মার্চ ফর জাস্টিসে বাধা সংঘর্ষ

নয় দফা বাস্তবায়নের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক, আইনজীবী ও সাধারণ জনগণ। 
বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ইডেন কলেজ, বদরুন্নেসা কলেজ, শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা, অভিভাবক, আইনজীবী ও নানা পেশার মানুষ হাইকোর্টের সামনে বিক্ষোভ করেছেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন বিভাগ, জেলা, উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ছাত্র-জনতা। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পুলিশি বাধার সম্মুখীন হন আন্দোলনকারীরা। এ সময় ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব স্থান থেকে আন্দোলনে অংশ নেওয়া অনেককে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও গাজীপুরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পালটাপালটি ধাওয়া হয়েছে। এ সময় অন্তত ৭৫ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া বগুড়া, যশোর, ঠাকুরগাঁওসহ কয়েকটি স্থানে বাধা উপেক্ষা করে কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন স্থানে পুলিশ শিক্ষার্থীসহ শতাধিক লোককে আটক করেছে। সংঘর্ষে খুলনার ময়লাপোতা মোড়, সাতরাস্তা, মডার্ন মোড় ও পিটিআই মোড় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে সাংবাদিকসহ অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। বরিশালে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে দফায় দফায় লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এতে আহত হয়েছেন ১৫ জন। 

পুলিশ ১০ শিক্ষার্থীকে আটক করেছে। সিলেটে পদযাত্রা কর্মসূচিতে প্রথমে বাধা, পরে টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। এ সময় শিক্ষার্থীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। সংঘর্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। এদিকে রাজধানীর দোয়েল চত্বরে আটক এক শিক্ষার্থীকে ছাড়াতে গিয়ে পুলিশের ধাক্কায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। হাইকোর্টের সামনে থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ অন্তত আটজনকে আটক করলেও পরে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। হাইকোর্ট ও আশপাশের এলাকায় শতাধিক পুলিশ ও বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়। শিক্ষার্থীরা বিজিবি সদস্যদের লক্ষ্য করে ‘গো ব্যাক বর্ডার’ (সীমান্তে ফিরে যান) স্লোগান দেন। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাবি, বুয়েট, নর্থ সাউথ, ব্র্যাক, গ্রিন ইউনিভার্সির্টি, ঢাকা কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে অংশ নেন। তারা মিছিল নিয়ে হাইকোর্টের দিকে আসেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,বাংলাদেশ প্রকেশৌল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, অনেক অভিভাবক বিশিষ্ট ব্যক্তিসহ সাধারণ মানুষকে মিছিলে অংশ নিতে দেখা যায়। 

শিক্ষার্থীদের মিছিল হাইকোর্টের মাজার গেটের কাছে পৌঁছালে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা মিছিল নিয়ে সামনে আসেন। এ সময় পুলিশ মাজার গেট বন্ধ করে দেয়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও আইনজীবীরা গেট খোলার চেষ্টা করলে পুলিশ মাঝে দাঁড়িয়ে বাধা দেয়। তখন গেটের বাইরে শিক্ষার্থীরা এবং ভেতরে আইনজীবীরা স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটকের খবর শুনে কিছু আইনজীবী গেটের পাশের ব্যারিকেড টপকে শিক্ষার্থীদের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। এখানে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধস্তাধস্তি হয়। 

দুপুর দেড়টার দিকে শতাধিক শিক্ষার্থী আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে আইনজীবী সমিতির ভবনের সামনে যান। এ সময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা মিছিল সহকারে তাদের সমর্থনে পাশে এসে দাঁড়ান। এখানে শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগন দেন-‘তর কোটা ফিরিয়ে নে, আমার ভাইকে ফেরত দে’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। 

