বাঘ নিয়ে আশার আলো দেখাল যে বন

ছবি : সংগৃহীত

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে যেখানে বাঘের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে, সেখানে রাজসিক প্রাণীটিকে নিয়ে সুসংবাদ দিল থাইল্যান্ড। আগামীকাল সোমবার বিশ্ব বাঘ দিবসের আগে দেশটি জানিয়েছে, তাদের ওয়েস্টার্ন ফরেস্ট কমপ্লেক্সে (ডাব্লিউইএফকম) ১৭ বছরে বাঘের সংখ্যা তিন গুণেরও বেশি বেড়েছে। ২০০৭ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সেখানে বাঘের সংখ্যা ৪১ থেকে বেড়ে ১৪৩ হয়েছে।

১১টি জাতীয় উদ্যান এবং বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য ঘিরে গড়ে ওঠা ১৮ হাজার বর্গকিলোমিটারের ডাব্লিউইএফকম বনাঞ্চলটি গড়ে উঠেছে।

বনটিতে কেবল বাঘই নয়, হরিণসহ অন্যান্য প্রাণীর সংখ্যাও বেড়েছে। থাইল্যান্ডের জাতীয় চিড়িয়াখানা (ডিএনপি) এবং বন্য প্রাণী সংরক্ষণ সমিতির (ডাব্লিউসিএস) নেতৃত্বে এক গবেষণায় বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি উঠে এসেছে। বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল গ্লোবাল ইকোলজি অ্যান্ড কনভারশনে এসব গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ডাব্লিউসিএস পরিচালক এবং বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ পর্ণকমল জর্নবুরম বলেছেন, প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি বনের কার্যকর ব্যবস্থাপনার উদাহরণ।

এক দশকেরও বেশি সময়ের পরিশ্রমের ফসল এটি। তিনি বলেন, এই ফরেস্ট কমপ্লেক্সে বহু বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। জর্নবুরম মনে করেন, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ এবং বিপন্ন প্রজাতির সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য ডাব্লিউইএফকম রোল মডেল হয়ে থাকবে। আসলে বাঘ সংরক্ষণ করলে এটি অন্য অনেক প্রজাতিকেও সংরক্ষণের দিকে নিয়ে যায়।

ডাব্লিউইএফকম বনাঞ্চলটিতে ২০০৫ সাল থেকে কাজ করছেন পর্ণকমল। তিনি সেখানে নাটকীয়ভাবে বন্য প্রাণীর সংখ্যা বাড়তে দেখেছেন। তিনি বলেন, বন্য প্রাণীর জন্য বড় ঝুঁকিগুলোর অন্যতম হলো শিকার। বনাঞ্চলে কড়া টহলের মাধ্যমে শিকারিদের প্রতিহত করা হয়েছে। বন্য প্রাণী নিয়ে অবৈধ ব্যবসা আটকাতে টহলদার দল জিপিএস ব্যবহার, ক্যামেরা বসানো, তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি আধুনিকায়নসহ নানা ধরনের পথ অবলম্বন করেছে।

এ ছাড়া  বেশির ভাগ সংরক্ষণকেন্দ্র ছোট এলাকায় গড়ে তোলা হয়। কিন্তু ডাব্লিউইএফকম বিশাল এলাকাজুড়ে কয়েকটি পার্কের মধ্যে সংযোগ সৃষ্টি করে বাঘের জন্য পর্যাপ্ত বনাঞ্চল রেখেছে অবাধে বিচরণের জন্য। এর ফলও পাওয়া গেল এবার। ডাব্লিউইএফকম থাইল্যান্ড তো বটেই, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর বনাঞ্চলের মধ্যেও বৃহত্তম। ডাব্লিউসিএস জানিয়েছে, বনাঞ্চলটি শুধু বাঘের জন্য নয়, অন্য বিপন্ন প্রাণীদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এশীয় হাতি, হর্নবিল ও বেনটেংয়ের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য দারুণ উপযুক্ত স্থান এটি। সেখানে ১৫০ প্রজাতির বন্য প্রাণী, ৪৯০ প্রজাতির পাখি এবং ৯০ ধরনের সরীসৃপ রয়েছে। বাঘ নিয়ে থাইল্যান্ড তাদের সাফল্যের গল্প বললেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলের দিকে তাকালে খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার মতো কিছু মেলে না। একসময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াজুড়ে বাঘ থাকলেও বিংশ শতাব্দীতেই সিঙ্গাপুর, জাভা ও বালিতে বাঘ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভিয়েতনাম, লাওস ও কম্বোডিয়ার বনেও বাঘের অস্তিত্ব হারিয়েছে। মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা ও মালয়েশিয়ায় কিছুসংখ্যক বাঘ রয়েছে।

সূত্র : সিএনএন

LEAVE A REPLY