এবার মধ্যপ্রাচ্যে সাবমেরিন পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র

ইসরাইল-ইরান উত্তেজনার মধ্যেই এবার মধ্যপ্রাচ্যে গাইডেড মিসাইল সাবমেরিন পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র। ইতোমধ্যে একটি বিমানবাহী রণতরী মধ্যপ্রাচ্যের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে বলেও জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন। সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। 

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেছেন, ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে বিমান পরিবহণকারী বাহক পাঠানো হয়েছে। সেটি খুব দ্রুতই সেখানে পৌঁছাবে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ও ইরান সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর শীর্ষ দুই নেতার হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চরম উত্তেজনা চলছে। হামাস, ইরান ও হিজবুল্লাহ, ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবে বলে কড়া হুঁশিয়ার বার্তা দিয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইসরাইলকে রক্ষায় মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক শক্তি বাড়ানো শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। 

এর আগেও মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিমান, যুদ্ধ জাহাজ পাঠিয়েছে দেশটি। ইরানের যেকোনো আক্রমণ থেকে ইসরাইলকে রক্ষা করতে সাহায্য করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় সংকল্পের ইঙ্গিত দিয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রকে রক্ষার জন্য ‘সব সম্ভাব্য পদক্ষেপ নেবে’। 
রোববার মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পেন্টাগন জানিয়েছে, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অস্টিন মধ্যপ্রাচ্যে গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র সাবমেরিন ‘ইউএসএস জর্জিয়া’ মোতায়েন করেছে। এছাড়া এফ-৩৫সি যুদ্ধবিমান বহনকারী রণতরী ‘ইউএসএস আব্রাহাম লিংকন’ এর যাত্রা আরও দ্রুত করার নির্দেশ দিয়েছেন। 

জাহাজটি ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি মার্কিন রণতরীকে প্রতিস্থাপনের পথে রয়েছে। তবে এটা স্পষ্ট নয়, ইরান ইসরাইলে হামলা নিয়ে সর্বশেষ কী পরিকল্পনা করেছে। ইরান কী ধরনের প্রতিশোধ নিতে পারে তা এখনো স্পষ্ট নয়। এদিকে, ইসরাইলের ওপর আরেকটি সম্ভাব্য হামলা লেবাননে ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকেও আসতে পারে। হিজবুল্লাহ তাদের সিনিয়র কমান্ডার ফুয়াদ শুকর হত্যাকাণ্ডের জবাব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তেহরানে হামাস নেতা হানিয়া নিহত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে লেবাননে হামলা চালিয়ে ফুয়াদ শুকরকে হত্যা করে ইসরাইল। 

অপরদিকে হামাসের নতুন প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোকে জানিয়েছেন, তিনি দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির চুক্তি এবং যুদ্ধের পুরোপুরি অবসান চান। 

সিনওয়ারের এ বার্তা ইসরাইলকে পৌঁছে দিয়েছে মিসর এবং কাতারের আলোচনাকারীরা। রোববার মধ্যস্থতাকারী দেশের এক কর্মকর্তা মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেছেন, ‘কিন্তু কেউ জানে না নেতানিয়াহু কি চায়।’ 

সূত্রটি জানিয়েছে, হামাস ও ইসরাইলের যুদ্ধ যেন আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ না নেয় সেজন্য যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে রাজি হতে ইসরাইলকে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার মিসরের রাজধানী কায়রোতে হামাস-ইসরাইল ও মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। মিসর, কাতার এবং যুক্তরাষ্ট্র তিন দেশই বলেছে বৃহস্পতিবারের বৈঠকের মাধ্যমেই তাদের একটি সমাধানে পৌঁছাতে হবে।

গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। ১০ মাসের বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৪০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও এক লাখেরও বেশি মানুষ। যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। গত তিন-চার মাস ধরে এই যুদ্ধ থামাতে বেশ কয়েকবার চেষ্টা চালানো হয়েছে। কিন্তু ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর একগুঁয়েমির কারণে এটি এখনো সম্ভব হয়নি।

LEAVE A REPLY