তারা সমবেত কণ্ঠে গানও পরিবেশন করেন। একপর্যায়ে সরকার-সমর্থক এক আইনজীবী শিক্ষার্থীদের বেরিয়ে যেতে বললে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা ভুয়া ভুয়া বলে চিৎকার করতে থাকেন। ওই আইনজীবী তোপের মুখে দ্রুত সটকে পড়েন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, তৈমূর আলম খন্দকার, রুহুল কুদ্দুস কাজল, গাজী কামরুল ইসলাম সজল, মোহাম্মদ আলীসহ শতাধিক আইনজীবী একাত্মতা প্রকাশ করেন। মাজার গেটের ভেতরে দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলম, শারমিন মুরশিদ, রেহেনুমা আহমেদ আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন। মাজার গেটে সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের রক্ত দিয়ে হোলিখেলা শুরু করেছে। 

জনগণের রক্ত দিয়ে হোলিখেলা বন্ধসহ আটক শিক্ষার্থীসহ সব রাজনৈতিক কর্মীর মুক্তির দাবি জানান। সরেজমিন দেখা যায়, দুপুর ১টার দিকে ৬ জন এবং পরে আরও দুই শিক্ষার্থীসহ আটজনকে আটক করে পুলিশ। তাদের নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে এক শিক্ষার্থী পুলিশের প্রিজনভ্যানের সামনে দাঁড়িয়ে বাধা দেন। একপর্যায়ে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ অন্যান্য আইনজীবী ও ছাত্র-জনতা পুলিশের গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে গেলে আটককারীদের ছেড়ে দেয় পুলিশ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী রুবিনা বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করবে না, অথচ রাতের আঁধারে গণহারে সবাইকে গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। সব ধরনের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ সারা দেশে গ্রেফতার সবাইকে মুক্তি দিতে হবে।

হাইকোর্ট এলাকায় পুলিশি বাধায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা :
ঢাবি প্রতিনিধি জানান, ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বুধবার দুপুরে হাইকোর্টে মিছিল নিয়ে যেতে চাইলে তারা পুলিশি বাধার সম্মুখীন হন। এদিকে পুলিশের হাতে আটক শিক্ষার্থীকে বাঁচাতে গিয়ে পুলিশের ধাক্কায় আহত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রভাষক শেহরীন আমিন ভূঁইয়া।

বুধবার দুপুরে শিক্ষা ভবনের দিক থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন কলেজ, বদরুন্নেসা কলেজ, শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা ছোট ছোট মিছিল নিয়ে হাইকোর্টের দিকে রওয়ানা হন। অন্যদিকে ছাত্রদের কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি এবং জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোকাররম ভবন থেকে একটি মিছিল নিয়ে হাইকোর্ট দিকে রওয়ানা হয়। মিছিলটি দোয়েল চত্বর পেরিয়ে সামনে এগোলে শিশু একাডেমির আগে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিলিত হয়। 

এদিকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ছাত্র নিপীড়ন ও সাধারণ মানুষ হত্যার বিচারের দাবিতে প্রোকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) সাধারণ শিক্ষকদের ব্যানারে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বুয়েটের বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে শহিদ মিনারে শেষ হয়। পরে দুপুর ১টার দিকে বুয়েটর সাধারণ শিক্ষার্থীরা মার্চ ফর জাস্টিসের সমর্থনে বুয়েট শহিদ মিনার থেকে মিছিল বের করেন। মিছিলটি বুয়েটের প্রশাসনিক ভবন, কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার, দোয়েল চত্বর হয়ে পুলিশের বাধায় সড়কে অবস্থান নেওয়া শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি এবং জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান, যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক আব্দুস সালাম, অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান খান, কোষাধ্যক্ষ আবুল কালাম সরকার, সাবেক আহ্বায়ক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক কামরুজ্জামানসহ অনেক শিক্ষক।

বক্তব্যে অধ্যাপক জাহাঙ্গীর বলেন, এই আন্দোলন কেন্দ্র করে যে হত্যাকাণ্ড হয়েছে, এটিকে আমরা নাম দিয়েছি ‘জুলাই ম্যাসাকার’। এটি ইতিহাসে জুলাই ম্যাসাকার হয়ে থাকবে। আমি শিক্ষক হিসাবে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে পারিনি, এজন্য আমি লজ্জিত। যে ক্ষতি হয়ে গেছে, সেটি আর ফিরিয়ে আনতে পারব না। কিন্তু দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠ ছাড়ব না।

