এক বছরে ভুট্টার আমদানি কমেছে প্রায় ১৮ লাখ টন

দেশে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য আমদানি করতে হচ্ছে। এতে ব্যয় হচ্ছে বিপুল অঙ্কের অর্থ। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরে প্রধান খাদ্যশস্য হিসেবে গমের আমদানি ছিল বেশি। ওই সময় গম আমদানি করা হয়েছে ৬৬ লাখ ৬২ হাজার টন, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় সাড়ে ১৬ লাখ টন বেশি।

তবে এই সময়ে ভুট্টার আমদানি কমেছে। গত অর্থবছর ভুট্টার আমদানি ছিল তিন লাখ ৮৪ হাজার টন, যা আগের অর্থবছরে ছিল ২১ লাখ ৬৩ হাজার টন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ভুট্টার আমদানি কমেছে প্রায় ১৮ লাখ টন। 

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চাল বাদে প্রায় ৮৭ লাখ ১২ হাজার টন ১১টি খাদ্য ও কৃষি পণ্যের আমদানি হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে যা ছিল ৯১ লাখ ৫৫ হাজার টন।

গত অর্থবছরে প্রধান খাদ্যশস্য হিসেবে গমের আমদানি সবচেয়ে বেশি হয়েছে। গম আমদানি করা হয়েছে ৬৬ লাখ ৬২ হাজার টন, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় সাড়ে ১৬ লাখ টন বেশি।

এ ছাড়া গম ও ভুট্টার পাশাপাশি গত অর্থবছরে মসুর ডাল আমদানি ছিল প্রায় পাঁচ লাখ ২৯ হাজার টন। এ ছাড়া ছোলা এক লাখ ৮০ হাজার টন, মুগ ডাল প্রায় সাত হাজার টন, পেঁয়াজ পাঁচ লাখ ৯৭ হাজার টন এবং রসুন আমদানি করা হয় এক লাখ টন।

অন্যান্য পণ্যের মধ্যে আদা ৮৯ হাজার টন, হলুদ ৩০ হাজার টন, জিরা ৩৩ হাজার টন এবং আলু আমদানি করা হয় ৯৭ হাজার টন। যদিও গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলু আমদানি করা হয়নি।

গত কয়েক বছরের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত কয়েক বছরের ব্যবধানে এসব খাদ্যপণ্যের আমদানির পরিমাণ কমে আসছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট আমদানির পরিমাণ ছিল ৯২ লাখ ৩৩ হাজার টন, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ৯১ লাখ ৫৫ হাজার টন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে আটটি পণ্যের আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৮০ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা।

এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে চাল, গম, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, মসলাজাতীয় পণ্য, তেলবীজ, ভোজ্য তেল, ডালজাতীয় পণ্য ও চিনি। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে এসব পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৮৭ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা। ফলে এক অর্থবছরের ব্যবধানে পণ্য অমদানি ব্যয় বেড়েছে প্রায় ছয় হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এসব পণ্যের গত অর্থবছরের চূড়ান্ত তথ্য এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তবে ১০ মাসের আমদানি ব্যয়ের প্রাথমিক হিসাবে দেখা গেছে, এই আট পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৭১ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা।

তবে ফসল উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনার পাশাপাশি উৎপাদন বাড়ানোয় প্রণোদনা হিসেবে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে সরকার। কৃষি উপকরণ, বিশেষ করে সার, ডিজেল, বিদ্যুৎ ইত্যাদি খাতে আর্থিক সহযোগিতা বাড়ানো হয়েছে। এই সময়ে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার বেশি ভর্তুকি সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ভর্তুকির বেশির ভাগ যাচ্ছে সারে।

এ বিষয়ে কৃষি অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকসের পরিচালক ড. জাহাঙ্গীর আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জনসংখ্যা বা মানুষের খাদ্যপণ্যের চাহিদা যে হারে বাড়ছে, সেই হারে কৃষি ও খাদ্যপণ্যের উৎপাদন বাড়ছে না। এ জন্য অমদানিনির্ভর হতে হচ্ছে। সব পণ্য আমরা উৎপাদন করতে পারব না, কিন্তু যেসব পণ্যের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব, সেটি করতে হবে। তবে এখানে কয়েকটি বাধা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া। এতে কৃষক অনেক সময় নিরুৎসাহ হয়। ফলে দেশীয়ভাবে উৎপাদনে সক্ষম থাকলেও হয়তো সেই সুযোগ কাজে লাগানো যাচ্ছে না। তাই আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদনে জোর দিতে হবে। এ জন্য কৃষকের সহায়তা আরো বাড়াতে হবে।’

কৃষি ও খাদ্য পণ্য আমদানিনির্ভরতা বৃদ্ধির কারণে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপও বেড়েছে—জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দানাদার খাদ্যশস্য ছাড়াও অন্যান্য শস্যের উৎপাদন বাড়িয়ে শস্যের বহুমুখীকরণ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে। বোরো ও আমন মৌসুমে আরো উচ্চ ফলনশীল জাতের ব্যবহার বাড়িয়ে সময়কালটা কমিয়ে আনা হচ্ছে। এতে কয়েক লাখ হেক্টর জমি বেরিয়ে আসবে। তখন এসব জমিতে তেল ও ডাল জাতীয় শস্য আবাদ করা সম্ভব হবে। আবহাওয়ার বিষয় থাকায় গম উৎপাদন সেই হারে বাড়ানো সম্ভব হবে না। তবে অন্যান্য শস্য উৎপাদন বাড়াতে গবেষণায় জোর দেওয়া, কৃষকের উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া এবং কৃষিপণ্যের বিপণন ব্যবস্থায় দুর্বলতা কাটাতে হবে।

LEAVE A REPLY