জন্ম ভারতে, জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে এসে হয়ে ওঠেন ‘নায়করাজ’

নায়করাজ রাজ্জাক

নায়ক তো অনেকে, নায়করাজ একজনই—রাজ্জাক। বাংলা চলচ্চিত্রের সমৃদ্ধ এক অধ্যায় তাঁর দখলে। নায়কোচিত চরিত্রে যেমন জয় করেছিলেন দর্শকের মন, তেমনি নন্দিত হয়েছেন জ্যেষ্ঠ চরিত্রে অভিনয় করেও। পাশাপাশি অভিভাবকের মতো আগলে রেখেছিলেন ঢালিউডবাসীকে।

আজ সেই অভিভাবক হারানোর দিন। ২০২১ সালের আজকের দিনে না-ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন তিনি।

নন্দিত এই অভিনেতা বাংলা চলচ্চিত্রে দীর্ঘ সাড়ে ছয় দশক ধরে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে অভিনয় করে নায়করাজ উপাধি লাভ করেছিলেন। তার জন্ম হয়েছিল ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার টালিগঞ্জে।

তিনি বাংলাদেশের কেউ ছিলেন না। কলকাতায় কেটেছিল শৈশব, কৈশোর। তাহলে কীভাবে তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন, হয়ে উঠেছিলেন এ দেশের সিনেমার অবিচ্ছেদ্য অংশ? সেই ঘটনা হয়তো অনেকেরই অজানা।

4
কবরীর সঙ্গে রাজ্জাক

সালটা ১৯৬৪।

এপ্রিল মাস। ওই সময় রাজ্জাকের জন্মস্থান কলকাতায় হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয়াবহ এক দাঙ্গা শুরু হয়। সমানে মরছে মানুষ। প্রাণ বাঁচাতে ১৯৬৪ সালের ২৫ এপ্রিল রাতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে এক হিন্দু বাড়িতে আশ্রয় নেন রাজ্জাক। পরের দিন চলে আসেন ঢাকায়।

আসার সময় রাজ্জাকের সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী লক্ষ্মী, ছেলে বাপ্পারাজ। আরও ছিল পীযূষ বসুর দেয়া একটি চিঠি এবং পরিচালক আব্দুল জব্বার খান ও শব্দগ্রাহক মণি বোসের ঠিকানা।

সে সময় স্ত্রী-পুত্রকে শরণার্থী শিবিরে রেখে রাজ্জাক দেখা করেন পরিচালক আব্দুল জব্বার খানের সঙ্গে। তার আশ্বাস পেয়ে রাজ্জাক ৮০ টাকা মাসিক ভাড়ায় স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে রাজধানীর কমলাপুরে একটি ভাড়া বাসায় থাকতে শুরু করেন। পরে তিনি সুভাষ দত্ত, সৈয়দ আওয়াল, এহতেশামসহ আরও কয়েকজন চলচ্চিত্রকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

পরিচালক আব্দুল জব্বার খানই রাজ্জাককে ইকবাল ফিল্মসে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশে আসার বছরই তিনি কামাল আহমেদের সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসেবে ‘উজালা’ চলচ্চিত্রে কাজ করার সুযোগ পান। সহকারী পরিচালক হিসেবে তার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ছিল ‘পরওয়ানা’। কিন্তু ৮০ ভাগ কাজ হওয়ার পর তিনি এই ছবির কাজ ছেড়ে দেন।

রাজ্জাক তখন অভিনয়ে সুযোগ পাওয়ার সন্ধানে হাউসে হাউসে ঘুরছেন। কেউ ভরসা দিল, কেউ তাড়িয়ে দিল। কলকাতা থেকে যে অর্থ নিয়ে এসেছিলেন, তা-ও প্রায় শেষের পথে। চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে খড়কুটো আঁকড়ে ধরার মতো করে ‘ঘরোয়া’ নামের একটি টিভি ধারাবাহিকে অভিনয় শুরু করলেন।

রাজ্জাকের ভাগ্য বদলে দিল জহির রায়হানের সঙ্গে পরিচয়। বছর দুয়েকের মাথায় ‘বেহুলা’য় প্রথম নায়ক হওয়ার সুযোগ পেলেন তিনি। ‘বেহুলা’ চলচ্চিত্রে চিত্রনায়িকা সুচন্দার বিপরীতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন নায়করাজ রাজ্জাক। সেই থেকে শুরু। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ ৬০টি বছর। এই সময়ের মধ্যে তিন শতাধিক ছবিতে তিনি নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেন। নিজেকে নিয়ে যান অন্য এক উচ্চতায়। এছাড়া তিনি কলকাতায়ও ৩০টির মতো ছবিতে অভিনয় করেন। এপার বাংলার মতো ওপার বাংলাতেও কিংবদন্তি হিসেবেই সম্মান করা হয় নায়করাজ রাজ্জাককে।

LEAVE A REPLY