শিক্ষার্থীদের হামলার প্রতিবাদে জাতীয় ছাত্রসমাজের তীব্র নিন্দা

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে জাতীয় ছাত্রসমাজের সভাপতি মো. আল-মামুন বলেছেন, ‘সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে সারা দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীরা গত ৪ জুলাই হতে আন্দোলন করছেন। ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও রেলপথে শান্তিপূর্ণভাবে এবং কোনো রকম সহিংসতা ছাড়াই তারা অবরোধ করছেন। আমরা জাতীয় ছাত্রসমাজ সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন ও গণমানুষের দাবিকে সমর্থন জানিয়েছি।’

মো. আল-মামুন বলেন, ‘আন্দোলনের শুরুর দিকে ছাত্রলীগও কোটা সংস্কারের পক্ষে নমনীয়  ছিল।

পরে সরকারের বিভিন্ন মহলের বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে তাদের বক্তব্যও পাল্টাতে থাকে। কিন্তু গত দুই দিন ১৫-১৬ জুলাই পরিস্থিতি খুব দ্রুত পাল্টে যেতে থাকে। এর পরই ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে অস্ত্রের মহড়া দিতে শুরু করে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। তাদের হামলার এসব ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত।

ছাত্রলীগের নৃশংস এই হামলা অতীতের যেকোনো হামলাকে হার মানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগ হয়েছিল বাইরে থেকে আসা বহিরাগত সন্ত্রাসী, তাদের পিস্তল, হকিস্টিক, লাঠি, রড, লোহার পাইপসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর আক্রমণ করে। যা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ পায়।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গতকাল ১৬ জুলাই।

সরকারের লেলিয়ে দেওয়া সন্ত্রাসী ও কিছু মদদপুষ্ট পুলিশ সদস্যের গুলিতে ছয়জন নিহত হন। শত শত শিক্ষার্থী আহত হয়ে সংকটাপূর্ণ অবস্থায় রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের ওপর কাপুরুষোচিত ও ন্যক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাই। নিহতদের বিদেহী আত্মার শান্তি ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। একই সঙ্গে যারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের হত্যাকাণ্ডে জড়িত তাদের দ্রুত খুঁজে বের করে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করতে হবে।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ইতিমধ্যে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের বীর মুক্তিসেনা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।’

মুক্তিযোদ্ধারা জাতির সূর্যসন্তান উল্লেখ করে আল-মামুন বলেন, ‘তারা সব কিছুর ঊর্ধ্বে। কিন্তু বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা কোটার ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ- এই সংখ্যাটা অনেক বেশি। মুক্তিযোদ্ধারা অবশ্যই সুবিধা পাবেন, তাদের সন্তান কিংবা যারা তাদের ওপর সরাসরি নির্ভরশীল তারা সুবিধা পাবেন। কিন্তু নাতি-নাতনি পর্যন্ত ৩০ শতাংশ সুবিধা পাবেন- এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করে শিক্ষার্থীরা। মুক্তিযোদ্ধারা সরকারি চাকরিতে ঢোকার বয়সসীমা পেরিয়ে গেছেন, তাদের সন্তানরাও চাকরির বয়স পেরিয়ে গেছেন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। স্বাধীনতার এত বছর পরে এসে এই কোটা ৫ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো বিবেচনায় নিয়ে অপ্রয়োজনীয় কোটা সুবিধা বাতিল করে মেধা বিকাশের সুযোগ উন্মোচিত করে কোটাব্যবস্থার সংস্কার করা উচিত। শুধু পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সমতায় আনার জন্য বিশেষ বিবেচনা রাখতে হবে।’

সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম খান বলেন, ‘সবুজের বুকে লাল বৃত্ত খচিত এই মানচিত্র ছাত্র আন্দোলনের অর্জন। স্বাধীনতার পূর্বে এবং পরবর্তীতে কোনো ছাত্র আন্দোলন বিফলে যায়নি, ভবিষ্যতেও হয়তো যাবে না। ছাত্ররা ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন, ইতিহাস সৃষ্টি করবেন। কোটা সংস্কার নিয়ে ছাত্রদের আন্দোলন পুরোপুরি যৌক্তিক। রাষ্ট্রের উচিত, এই দাবি পর্যালোচনা করে কোটা প্রথা সীমিত করা। সাম্যতা বজায় রাখতে এটিকে বাস্তবায়ন জরুরি। জাতীয় ছাত্রসমাজ এই দাবিকে শতভাগ সমর্থন করে এবং শিক্ষার্থীদের সব ন্যায্য দাবির  সঙ্গে ছাত্রসমাজ ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতে থাকবে।’

LEAVE A REPLY