হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় রাজধানীর মোহাম্মদপুর বসিলা এলাকায় পুলিশের গুলিতে মুদি দোকানি আবু সায়েদের মৃত্যুর ঘটনায় এ মামলা হয়। 

মামলায় অন্য আসামিরা হলেন-সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত কমিশনার মো. হারুন অর রশীদ ও যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার।

সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলন আগস্টের শুরুতে সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত হয়। জেলায় জেলায় সহিংসতায় মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে কয়েকশ মানুষ প্রাণ হারায়। ৫ আগস্ট আন্দোলনকারীদের ঢাকামুখী লংমার্চের মধ্যে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন এবং পালিয়ে ভারতে চলে যান। এরপর তার বিরুদ্ধে এটাই প্রথম মামলা দায়ের।

মামলার বাদী আদাবর এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী এসএম আমীর হামজা শাতিল। তিনি সচেতন নাগরিক হিসাবে একজন নিরীহ নাগরিক হত্যার বিচার চেয়ে এ মামলা করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালতে মামলার আবেদন করা হয়। পরে শুনানি শেষে আদালত শেখ হাসিনাসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা এজাহার হিসাবে গ্রহণ করতে মোহাম্মদপুর থানাকে নির্দেশ দেন।

মামলার আবেদনে বাদী উল্লেখ করেন, গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ওপর পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালালে বিকাল ৪টার দিকে মোহাম্মদপুর থানাধীন বসিলায় ৪০ ফিট চৌরাস্তায় মুদি দোকানি আবু সায়েদ নিহত হন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলন চলাকালে শক্ত হাতে দমন করার নির্দেশ দিয়েছেন। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পুলিশকে ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলি করার নির্দেশ দেন।

এ বিষয়ে মামলার বাদী এসএম আমীর হামজা যুগান্তরকে বলেন, ভিকটিম আবু সায়েদ একজন নিরীহ মানুষ। তিনি রাস্তা পার হচ্ছিলেন। এ সময় পুলিশের গুলিতে সঙ্গে সঙ্গে মারা যান। পুলিশের গুলিতে গরিব আবু সায়েদের মৃত্যুতে কোনো মামলা হয়নি। আবু সায়েদের পরিবার অত্যন্ত গরিব। তারা আইনের আশ্রয় নিতে পারছেন না। 

এ কারণে সচেতন নাগরিক হিসাবে আবু সায়েদ হত্যার বিচার চেয়ে আদালতে মামলা করেছি। আশা করছি ন্যায়বিচার পাব। তিনি আরও বলেন, মামলা করার পর আমাকে ফ্রান্স থেকে এক ব্যক্তি হত্যার হুমকি দিয়েছেন। আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, ‘আমি কার বিরুদ্ধে মামলা করছি তার কনসিকুয়েন্স জানি কিনা। আমাকে জানে মেরে ফেলবে।’ তবে আমি এসব ভয় পাই না। পরবর্তী সময়ে যদি কোনো হুমকি আসে তাহলে আমি আইনের আশ্রয় নেব। 

মামলার এজাহারে আমীর হামজা বলেন, সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা মিছিল সমাবেশ করে। ওইসব শান্তিপূর্ণ মিছিলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নির্বিচারে গুলি চালানো হয়। বহু ছাত্র-জনতা নিহত ও আহত হন। গত ১৯ জুলাই মোহাম্মদপুরে বসিলার ৪০ ফিট এলাকায় ছাত্র-জনতা শান্তিপূর্ণ মিছিল সমাবেশ করছিল। 

সেখানেও পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। রাস্তা পার হওয়ার সময় স্থানীয় মুদি দোকানদার আবু সায়েদ মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। তিনি ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করেন। নিহত সায়েদকে তার গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড়ের বোদায় নতুন বস্তি প্রধান হাটে নিয়ে দাফন করা হয়। তার মা, স্ত্রী, ছেলে-সন্তান সেখানেই থাকেন। এ কারণে তারা ঢাকায় এসে মামলা করতে অপারগ। এজন্য বিবেকের তাড়নায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এ মামলা দায়ের করছি।

মামলার এজাহারে আসামিদের বিরুদ্ধে বলা হয়, ১নং আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলন চলাকালে শক্ত হাতে দমন করার নির্দেশ দিয়েছেন। ২নং আসামি ওবায়দুল কাদের বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে আন্দোলন দমনের নির্দেশ দিয়েছেন। ৩নং আসামি সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল-মামুন, ৪নং আসামি হারুন অর রশীদ এবং ৬নং আসামি বিপ্লব কুমার ও ৭নং আসামি হাবিবুর রহমান ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে তাদের অধীনস্থ পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া ৫নং আসামি আসাদুজ্জামান কামাল পুলিশকে ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলি করার নির্দেশ দেন। 

অন্যান্য অজ্ঞাতনামা পুলিশ কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্য ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। বাদী তার অভিযোগে আরও বলেন, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার নিরীহ ছাত্র-জনতাকে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে হত্যা করে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়া আবশ্যক। আবু সায়েদ হত্যার তদন্ত হলে অজ্ঞাতনামা আরও তৎকালীন সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং পুলিশের সদস্যদের নাম উঠে আসবে।

এ বিষয়ে মামলার বাদীর আইনজীবী আনোয়ারুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আবু সায়েদকে হত্যার ঘটনায় একটি মামলা করেছি। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাতজনকে আসামি করা হয়েছে। আদালত মামলাটি মোহাম্মদপুর থানাকে এজাহার হিসাবে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। আশাকরি আমরা এই মামলায় ন্যায়বিচার পাব।

LEAVE A REPLY