পাকিস্তানে আইএসআইকে ফোনে আড়ি পাতার অনুমতি, হাইকোর্টে রিট

পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা ‘আইএসআই’ আড়ি পাতার বৈধতা পেয়েছে। দেশটির আইনমন্ত্রী আজম নাজিম তারার বুধবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।  তবে এই অনুমতির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে লাহোর হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছে।

এর আগে, গত ৮ তারিখ পাকিস্তানের তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।

সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘জাতীয় নিরাপত্তা এবং যে কোনো ধরনের সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলা ঠেকাতে পাকিস্তানের সরকার …কর্মকর্তাদের ফোনকল ও ক্ষুদে বার্তা (মেসেজ) ট্র্যাক করার অনুমতি দিয়েছে। সরকার সন্তুষ্ট চিত্তে এই অনুমতি দিয়েছে।’

মাসকুর হুসেইন নামের এক ব্যক্তি আইনজীবী নাদিম সারোয়ারের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে এ অনুমতির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে  একটি রিট পিটিশন দায়ের করেছেন।  ওই ব্যক্তি বলেন, ফোনে আড়ি পাতার ফলে ব্যক্তির নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।

এ ছাড়া উচ্চ প্রযুক্তি সম্পন্ন যোগাযোগ পদ্ধতি ব্যবহার করে টেলিফোনে আড়ি পাতা হলে পরবর্তীতে তার অপব্যবহার করা হবে।

রিট পিটিশনে বলা হয়, সংবিধানের ৪ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে। এছাড়া ৫৪ ধারা অনুযায়ী সরকার চাইলেই কোনো নিয়ম ছাড়া এ ধরনের ক্ষমতা কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার কাছে হস্তান্তর করতে পারে না।  

এদিকে গত মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী আজম নাজিম বলেছেন, ‘অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের ওপর নজরদারিতেই আইনটি সীমাবদ্ধ থাকবে।

এতে জনগণের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন যাতে না হয়, সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করবে।’ তিনি আরো  বলেন, ‘যে কেউ এই আইনের অপব্যবহার করবে, তাকে শাস্তি পেতে হবে।’

এদিকে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সকে (আইএসআই) বাড়তি ক্ষমতা দেওয়ার সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে বিরোধী দল। স্বাধীনতার পর থেকে প্রায় অর্ধেক সময়ই দেশটির ক্ষমতায় ছিল সামরিক বাহিনী। ফলে আইএসআই বাড়তি ক্ষমতা দেওয়ার সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে প্রধান বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ (পিটিআই)।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। 

দলটির জ্যেষ্ঠ ওমর আইয়ুব খান বলেন,  আইএসআই-এর কর্মকর্তারা এই আইন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে নয়, বরং আইনপ্রণেতা ও জনপ্রতিনিধিদের ওপর প্রয়োগ করবেন— এমন আশঙ্কাই বেশি।

পাকিস্তানের সুশীল সমাজ ও সাধরণ নাগরিকদের মধ্যেও নতুন এই আইন নিয়ে আলোচনা এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মানবাধিকার সংস্থা ‘বোলো ভি’র কর্মকর্তা ফারিয়া আজিজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে  লিখেছেন, ‘সংবিধান ও মানবাধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো আইন কীভাবে বৈধ হয়?’

আইএসআই পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় ও প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা। সাবেক ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মির সেনাধ্যক্ষ রবার্ট কৌথেম ১৯৪৮ সালে এই সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে এই সংস্থাটির প্রভাব প্রায় সীমাহীন। এই সংস্থাটি কার্যত পাকিস্তানের সরকার পরিবর্তনের ক্ষমতা রাখে।

পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর গণমাধ্যম শাখা আইএসপিআরের কাছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এসব বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে কোনো সাড়া দেয়নি। 

সূত্র : ডন, রয়টার্স
 

LEAVE A REPLY