ঢাকার আদালতে আইনজীবীদের বিক্ষোভ : চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ডাকা ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচির সমর্থন জানিয়ে ঢাকার আদালতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আইনজীবীরা। বুধবার দুপুর ১টার দিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণে শতাধিক আইনজীবী এই বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন। এ সময় বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন আইনজীবীরা। বিক্ষোভ মিছিলটি ঢাকা আইনজীবী সমিতি থেকে শুরু করে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। কর্মসূচি ঘিরে বিজিবি সদস্য ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ বিষয়ে লালবাগ জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ইমরান হোসেন মোল্লা বলেন, আদালতের নিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয়, এ কারণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বেশ কয়েক স্তরে নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। নাশকতা ঠেকাতে তল্লাশি করা হচ্ছে।

মিরপুরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল : ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালনে বুধবার বেলা দেড়টায় মিরপুর ১০ নম্বর বেনারসী পল্লির মূল সড়কে (আবু তালেব স্কুল) ৪০-৫০ জন শিক্ষার্থী এই বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন। পুলিশের হোন্ডা টইল টিম আন্দোলনকারীদের বাইক নিয়ে ঘিরে রাখে। একপর্যায়ে পুলিশ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। 

অন্যদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের থেকে সামান্য দূরে অবস্থান নেন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। তারা আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করতে গেলে পুলিশ দুই পক্ষের মাঝে অবস্থান নিয়ে তাদের সরিয়ে দেন। অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। 

শ্যামপুরে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিল : নাশকতার প্রতিবাদে রাজধানীর শ্যামপুর-কদমতলী এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বুধবার সকাল ১০টায় স্থানীয় সংসদ-সদস্য ড. আওলাদ হোসেনের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা রাজপথে সতর্ক অবস্থান ও বিক্ষোভ মিছিল করেন। 

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার সারা দেশে ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা, গণগ্রেফতার, হামলা, মামলা, গুম, খুনের প্রতিবাদে ও জাতিসংঘ কর্তৃক তদন্তপূর্বক বিচারের দাবিতে এবং ছাত্রসমাজের ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে দেশের সব আদালত প্রাঙ্গণে মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তারা সারা দেশের শিক্ষক, আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী, পেশাজীবী, শ্রমজীবী ও সব নাগরিককে কর্মসূচি পালনে সর্বাত্মক সহযোগিতা এবং দাবি আদায়ের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করতে বিশেষভাবে অনুরোধ করেন।

ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
জাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, গণস্বাক্ষর : বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষকও কর্মসূচিতে অংশ নেন। দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদ ভবনসংলগ্ন মহুয়া মঞ্চের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারসংলগ্ন সড়ক, নতুন প্রশাসনিক ভবন প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশ করেন তারা। এরপর একই স্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী লিয়নসহ গ্রেফতার সব শিক্ষার্থীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করা হয়। 

বগুড়ায় বাধা উপেক্ষা করে কর্মসূচি পালন : পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি পালন করেছেন। এ সময় তাদের সঙ্গে অনেক অভিভাবকও অংশ নেন। বেলা ১১টার পর বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী শহরের জলেশ্বরীতলায় শহিদ আবদুল জব্বার সড়কে সমবেত হন। তারা সেখান থেকে মিছিল নিয়ে কালীমন্দিরের সামনে এলে পুলিশ বাধা দেয়। বাধা পেরিয়ে তারা আদালতের সামনে এলে সেখানেও দ্বিতীয় দফা বাধা দেওয়া হয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটু ধাক্কাধাক্কি হলেও কোনো পক্ষই অপ্রীতিকর ঘটনায় জড়ায়নি। শিক্ষার্থীরা সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করার পর মিছিল নিয়ে জেলাখানা মোড়ে সমাবেশ করেন।

