জবানবন্দিতে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলো বাসে আগুন দেওয়া সোহেল

লেগুনা চালক সোহেল রানা প্রকাশ বাবু (২৮)।  চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ এলাকায় বসবাস করলেও তার গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাট জেলার বড়বাড়ি ইউনিয়নের জয়হরি গ্রামে।  দীর্ঘদিন যাবৎ চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি মহাসড়কের হাটহাজারী-অক্সিজেন আঞ্চলিক সড়কে লেগুনা চালাতেন।  বিগত প্রায় ১৫ দিন আগে তার লেগুনা চালানো বন্ধ হয়ে যায়।  এতে তিনি আর্থিক সঙ্কটে পড়েন। এরপর তিনি হাটহাজারীর রুবেল হত্যা মামলার প্রধান আসামি নগরীর বায়েজিদ থানা শ্রমিক লীগের সভাপতি দিদারুল আলম দিদারের কাছে প্রায় আর্থিক সহযোগিতার জন্য যেতেন।

এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সারাদেশে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে নাশকতার পর শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে সোহেলকে হাটহাজারীর নতুনপাড়াস্থ বিআরটিসি’র বাস ডিপোতে পাঁচটি বাস পোড়ানোর প্রস্তাব দেয় দিদার। ঘটনার প্রায় ১০ ঘন্টা আগে নতুনপাড়াস্থ সিএনজি অটোরিকশার স্টেশনে দিদার বাস পোড়ানোর জন্য সোহেলকে পাঁচশত টাকা দেয়। বলা হয়, পাঁচটি বাস পোড়ালে তাকে পরে নগদ চার লাখ টাকা দেওয়া হবে।

দিদারের কাছ থেকে বাসে আগুন দেওয়ার নির্দেশ পাওয়ার পর টাকার লোভ সামলাতে না পেরে শনিবার দিবাগত রাতে সোহেল বিআরটিসি’র ডিপোতে পার্কিং করা চারটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। শর্তমতো আরও একটি বাস পোড়াতে না পারায় রোববার রাতে সোহেল বিআরটিসি বাস ডিপোতে আরেকটি বাস পোড়াতে যায় সোহেল। এ সময় সে থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়।

মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রাম জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মুহাম্মদ জুনাইদের আদালতে সোহেল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে দিদারকে জড়িয়ে ঘটনার দায় স্বীকার করে। এর আগে সোহেলের দেওয়া তথ্য মতে বাস পোড়ানোর নিদের্শদাতা শ্রমিক লীগ নেতা দিদারকে নগরীর বালুছড়া বাজারে তার ব্যক্তিগত কার্যালয় থেকে জেলা গোয়েন্দা ও থানা পুলিশের একটি টিম গ্রেফতার করে। তাছাড়া উক্ত ঘটনায় বাস পোড়ানোর ঘটনায় বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(৩) ধারায় হাটহাজারী মডেল থানায় (২৯/৭/২৪) দায়ের করা মামলায় সোহেল ও দিদারকেও আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয় বলে জানায় মামলার বাদী বাস ডিপোর ম্যানেজার জুলফিকার আলী।

এদিকে, বাস পোড়ানোর নিদের্শদাতা শ্রমিক লীগ নেতা দিদার এক সময় বিএনপি’র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিল বলে অভিযোগ করেছে নগরীর বায়েজিদ থানা শ্রমিক লীগ একাংশের সভাপতি বিপ্লব কুমার দাশ প্রকাশ মাটি। তিনি জানান, দিদার স্ব-ঘোষিত একজন নেতা। সে নিজেকে বায়েজিদ থানা শ্রমিক লীগ একাংশের সভাপতি দাবী করে। সে আসলে শ্রমিক লীগের কেউ না। দেশের ক্রান্তিকালে হতদরিদ্র লেগুনা চালককে দিয়ে বাস পোড়ানো মত যে কাজটি করেছে তাতেই প্রমাণ হয় সে কোন দলের নেতা বা কর্মী।  

দিদার সংগঠনের কেউ না-এমনটা দাবী করে জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সফর আলী এ প্রতিবেদককে বলেন, সে শ্রমিক লীগের নাম বেচে নানা অপকর্ম করে বেড়ায়। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। আমি নিশ্চিত করে বলছি, দিদার শ্রমিক লীগের সাথে যুক্ত এমন কোন বৈধ কাগজপত্র সে কখনও দেখাতে পারবে না। সে শ্রমিক লীগ নেতা হওয়া দূরে থাক, আমাদের একজন প্রাথমিক কর্মীও নয়। তবে আমি শুনেছি, সে একসময় ২০১২ সালের আগে নগর বিএনপি’র এক নেতার ঘনিষ্ঠ কর্মী ছিল।  

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন জানান, কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। অপরাধী যেই হোক না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তবে, ঘটনা পরবর্তী সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দেশ ও জাতির স্বার্থে প্রকৃত অপরাধীকে আইনের আওতায় আনাই হচ্ছে আমাদের মূল কাজ।

প্রসঙ্গত, শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ৫মিনিটের দিকে হাটহাজারী রোডের নতুনপাড়া বিআরটিসি ডিপোতে চারটি বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে । এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে বিআরটিসির অপারেশন ম্যানেজার মামলা করেন।

LEAVE A REPLY