মেট্রো রেল: ভ্যাট অব্যাহতি পাচ্ছে যাত্রীরা

রাজধানীর অন্যতম জনপ্রিয় গণপরিবহন মেট্রো রেল। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই সেবার বিপরীতে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চলতি অর্থবছর এই সুবিধা বাতিল করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সরকার পতনের আন্দোলনে মেট্রো রেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।

এতে মোটা অঙ্কের ক্ষতি হওয়ায় আবারও ভ্যাট অব্যাহতি নিয়ে ভাবছে এনবিআর।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, মেট্রো রেলের যাত্রীসেবার ওপর ভ্যাট অব্যাহতি দিতে এনবিআরকে বিভিন্ন মহল থেকে সুপারিশ করা হয়েছিল। মেট্রো রেলের সক্ষমতার বিচারে ভ্যাট অব্যাহতি তুলে নেওয়া হয়েছিল। তবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় দুর্বৃত্তরা মেট্রো রেলের মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন জ্বালিয়ে দেয়।

এতে প্রচুর টাকা ব্যয় হবে। তাই ভ্যাট অব্যাহতি দিয়ে কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে।আরো

ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান শিগগিরই অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন। উপদেষ্টা সবুজ সংকেত দিলে যেকোনো সময়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে এনবিআর।

মেট্রো রেল সেবা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার পর ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য যাত্রীসেবার ওপর ভ্যাট অব্যাহতি দিয়েছিল এনবিআর। চলতি বছর এক আদেশে ২০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়। মূলত রাজস্ব আদায় বাড়ানোর স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত। ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্তের পর বিভিন্ন মহল থেকে এর বিরোধিতা করা হয়েছে। তবে এতে কর্ণপাত করেনি এনবিআর।

রাজস্ব আদায় ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার জেরে কখনোই রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি এনবিআর। এই খাতে ভ্যাট বসালে কত টাকা বাড়তি রাজস্ব পাবে, তার একটি জরিপ করেছে সংস্থাটি। তাতে দেখা গেছে, মেট্রো রেলে ভ্যাট অব্যাহতি তুলে দিলে প্রতি মাসে ছয় কোটি টাকা ভ্যাট আদায় হবে। সে হিসাবে এক বছরে ৭২ কোটি টাকা বাড়তি ভ্যাট পাবে এনবিআর।

এর আগে মেট্রো রেলের ওপর ভ্যাট প্রযোজ্য নয় উল্লেখ করে এনবিআরকে চিঠি দিয়েছিল ঢাকা মাস ট্রানজিট কম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। যুক্তি তুলে ধরে ডিএমটিসিএল জানায়, মেট্রো রেল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভর্তুকির মাধ্যমেই চলে। শুধু ভাড়ার টাকায় মেট্রো রেল লাভজনক হয় না। মেট্রো রেল সেবা সবার জন্য। এই যাত্রীদের কোনো শ্রেণিবিন্যাস না থাকায় যাত্রীসেবার ওপর ভ্যাট প্রযোজ্য নয়।

তবে এনবিআরের মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২-এর ধারা-২৬ অনুযায়ী, যাত্রী পরিবহন সেবার ক্ষেত্রে তাপানুকূল ও প্রথম শ্রেণির নন-এসি রেলওয়ে সার্ভিসের সেবার ক্ষেত্রে অব্যাহতি দেওয়া হয়নি। যেহেতু মেট্রো রেল সম্পূর্ণ তাপানুকূল নিয়ন্ত্রিত, বর্তমানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেলওয়ে সার্ভিসের ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রযোজ্য রয়েছে।

ডিএমটিসিএলের ভাড়ার তালিকা অনুযায়ী, বর্তমানে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিল স্টেশনের ভাড়া ১০০ টাকা। এ ছাড়া যেকোনো দূরত্বে যাতায়াতে সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। ডিএমটিসিএলের দাবি, এই ভাড়ার সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত করলে ২০ টাকার ভাড়া বেড়ে দাঁড়াবে ২৩ টাকায়। এ ছাড়া শুরু থেকে শেষ স্টেশনে যাতায়াত করলে ১০০ টাকার ভাড়া হবে ১১৫ টাকা। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় দুই লাখ ৬০ হাজার যাত্রী মেট্রো রেলে যাতায়াত করে।

যদিও শুরু থেকেই এনবিআর দাবি করেছে, ভ্যাটের সঙ্গে টিকিটের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। ভ্যাট শুরু থেকেই ছিল। তবে তা নেওয়া হয়নি। টিকিটের মূল্যের মধ্যেই ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত ছিল। সে হিসাবে প্রতি ১০০ টাকায় ভ্যাটের পরিমাণ ১৩ টাকা চার পয়সা। অর্থাৎ ভ্যাটের টাকা বাদ দিয়ে প্রতি ১০০ টাকায় ৮৬ টাকা ৯৬ পয়সা ভাড়া পাবে ডিএমটিসিএল।

ভ্যাট আদায়ে টিকিটের দাম না বাড়লেও মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের আয়ের পরিমাণ কমে যাবে। বিপরীতে বাড়বে সরকারের ভর্তুকির পরিমাণ। সাম্প্রতিক সময়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময়ে দুর্বৃত্তরা আগুন দেয় মেট্রো রেলের মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে। এতে প্রাথমিকভাবে ৩০০ কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতির কথা বলা হলেও পরে এর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বলা হয়েছে ৫০ কোটিরও কম।

LEAVE A REPLY