যশোরে লাঠিচার্জ, আটক ৬ : সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা সবাই যশোর পৌরসভার সামনে জড়ো হন। এ সময় মিছিলের চেষ্টা করলে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এরপর শহরের ঈদগাহ মোড় থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের দিকে অগ্রসর হয়। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে তারা উপেক্ষা করে মিছিল নিয়ে অগ্রসর হতে থাকেন। এরপর পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে চার রাস্তার মোড়ে মিছিলটি পৌঁছায়। সেখানে পুলিশ সদস্য ও ডিবি পুলিশের সদস্যরা এলোপাতাড়ি লাঠিচার্জ করে ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। এর আগে শহরের ঈদগাহ মোড় থেকে রনি, আকাশ, রানা, তৌহিদুল, রিয়াজ ও ইব্রাহিম নামে ৬ শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ।

দিনাজপুরে পুলিশের বাধায় সমাবেশ পণ্ড, আটক ১০ : বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দিনাজপুরের বড় ময়দান কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে জড়ো হতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর বেলা ১২টায় তারা মাথায় লাল রেবন বেঁধে ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। তখন পুলিশ এসে তাদের সেখান থেকে চলে যেতে বলে। কিন্তু এরপরও শিক্ষার্থীরা অনড় থাকেন। একপর্যায়ে পুলিশ তাদের সরে যেতে বাধ্য করে এবং সেখান থেকে ১০ জনকে ধরে নিয়ে যায়।

গাজীপুরে বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ, গ্রেফতার ৭ : শিক্ষার্থীরা বেলা সাড়ে ১১টায় শহরের রাজবাড়ী রোডের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। সেখানে সড়কের দুই পাশে ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশ শিক্ষার্থীদের বাধা সৃষ্টি করে। দুপুর ১টার দিকে শিক্ষার্থীরা জেলা শহরের লেভেলক্রসিং থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় আশপাশের এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিলে যোগ দেন। পরে মিছিলটি শিববাড়ি হয়ে শিমুলতলীর ডুয়েটের দিকে যেতে থাকেন। মিছিলটি ওই সড়কের বটতলায় পৌঁছালে পুলিশ তাদের লাঠিচার্জ করে। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাফিউল করিম রাফি বলেন, শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বের হলে তাদের ধাওয়া দিয়ে ছাত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। ৭ জনকে আটক করা হয়েছে। 

ঠাকুরগাঁওয়ে লাঠিচার্জ : বেলা ১১টায় শিক্ষার্থীরা ঠাকুরগাঁও অপরাজয় ৭১ থেকে মিছিল নিয়ে আদালত অভিমুখে যেতে থাকেন। তারা শহরের কোকিল প্রাইমারি স্কুল ও পৌরসভার মূল ফটক অতিক্রম করে আদালতে প্রবেশ করার চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রথমে তাদের থামিয়ে দেয়। শিক্ষার্থীরা বাধা উপেক্ষা করে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। 

রাজশাহীতে পুলিশের গাড়িতে হামলা, আটক ৫ : দুপুর আড়াইটায় মহানগরীর মহিষবাথানে পুলিশের টহল গাড়িতে হামলা হয়েছে। এতে গাড়ির সামনের কাচ ভেঙে যায়। পরে সন্দেহভাজন ৫ জনকে আটক করে পুলিশ। আটক ব্যক্তিরা হলেন-বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) ফাইন্যান্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ওয়াকিউর রহমান শাওন, তানভীর আনজুম রাকিন ও রবিন। বাকি দুজনের নাম জানা যায়নি। 

রাবিতে দুই শিক্ষার্থী আটক : দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মেইন গেটে অবস্থান নিতে চাইলে দুই শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার মহিষবাথান কলোনি থেকে ডিবি পরিচয়ে রাবির আরেক শিক্ষার্থীকে তুলে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আটক শিক্ষার্থীরা হলেন ইংরেজি বিভাগের সৈয়দ বাসিতুল ইসলাম ও মাজেদ হোসেন। আর তুলে নেওয়ার অভিযোগ শিক্ষার্থী রিফাত সরকারকে।

LEAVE A REPLY