জাকিয়া বারী মম
সু-অভিনেত্রী হিসেবে যেমন তাঁর পরিচিতি, তেমনই তিনি সচেতন নাগরিক। ছাত্র-জনতার সাম্প্রতিক আন্দোলনে অন্তর্জাল থেকে রাজপথ—সবখানেই সক্রিয় ছিলেন জাকিয়া বারী মম। অভ্যুত্থান পেরিয়ে দেশে স্থিরতা ফিরতে শুরু করেছে। কাজের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছেন মমও।
সার্বিক বিষয় নিয়ে অভিনেত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন কামরুল ইসলাম।
স্বস্তি এখনো আসেনি
প্রতিবাদ, আন্দোলনে কেটেছে দীর্ঘ এক মাস। স্বাভাবিকভাবেই সবার মনে ছিল অস্থিরতা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর ক্রমে পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে।
এখন কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে মনে? মম বলেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নরমাল হোক। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা ফিরে আসুক। সবাই যেন কাজে ফিরতে পারি।
তাহলেই স্বস্তি আসবে মনে।
শিল্পীর দায়িত্ব কেমন
রাজনীতির ছায়াতলে থাকতে চাই নারাজনৈতিক কোনো বিষয়ে সাধারণত চুপ থাকেন শিল্পীরা। তবে ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। শিল্পীদের বড় অংশ একাত্ম হয়ে নেমেছিলেন রাজপথে। এমন পরিস্থিতিতে শিল্পীদের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত?
মম বলেন, ‘উচিত-অনুচিত নির্ধারণ করা মুশকিল।
যে যা মনে করবে, সে সেভাবেই তার অবস্থানে থাকবে, কাজ করবে। আমি মনে করি, দেশ ও মানুষের জন্য কথা বলবে শিল্পী। ন্যায়ের পক্ষে, অন্যায়ের বিপক্ষে বলবে। সাধারণ নাগরিক হিসেবেও এই দায়িত্ব পালন করা উচিত।’
ধৈর্য ধরার আহ্বান
আওয়ামী সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। এর প্রতিবাদেও মাঠে নেমেছেন মম। তবে ‘সংখ্যালঘু’ শব্দটিতে তাঁর ঘোর আপত্তি। তিনি বলেন, ‘এ শব্দটার সঙ্গে আমি একমত নই। লঘু হোক আর গুরু হোক, প্রত্যেকেই দেশের মানুষ। ধর্ম, বর্ণ, পরিচয় দিয়ে বিচার করা অনুচিত। পাহাড় থেকে সমতলের প্রত্যেকে বাংলাদেশি। সংখ্যালঘু শব্দটাকেই বরখাস্ত করতে চাই। এই ধরনের শব্দ ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত। আর যুদ্ধ-পরবর্তী অবস্থায়, যেখানে পুলিশ-প্রশাসন সক্রিয়ভাবে মাঠে নামেনি, তখন অনেকেই চেষ্টা করবে নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে। সব দেশেই এটা হয়ে এসেছে। অধৈর্য হওয়া যাবে না। সবাইকে ধৈর্য ধরে নিজেকে এবং চারপাশের মানুষের নিরাপদ রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।’
দল নয়, শিল্পীই মুখ্য
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় কয়েক শ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতেও নীরব ছিল অভিনয়শিল্পী সংঘ। তাই সংগঠনটির কার্যনির্বাহী সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন মম। বিষয়টি নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘আমি শিল্পীদের সংগঠনটাই করতে চাই। কিন্তু সেখানে যখন শিল্পীদের পরিবর্তে দলীয়করণ অগ্রাধিকার পেয়েছে, তখন মনে হয়েছে অব্যাহতি নেওয়া সমীচীন। আমি শিল্পী ও মানুষের পক্ষে থাকতে চাই। আমার কোনো রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। রাজনীতির ছায়াতলে থাকতে চাই না।’
ভাবনায় অনড়
অভিনয়শিল্পী সংঘ থেকে অব্যাহতি নেওয়ার পর সংগঠনটি থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি বলে জানালেন মম। ভবিষ্যতে কখনো এই সংগঠনের কমিটিতে আসার ইচ্ছা আছে? ‘আমি শিল্পীদের অধিকার নিয়ে সব সময় কথা বলার চেষ্টা করেছি। যদি কমিটির বাইরে থেকে বলার সুযোগ থাকে, বাইরে থেকেই বলব। ক্ষমতার প্র্যাকটিস করতে চাই না কখনো। সংগঠন থেকে আমার আলাদা কোনো চাওয়া নেই। শিল্পীদের জন্য যেখান থেকে কথা বলার সুযোগ হয়েছে, সেখান থেকেই বলেছি। এটা অব্যাহত রাখতে চাই’—বলেন মম।
শুটিংয়ে ফেরার আভাস
আন্দোলনকালীন একাধিক নাটকের শুটিং বাতিল হয়েছে। সেগুলোর নতুন শিডিউল ঠিক করা হচ্ছে। মম বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। তাই নতুন করে পরিকল্পনা হচ্ছে। শুধু আমার ডেট হলেই তো হবে না, সহশিল্পী থেকে শুরু করে টিমের সবার শিডিউল মেলাতে হবে। আসলে শুটিংয়ে তো অনেক মানুষের সমন্বয় থাকে, প্রত্যেকের জীবনের নিরাপত্তাটা আগে প্রাধান্য পায়। কিছু ফিকশন ও নন-ফিকশনের কাজ হাতে আছে। আশা করছি সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই শুটিংয়ে ফিরতে পারব।’
চলচ্চিত্রের খবর
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে নাটকের পাশাপাশি বেছে বেছে চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। গত বছর সর্বশেষ মমকে দেখা গেছে অনন্য মামুনের ‘রেডিও’তে। এরপর নতুন একটি ছবির শুটিংও সেরেছেন মম—‘মাস্টার’। পরিচালক রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত। ছবিটি নিয়ে মম বলেন, ‘রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটের গল্প। একজন মাস্টার ও রাজনীতিবিদের গল্প। এখানে আমি তাঁর স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছি, যে রাজনীতিতেও ভূমিকা রাখে।’