গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। গত তিন দিন ধরে সেখানেই অবস্থান করছেন তিনি। তবে শেখ হাসিনার সঙ্গে আসা ব্যক্তিরা একে একে ভারত ছাড়তে শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
এ অবস্থায় শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? এ বিষয়ে এখনও কোনো আপডেট নেই বলেই জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধির জয়সয়াল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা কখন ভারত ছাড়বেন- জানতে চাইলে মুখপাত্র বলেন, শেখ হাসিনার শাসনের বিরুদ্ধে সহিংস বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করে তিনি তার দেশ থেকে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে ‘আমাদের কাছে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে কোনো আপডেট নেই…’।
রনধির জয়সয়াল এ সময় আরও বলেন, ভারত সরকার সব বিষয়ের ওপর নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশের সংকটের দ্রুত অবসানের আশা করছে।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখন বিকশিত হচ্ছে বলেও জানায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট সকালে গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। ওইদিন তার সরকারি বাসভবনে আন্দোলনকারীরা দখলে নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে তিনি ঢাকা ছাড়েন। একটি সামরিক বিমানে করে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি বিমান ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।
এদিকে ভারত সরকারের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে ইন্ডিয়া টুডের খবরে বৃহস্পতিবার বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার সফরসঙ্গীরা একে একে ভারত ছাড়তে শুরু করেছেন। তাদের পরবর্তী গন্তব্য কোথায় এখনও তা স্পষ্ট নয়। বাংলাদেশেই ফিরে যাচ্ছেন কি না, তাও জানা যায়নি।
শেখ হাসিনা ভারত থেকে কোথায় যাবেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তার ছেলে সাজিব ওয়াজেদ জয় জানিয়েছেন, মা আর বাংলাদেশে ফিরবেন না। শোনা যাচ্ছে, হাসিনা লন্ডনে যেতে চেয়েছেন। কিন্তু ব্রিটেন সরকার এখনও সবুজ সঙ্কেত দেয়নি।
এদিকে হাসিনাপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় বুধবার রাতে এনডিটিভিকে জানান, তার মা ভারতসহ কোনো দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করেননি।
জয় বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থান করছেন। শেখ হাসিনার সেখানে যাওয়ার ক্ষেত্রেও তেমন সাড়া মিলছে না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র হাসিনার মার্কিন ভিসা বাতিল করেছে বলেও খবর রয়েছে।
অন্যদিকে শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, যাকে সঙ্গে নিয়েই তিনি বাংলাদেশ ছেড়েছেন। রেহানা অবশ্য যুক্তরাজ্যের নাগরিক এবং তার কন্যা টিউলিপ সিদ্দিকী বর্তমানে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির এমপি।
অন্যদিকে শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বর্তমানে দিল্লি-ভিত্তিক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন সিনিয়র কর্মকর্তা। তবে তার এক টুইটার পোস্ট থেকে জানা যায় যে, ঢাকা থেকে পালিয়ে ভারতে যাওয়ার পর চার দিন হয়ে গেলেও তিনি তার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি।
এদিকে পাকিস্তানের নেতা পারভেজ মোশাররফ ও নওয়াজ শরিফসহ উপমহাদেশের বিশিষ্ট (দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া) রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের আশ্রয় দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে যুক্তরাজ্যের। সেক্ষেত্রে শেখ হাসিনাও যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নিলে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
কিন্তু ভারতের একজন মুখপাত্র এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, আশ্রয়প্রার্থী ব্যক্তিদের অবশ্যই ‘নিরাপদ একটি দেশেই পৌঁছাতে হবে’।
সেক্ষেত্রে শেখ হাসিনার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে যাচ্ছে, তা এখনই স্পস্ট নয়। সূত্র: এনডিটিভি