দেশ অস্থিতিশীল হলে মিয়ানমার ও ভারতের উত্তর-পূর্বেও ছড়াবে : ড. মুহাম্মদ ইউনূস

ফাইল ছবি

বাংলাদেশে চলমান অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে তা প্রতিবেশী মিয়ানমারসহ দেশের আশপাশে এবং ভারতের ‘সেভেন সিস্টার্সে’ (উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য) ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত মঙ্গলবার ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আসন্ন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হতে যাওয়া ড. ইউনূস এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে দীর্ঘদিনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সোমবার পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। এরপর মঙ্গলবার রাতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানরা এবং ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বৈঠকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে দেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।

ফ্রান্স থেকে দুবাই হয়ে এমিরেটসের ফ্লাইটে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. ইউনূসের। আজ সন্ধ্যায় তিনিসহ অন্তর্বর্তী সরকারের অন্য উপদেষ্টাদের শপথ নেওয়ার কথা।

এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা এখন বাংলাদেশের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যদি তা অর্জন করা না যায়, তাহলে ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে এর প্রভাব পড়বে।

সহিংস বিক্ষোভকারীদের কারা নিয়ন্ত্রণ করছে এবং তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে এর পরিণতি কতটা গুরুতর হতে পারে—এনডিটিভির এমন প্রশ্নে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এটা খুব একটা সুখকর পরিস্থিতি হবে না।’

তিনি বলেন, ‘যদি বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করা হয়, তাহলে তা মিয়ানমারসহ চারপাশে ছড়িয়ে পড়বে এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও সেভেন সিস্টার্সে (পূর্বের সাতটি রাজ্য) ছড়াবে। এটি আমাদের চারপাশে এবং মিয়ানমারের সর্বত্র আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মতো হবে। বড় সমস্যা হবে, কারণ এখানে লাখ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে।

ড. ইউনূস বলেন, ‘এ দেশে ১৭ কোটি মানুষ আছে, যাদের বেশির ভাগই তরুণ; যারা কখনো ভোট দেয়নি। এ জন্য দেশে গণতন্ত্র থাকা নিশ্চিত করতে হবে। এই তরুণরা কখনোই ভোটকেন্দ্রে যায়নি, কারণ নির্বাচন (অবাধ, নিরপেক্ষ) হয়নি। আমাদের তরুণদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’

দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান

এদিকে এক বিবৃতিতে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

সব ধরনের সহিংসতা এবং স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গতকাল বুধবার ইউনূস সেন্টার থেকে পাঠানো এক বার্তায় ড. ইউনূস এ আহ্বান জানান।

ছাত্র-জনতাকে অভ্যুত্থানের জন্য অভিনন্দন জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি সাহসী ছাত্রদের অভিনন্দন জানাই, যাঁরা আমাদের দ্বিতীয় বিজয় দিবসকে বাস্তবে রূপ দিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অভিনন্দন জানাই দেশের আপামর জনসাধারণকে, যারা ছাত্রদের এই আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে। আসুন আমরা আমাদের এই নতুন বিজয়ের সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করি। ’

ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের কোনো প্রকার ভুলের কারণে এই বিজয় যেন হাতছাড়া হয়ে না যায়। আমি বর্তমান পরিস্থিতিতে ছাত্র ও দল-মত-নির্বিশেষে সবাইকে শান্ত থাকতে এবং সব ধরনের সহিংসতা ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানাচ্ছি।’

ক্ষুদ্রঋণের প্রবক্তা হিসেবে বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত এই অর্থনীতিবিদ আরো বলেন, ‘আমাদের প্রিয় এই সুন্দর ও বিপুল সম্ভাবনাময় দেশটিকে নিজেদের ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রক্ষা করা এবং এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই এখন আমাদের প্রধান কাজ। একটি নতুন পৃথিবী বিনির্মাণে আমাদের তরুণরা প্রস্তুত। অকারণ সহিংসতা করে এই সুযোগ আমরা হারাতে পারি না।’

ড. ইউনূস বলেন, ‘সহিংসতা আমাদের সবারই শত্রু। অনুগ্রহ করে শত্রু সৃষ্টি করবেন না। সবাই শান্ত থাকুন এবং দেশ পুনর্গঠনে এগিয়ে আসুন। অনুগ্রহ করে নিজে শান্ত থাকুন এবং আপনার আশপাশের সবাইকে শান্ত থাকতে সহায়তা করুন।’

LEAVE A REPLY