৪ ব্যক্তির কারণে পতন ঘটে শেখ হাসিনার

ছাত্র আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তার পতন ও দেশত্যাগের পেছনে চারজনের একটি চক্র দায়ী। তাদের ‘গ্যাং অব ফোর’ হিসেবে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের এক নেতা। 

ওই নেতার বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদপত্র দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে বৃহস্পতিবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। 

ওই নেতা বলেছেন, চারজনের ওই চক্রটি শেখ হাসিনাকে দেশের বাস্তব অবস্থা থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল। প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগের আরও কয়েকজন নেতার বক্তব্য রয়েছে।  

শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত তার মন্ত্রিসভার সদস্য, এমনকি ঘনিষ্ঠ সহযোগীদেরও ‘পুরোপুরি বিস্মিত’ করেছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা। 

তাদের একজন বলেছেন, ‘আমরা টেলিভিশনের খবর থেকে তার দেশত্যাগের খবর জানতে পারি। এরপর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন দলটির অনেক নেতাকর্মী। এমন অবস্থায় আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলেছে ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস। সরকার পতনের পেছনে তারা তাদের মন্তব্য জানিয়েছেন।   

‘গ্যাং অব ফোর’ অ্যাখ্যা দেওয়া আওয়ামী লীগের ওই নেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনা আমাদের কথা শোনেননি। এই চক্রটি (‘গ্যাং অব ফোর’) শেখ হাসিনাকে বাস্তব অবস্থা বুঝতে দেয়নি। তার দৃষ্টিতে এই চার নেতা হলেন, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ (জয়), বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

তিনি বলেন, ‘এই চারজন শেখ হাসিনার পতনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাদের ওপর তার ছিল অন্ধবিশ্বাস। শেখ হাসিনার সহজাত যে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ছিল, তা তিনি এদের কারণে হারিয়েছেন।’এই নেতার অভিযোগ- শেখ হাসিনা তাদের কথা শোনা বন্ধ করে দিয়েছেন। 

আওয়ামী লীগের বিগত সরকারের এক মন্ত্রী বলেছেন, ৫ আগস্ট বেলা ৩টার দিকে সেনাপ্রধান যখন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন তখন জনগণ টিভিতে তার বক্তব্য শুনছিল। আমরা ঠিক সে সময় বাড়ি থেকে বের হওয়ার সুযোগ পাই। ধরা পড়লে পরিবারসহ আমাদের জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হতো।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের কিছু নেতা জুলাই মাসে শিক্ষার্থীসহ বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর জন্য অনুতপ্ত হন। ৩ থেকে ৪ আগস্ট দেশব্যাপী জনগণ যখন রাস্তায় নামে তখন তারাও যোগ দেন।

চলতি বছরের জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপিকে অংশ নিতে না দেওয়াকে হাসিনার ‘বড় ভুল’ বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা। 

একটি সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি বলেছে, লন্ডনে নির্বাসিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কিছু নেতা মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন। নির্বাচনের এক বছর আগে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে তারেকের সঙ্গে যোগাযোগের প্রস্তাবে সাড়া দেননি শেখ হাসিনা।

ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের সঙ্গে কথা বলা নেতারা বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া এই দল অস্তিত্বের সংকটে পড়লেও এখনও ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা রাখে। তবে এজন্য এমন লোকদের সামনের সারির নেতৃত্বে আনতে হবে যাদের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগ আছে। 

LEAVE A REPLY