ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের এক ট্রেইনি চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় বিক্ষোভে উত্তাল গোটা দেশ। ‘মেয়েরা রাত দখল করো’ নামের এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন হয়ে আসছে কয়েকদিন ধরে। কিন্তু গতকাল রাতে তাদের কর্মসূচিতে ব্যাপক তান্ডব চালিয়েছে অজ্ঞাত কিছু হামলাকারী।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, বিক্ষোভে অংশ নেওয়া আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালালো কারা? এ নিয়ে জোর আলোচনা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে। সিপিএম এবং বিজেপির দিকে দোষারোপ করছে শাসকদল তৃণমূল। আবার এই ঘটনায় তৃণমূলকে দায়ী করেছে সিপিএম এবং বিজেপি।
ভারতের স্বাধীনতা দিবসের রাতে চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদ এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বড় জমায়েতের ডাক দেয় আন্দোলনকারীরা। শুধু কলকাতা নয়, এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যন্ত গ্রাম আসানসোলের পুরুলিয়াতেও। আরজি কর মেডিক্যালে বেপরোয়া হামলা এখন ‘টক অব দ্য স্টেট’।
ঠিক কি হয়েছিল আরজি কর মেডিক্যালে?
বুধবার রাত ১২টার দিকে আরজি করের সামনে রাত দখলের কর্মসূচি শুরু হয়। ঠিক তার পর পরই একদল উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি ‘বিচার চাই’ বলে স্লোগান তুলে হাসপাতালে ভাঙচুর চালাতে শুরু করে। আচমকাই পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর চালাতে থাকেন তারা। কারও হাতে লাঠি, কারও হাতে রড, ইট, পাথর! হাতের সামনে যা পেয়েছে, তাই ভেঙেছে হামলাকারীরা। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে হাসপাতাল চত্বরে তাণ্ডব চালায় এই দলটি। পরে ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
পক্ষে-বিপক্ষে দোষারোপ
ঘটনার পর থেকেই একে অপরের দিকে আঙুল তুলতে শুরু করেছে রাজ্যের শাসক ও বিরোধী দলগুলো। ‘রাত দখলের’ কর্মসূচিকে ‘রাম-রাম কর্মসূচি’ বলে শুরু থেকেই কটাক্ষ করে আসছিলেন তৃণমূলের একাংশ। এই আন্দোলনে বিজেপি এবং বাম সংগঠনগুলোর ইন্ধন রয়েছে বলে দাবি করছে তৃণমূল। ঘটনা অন্যদিকে নিয়ে যেতে সিপিএম-বিজেপির হাত রয়েছে এমন ধারণা তৃণমূল শিবিরের। অন্যদিকে গোটা পরিস্থিতির দায় শাসকদল তৃণমূলের ঘাড়েই চাপিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
তার দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের গুন্ডারা এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন একটি অরাজনৈতিক আন্দোলনকে দমাতে চেয়ে। শুভেন্দুর আরও দাবি, নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের মামলার তদন্তভার যেহেতু সিবিআইয়ের হাতে গেছে, তাই তথ্যপ্রমাণ লোপাটের জন্য এভাবে হামলা চালানো হয়েছে।
সবমিলিয়ে এই আন্দোলনের বিস্তৃতি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূলকে। চাপের মুখে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের কাছে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি জানিয়েছেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের খুঁজে বের করতে হবে।