আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সমীচীন হবে না : আসিফ নজরুল

ফাইল ছবি

রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সমীচীন হবে না বলে মনে করছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ‘যখন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে, তখন আমাদের অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস থেকে প্রতিবাদ করা হয়েছে।’ কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ না করার পক্ষে মত দেন তিনি, যদি না দলটি কোনো জঙ্গিবাদী বা রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত থাকে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, সত্যিকার অর্থে যদি কোনো রাজনৈতিক দল জঙ্গিবাদী বা রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতায় জড়িত থাকে, তাহলে প্রচণ্ড সততার সঙ্গে তদন্ত করে এমন কিছু (নিষিদ্ধ) করা যেতে পারে।

সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে গতকাল সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কোনো নীতিগত অবস্থান থেকে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেনি। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক অপকৌশলের অংশ হিসেবে, ছাত্র-জনতার বিপ্লব নির্মমভাবে দমন করার জন্য ইস্যুটিকে এভাবে ব্যবহার করেছিল।’

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছে, তারা (আওয়ামী লীগ) জামায়াত-বিএনপিকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল এবং ওই ন্যারেটিভের অংশ হিসেবে হঠাৎ করে জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। যে ন্যারেটিভ দিয়ে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, তা সত্যি নয়।

সেটি ছাত্র-জনতার বিপ্লব ছিল। ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে আখ্যায়িত করে একটি দলের ওপর চাপিয়ে দিয়ে তাকে নিষিদ্ধ করা—আমরা এই মিথ্যা ন্যারেটিভের অংশ হতে পারি না। আমরা ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে পরাজিত ও প্রত্যাখ্যাত একটি দলের অন্যায় ন্যারেটিভের অংশ হতে পারি না।’

তিনি বলেন, জামায়াতকে আওয়ামী লীগ একটি বিশেষ সময়ে, একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে নিষিদ্ধ করেছিল।

সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আবেদন করেছিল জামায়াতে ইসলামী। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জামায়াতের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত এসেছে। এটি মূলত আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে; অর্থাৎ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের যে কাগজটি এসেছে, তাতে শব্দচয়ন ঠিক আছে কি না, ভাষাচয়ন ঠিক আছে কি না, আইন অনুযায়ী হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা।

এ ক্ষেত্রে আইন মন্ত্রণালয়ের কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া বা না নেওয়ার কোনো অবকাশ নেই। আসিফ নজরুল স্মরণ করিয়ে দেন, ‘আমাদের সমাজের কিছু মহল থেকে বহু বছর যাবৎ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠত।

আওয়ামী লীগ একটানা ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিল, কিন্তু তারা জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেনি। তারা এমন একটি বিশেষ মুহূর্তে এটি করেছে, যখন ছাত্র-জনতার বিপ্লব চলছিল, গণ-অভ্যুত্থান চলছিল। তারা ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে আখ্যায়িত করে, এই গণ-অভ্যুত্থান নির্মমভাবে দমন করার চেষ্টায় রত ছিল। এর বহু প্রমাণ আছে।’

আদালতে যাওয়ার সময় কাউকে আক্রমণ করা উচিত নয়

আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘আদালত চত্বরে যে হামলা হচ্ছে, এটা কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। আদালতে যাওয়ার সময় আক্রমণ কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। কিন্তু আপনারা প্রেক্ষাপটটা বুঝবেন। বিদায়ি সরকারের বিভিন্ন নেতাকর্মীকে আদালতে নেওয়ার সময় তাঁদের ওপর ডিম ছুড়ে মারাসহ নানা ধরনের আক্রমণ হয়েছে।’ 

তিনি বলেন, মন্ত্রিসভার সঙ্গে থাকা লোকগুলোকে জনগণের শত্রুতে রূপান্তর করার দায়ভার সাবেক সরকারের। তারা এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে গেছে, জনরোষে পরিণত হয়েছে। আদালত চত্বরে অনেক বিক্ষুব্ধ মানুষ থাকে; যারা ১৫ বছরে চাকরি হারিয়েছে, জীবনের নিরাপত্তার ভয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে, জীবিকা হারিয়ে ঢাকা শহরে লুকিয়ে থেকেছে, গুম-হত্যার শিকার পরিবার আছে। এখন মানুষের এত ক্ষোভ, এত ক্রোধ, তার কিছু বহিঃপ্রকাশ ঘটে। তবে এই বহিঃপ্রকাশকে সমর্থন করছি না, প্রশ্নই আসে না।

পুলিশ-প্রশাসন কেন যথেষ্ট বাধা দিতে পারে না—এ প্রসঙ্গেও কথা বলেন তিনি। যথেষ্ট বাধা দিলে তখন পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নেবে। কারণ পুলিশ খুব ডিমোরালাইজড অবস্থায় আছে। এটাও সাবেক সরকারের অবদান। কারণ তারা পুলিশকে এমন একটা গণশত্রু বাহিনীতে পরিণত করেছিল, যে পুলিশ সাহস করে তাদের বাধা দিতে পারে না।

আশা করি সাকিব গ্রেপ্তার হবেন না

সচিবালয়ে গতকাল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, জাতীয় ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে হওয়া হত্যা মামলা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে অনেক লেখালেখি হলেও জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হকের মামলার সময় দেশের সংবাদমাধ্যম চুপ ছিল।

সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে, যেহেতু তিনি একজন তারকা, এটা নিয়ে দেশ-বিদেশে আলোচনা হচ্ছে, এটা নিয়ে আপনাদের অবস্থান কী? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আসিফ নজরুল জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার, অধিনায়ক ও বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় আমিনুলের প্রসঙ্গ টানেন।

মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটাও আওয়ামী লীগই তো শুরু করেছে। সাকিব তো আর রাষ্ট্রের জন্য কিছু বয়ে আনেননি। সাকিব নিজেই অনেক কিছু অর্জন করেছেন। আমিনুল তো রাষ্ট্রের জন্য পুরস্কার বয়ে এনেছিলেন। জাতীয় দলের ক্যাপ্টেন ছিলেন তিনি। আমিনুলকে যেভাবে অত্যাচার করা হয়েছে, তখন কি আপনারা প্রশ্ন করেছিলেন? আমিনুলকে তো জেলে ভরা হয়েছে, সাকিবের বিরুদ্ধে জাস্ট মামলা হয়েছে।’

আমিনুলের বিরুদ্ধে মামলার সময় সংবাদমাধ্যমের নীরব ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমিনুলকে যখন গ্রেপ্তার করা হয়েছে, দিনের পর দিন জামিন দিচ্ছিল না, আমি নিজে শুধু কলাম লিখেছি। আপনাদের কাউকে লিখতে দেখিনি পত্রিকায়।’

আমিনুলের মতো এই ভোগান্তি সাকিবকে যাতে ভুগতে না হয়, সেটা খেয়াল রাখা হবে—এ রকম আশ্বাস দিয়েছেন আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘এটা পুলিশ প্রশাসনের ব্যাপার। আমরা যতটুকু বলার, চেষ্টা করেছি। মামলা হওয়া বা এফআইআর হওয়া মানেই তো গ্রেপ্তার নয়। আমার বিশ্বাস, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ নেওয়া হবে, যাতে কেউ অতি উৎসাহিত হয়ে গ্রেপ্তার না করতে যায়। আশা করি, সাকিব গ্রেপ্তার হবে না।’

LEAVE A REPLY