মামুনুর রশীদ
‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে ছাত্রদের আন্দোলনের পক্ষে রাজপথে নেমেছিলেন অভিনেতা, নির্দেশক ও নাট্যজন মামুনুর রশীদ। সোমবার (৫ আগস্ট) এলো চূড়ান্ত বিজয়। ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই বিজয় ও আগামীর বাংলাদেশ নিয়ে কী ভাবছেন মামুনুর রশীদ? জেনেছেন কামরুল ইসলাম।
আন্দোলন ও বিজয়ের অনুভূতি
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে সক্রিয় সমর্থন দিয়েছেন মামুনুর রশীদ। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে রাজপথেও নেমেছেন। অবশেষে এসেছে কাঙ্ক্ষিত বিজয়। অনুভূতি জানালেন এভাবে, ‘এ আন্দোলনে জনগণের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের প্রকাশ ঘটেছে।
বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা পথে নেমে এসেছে, এটা দেখার মতো বিষয়। সেই সঙ্গে আমি খুব দুঃখিত হয়েছি গণভবন, সংসদ ভবনে হামলা-লুটপাট দেখে। সংসদ তো আমাদের পবিত্র একটি জায়গা। পরে অবশ্য ছাত্ররা লুটপাট প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে, সেটা দেখে ভালো লেগেছে।
কিন্তু এটা (লুটপাট) হওয়া উচিত ছিল না। বহির্বিশ্বে এই বার্তা চলে গেছে। এ দিকটায় সচেতন থাকা দরকার ছিল।’
শান্তির বার্তা
বিজয়ের উল্লাস-উদযাপন হবেই, তবে তা হতে হবে সচেতনভাবে—এমনটাই মনে করেন মামুনুর রশীদ। সোমবার বিকেল থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার খবর পাওয়া গেছে।
এ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে জ্যেষ্ঠ এই নাট্যজন বলেন, ‘সহিংসতা কাম্য নয়। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার সংবাদ পাওয়া গেছে। যদিও এখন ছাত্র ও সাধারণ জনগণ এটা প্রতিহত করছে। এটা ভালো দিক।
আমি আশা করি মানুষ শান্ত থাকবে।’
আন্দোলনে আন্দোলনে তফাৎ
মামুনুর রশীদের জন্ম ১৯৪৮ সালে। দেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অভ্যুত্থান, আন্দোলনগুলোর সাক্ষী হয়েছেন তিনি। অতীতের সেসব আন্দোলনের তুলনায় এবারের আন্দোলনকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন? তাঁর জবাব, ‘সময় তো এক না। ওই আন্দোলনগুলোতে ইন্টারনেটের কোনো ভূমিকা ছিল না। তখন মানুষের মুখে মুখে আন্দোলন ছড়িয়ে যেত। মিডিয়া বলতে তখন ছিল শুধু রেডিও-টেলিভিশন। সেখানে আবার এসব সংবাদ প্রচার করা হতো না। মানুষে মানুষে যোগাযোগের মধ্য দিয়েই বড় অভ্যুত্থানগুলো হয়েছে। এবারের আন্দোলনে ইন্টারনেটের ব্যাপক ভূমিকা ছিল। সুতরাং আগের আন্দোলন আর এবারের আন্দোলনের মধ্যে গুণগত পার্থক্য আছে।’
কেমন দেশ চাই
নতুনভাবে দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছে সবাই। কেমন হতে পারে নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা, অনেকেই নিজ নিজ অভিমত তুলে ধরছেন। এ প্রসঙ্গে মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আমার একটাই পরামর্শ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণের জন্য যে সহনশীলতা প্রয়োজন, তা সবাইকে দেখাতে হবে। এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হবে কিংবা পরে যে সরকার ক্ষমতায় আসবে, তাদের এটা মাথায় রাখতে হবে। একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যমুক্ত সমাজ চাই। এটা মাথায় রেখেই সবাইকে কাজ করতে হবে।’
শিল্প-সংস্কৃতি নিয়ে প্রত্যাশা
টানা এক মাসের আন্দোলনে অন্য অনেক খাতের পাশাপাশি শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনেরও অনেক ক্ষতি হয়েছে। সেটা পুষিয়ে আগামীতে শিল্পচর্চায় কী পরিবর্তন আনা যেতে পারে, তা জানিয়ে মামুনুর রশীদ বলেন, ‘কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। যাতে আমরা নির্বিঘ্নে কাজে ফিরতে পারি। সৃজনশীলতার জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ প্রয়োজন, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আর শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি আসলে ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে বিভিন্ন সময় রাষ্ট্রের কিছু বাধাও থাকে। এগুলো উঠিয়ে দিতে হবে। নিঃসংকোচে যেন আমরা কথাগুলো বলতে পারি, সে ব্যবস্থা করতে হবে।’