শকুন কমায় মৃত্যু বেড়েছে মানুষের

আমেরিকান ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে বিপুলসংখ্যক শকুনের মৃত্যুর ফলে মারাত্মক ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য সংক্রমণ ছড়িয়ে পাঁচ বছরে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গরুসহ পচাগলা প্রাণিদেহ খেয়ে ঐতিহ্যগতভাবে শকুন প্রকৃতিকে পরিচ্ছন্ন রাখতে সহায়তা করত।

গবেষণাটির সহলেখক ইয়াল ফ্রাংক যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যারিস স্কুল অব পাবলিক পলিসি বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক। তিনি বলেন, ‘পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার কাজ করে শকুন।

আমাদের পরিবেশ থেকে ব্যাকটেরিয়াসহ বিভিন্ন জীবাণু বহনকারী মৃত প্রাণী অপসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে পাখিটি। এই শকুনের উপস্থিতি ছাড়া রোগজীবাণু ছড়াতে পারে। তারা শুধু দেখতেই সুন্দর না, পরিবেশের জন্য দরকারিও। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রাণিজগতের সবার আলাদা দায়িত্ব আছে।

গবেষণাটিতে ইয়াল ফ্রাংক ও তাঁর সহলেখক অনন্ত সুদর্শন ভারতের বিভিন্ন জেলায় জীবাণুঘটিত রোগে মানুষের মৃত্যুর হারের তুলনা করেছেন। অতীতে শকুনের ব্যাপক উপস্থিতির সময়ের সঙ্গে শকুন কমে যাওয়ার পর একই এলাকার মানুষের মৃত্যুর হারের ব্যবধান বিশ্লেষণ করেছেন তাঁরা।

ভারতীয় উপমহাদেশে একসময় প্রায় সব এলাকায় বিপুলসংখ্যক শকুন দেখা যেত। কিন্তু দুই দশক আগে এ অঞ্চলজুড়ে ব্যাপক হারে শকুন মারা যেতে থাকে।

অনুসন্ধানের পর এ জন্য দায়ী করা হয় গরুর চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ ডাইক্লোফেনাককে। ওষুধটি প্রয়োগ করা হয়েছে এমন মৃত গরুর মাংস খেয়ে কিডনি জটিলতায় ভুগে মারা যায় বহু শকুন। মারা যেতে যেতে গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি এক সময়ে পাঁচ কোটি থেকে শকুনের সংখ্যা শূন্যের কাছাকাছি নেমে এসেছিল। ২০০৬ সালে গবাদি পশুর চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনাক ব্যবহার নিষিদ্ধ করার পর থেকে শকুনের মৃত্যু অনেকটাই কমেছে। তবে এটি ব্যবহারের ফলে অন্তত তিনটি প্রজাতির দীর্ঘ মেয়াদে ৯১ থেকে ৯৮ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, শকুন কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মৃত্যুর হারও লাফিয়ে বেড়ে গেছে। গবেষকরা দেখেছেন, ভারতের জনপদগুলোতে ২০০০ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে শকুন কমে যাওয়ার কারণে বছরে বাড়তি এক লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এই মানুষগুলো এমন ব্যাকটেরিয়ায় সংক্রমিত হয়ে মারা গেছে, যেগুলো শকুন থাকলে পরিবেশ থেকে সরিয়ে ফেলত। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, শকুনের অনুপস্থিতিতে বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা বেড়ে তাদের কামড়ে মানুষের জলাতঙ্ক হওয়ার হারও বেড়েছে।

শূন্য দশকে এসে এ অঞ্চলে ভারতীয় শকুনের পাশাপাশি পরিযায়ী শকুনও কমে গেছে। ইদানীং বিপন্ন শকুন উদ্ধারের পর সুস্থ করে প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে চিড়িয়াখানা বা সাফারি পার্কের মতো আটক অবস্থায় শকুনের বাচ্চা ফুটিয়ে উপযুক্ত বয়সে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের পদক্ষেপ বিপন্ন শকুনকে রক্ষায় যথেষ্ট কি না, সে ব্যাপারে অবশ্য মতপার্থক্য রয়েছে।

সূত্র : বিবিসি

LEAVE A REPLY