামলায় ৫ ফিলিস্তিনি সাংবাদিকসহ ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। এতে গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৮ হাজার ১০০ ছাড়িয়ে গেছে। বিপরীতে হামাসের কাসসাম ব্রিগেডের হামলায় ১০ ইসরাইলি সেনা নিহত হয়।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী, গত ৮ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ২৭৪ দিনে ইসরাইলি আগ্রাসনে ৩৮ হাজার ১৫৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৮৭ হাজার ৮২৮ জন আহত হয়েছেন।

এছাড়া গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিখোঁজ ব্যক্তিদের সংখ্যাও ১০ হাজারেরও বেশি। ইউরো-মেডিটারেনিয়ান হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, ১০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি ইসরাইলি বোমাবর্ষণে ধ্বংস হওয়া বাড়ি এবং ভবনগুলোর ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে। 

এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লাশগুলো তোলার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই। দখলদার ইসরাইলি সেনারা গাজায় ভারি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। বহু সংখ্যক ফিলিস্তিনি এমন সব কবরে দাফন হয়ে আছেন, যেসব কবরের কোনো চিহ্নও নেই।

এদিকে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ১৫৮ জনে দাঁড়িয়েছে। শনিবার গাজার নুসেইরাত এলাকায় একটি বাড়িতে ইসরাইলি বোমা বর্ষণে ফিলিস্তিনি সাংবাদিক আমজাদ যাজজুউহ ও তার স্ত্রী ওয়াফা আবু দ্বাবআনসহ ১০ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। রোববারও গাজার বিভিন্ন এলাকায় সামরিক অভিযান চালিয়ে আরও ১৬ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইলি বাহিনী।

বিপরীতে শুক্রবার হামাসের ইজ্জাদ্দিন কাসসাম ব্রিগেডের এক হামলায় ১০ ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছেন। সুজাইয়াহ এলাকায় হামাসের ওই অভিযানে ইসরাইলের একটি মিরকাভা ট্যাংকও ধ্বংস হয়েছে।

অন্যদিকে গাজায় ও লেবাননে ইসরাইলি হামলার জবাবে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ কিরিয়াত শামুনাহর ইসরাইলি কমান্ড-সেন্টার লক্ষ্য করে বিপুল সংখ্যক কাতিউষা রকেট নিক্ষেপ করেছে। শালুমি এলাকায় ইসরাইলি সেনাদের একটি সামরিক ভবনও হিজবুল্লাহর রকেট হামলার শিকার হয়েছে।  

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় সংক্রান্ত নতুন প্রস্তাবে রাজি হয়েছে হামাস। প্রথম পর্যায়ের যুদ্ধবিরতির পর ১৬ দিন ধরে গাজায় মানবিক ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ এবং ইসরাইলি সেনাদের পিছু হটার বিষয়কে সুনিশ্চিত করতে হবে বলেও মধ্যস্থতাকারীদের জানিয়ে দিয়েছে গোষ্ঠীটি। 

এর আগে বাইডেনের প্রস্তাবের জবাবে হামাস বলেছিল, শুরুতেই ইসরাইলকে নিশ্চয়তা দিতে হবে যে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ইসরাইল আর যুদ্ধ শুরু করবে না। এ বিষয়ে হামাস অটল ছিল। কিন্তু এখন হামাস বলছে, ছয় সপ্তাহের প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতির পর দ্বিতীয় ধাপে আলোচনার সময় ইসরাইল আবার যুদ্ধ করবে না- এমন নিশ্চয়তা দিতে হবে।  

এক বিবৃতিতে গাজার যুদ্ধ-পরবর্তী যে কোনো সম্ভাব্য পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনি জনগণের ইচ্ছার বিরোধী যে কোনো পদক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে হামাস। 

সেইসঙ্গে বলে দিয়েছে, গাজার পরিচালনার বিষয়ে আরোপিত কোনো নেতৃত্ব বা অভিভাবকত্ব ফিলিস্তিনি জনগণ মেনে নেবে না। কারণ এ ধরনের কোনো কিছু আরোপ করা হবে ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীনতা ও নিজ ভাগ্য নির্ধারণের অধিকারের লঙ্ঘন।

এদিকে গাজার পানি ও জ্বালানি সম্পদ দখলের জন্যই বর্বর ইসরাইল সেখানে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে বলে খবর এসেছে রয়টার্স, আল জাজিরা মিডলইস্ট আই-সহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে। 

গণমাধ্যমগুলো বলছে, গাজার পানি ও জ্বালানি সম্পদ দখলের জন্যই ইসরাইল সেখানকার ভবনগুলো ও অবকাঠামোগুলো ধ্বংস করছে এবং গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। যাতে ফিলিস্তিনিরা গাজা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। আর এভাবেই ইসরাইলিরা পুরো গাজার ওপর দখলদারিত্ব কায়েম করে সেখানকার প্রাকৃতিক সম্পদ লুট করতে চায়।

এদিকে ইসরাইলের একজন সাবেক সংসদ সদস্য বলেছেন, গাজা যুদ্ধ ইসরাইলের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। গাজায় যুদ্ধ বিরতি প্রতিষ্ঠার সময় ঘনিয়ে এসেছে বলেও দাবি করেছেন ওই সংসদ সদস্য। 

ইসরাইল গাজায় তেমন কোনো লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি মন্তব্য করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক ওই ইসরাইলি সংসদ সদস্য বলেছেন, যুদ্ধ-বন্দি বিনিময়ের বিষয়টি নানা ছাড় আদায়ের মাধ্যম ও এমনকি তা যুদ্ধ অবসানেরও মাধ্যম। ইসরাইল নিজেই অন্যদের চেয়ে বেশি মাত্রায় এটা বুঝতে পারছে যে, সময় ইসরাইলের অনুকুলে যাচ্ছে না। সূত্র: মিডলইস্ট মনিটর

LEAVE A REPLY