‘আলো আসবেই’ গ্রুপের মতো ওই সময় কমপক্ষে ১৫-২০টা গ্রুপ হয়েছিল

আহসান হাবিব নাসিম

গ্রাউন্ড জিরোতে গতকাল সংস্কারকামী ৪৭ অভিনয়শিল্পী এক হয়ে ‘অভিনয়শিল্পী সংঘ’র কাছে পাঁচটি দাবি জানিয়েছেন। এগুলো হলো, কথা বলার অধিকার নিশ্চিত করা এবং শিল্পীদের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে সে জন্য দুঃখ প্রকাশ করা। নির্দিষ্ট শাসনকাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়ে মানবিক প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাঁরা অমানবিক-অশিল্পীসুলভ আচরণ করেছেন তাঁদের জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। প্রথম দুই প্রস্তাবে অনীহা প্রকাশ করলে বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করে সবাইকে পদত্যাগ করতে হবে এবং অন্তর্বর্তীকালীন রিফর্মেশন কমিটি গঠন করতে হবে।

সর্বশেষ দাবি, অভিনয়শিল্পীদের স্বার্থ, অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় বৈষম্যহীন  সংগঠনের রূপরেখা প্রণয়ণ করা।

এসব দাবির প্রেক্ষিতে অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবিব নাসিমের সঙ্গে কথা বলেছে কালের কণ্ঠ। তুলে ধরা হলো তার কিছু অংশ।

গতকাল যেসব অভিনয়শিল্পী গ্রাউন্ড জিরোতে বসেছিল তারা আপনাদের সেখানে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল।

না যাওয়ার কারণটা কি আমাদের বলবেন?

আমরা শুরু থেকেই বলেছি নতুন যেসব প্রস্তাবনা আসবে সবই আমরা শুনবো। সেভাবে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তারা শুরুতে অভিনয়শিল্পী সংঘের অফিসে আসতে চেয়েছিল। আমরা জানতে চেয়েছিলাম কে কে আসবে তার একটা তালিকা দিতে।

তারপর তারা ৮০ জনের একটা তালিকা দিয়েছিল। সেখানে অর্ধেকের বেশি আমাদের সদস্য নয়। সেটা দেখে আমাদের কার্যনির্বাহী পরিষদ বলেছে, যারা সদস্য তারা যদি প্রস্তাবনা নিয়ে আসেন তাহলে সংস্কার করা সম্ভব। যারা সদস্য নয়, তারা না আসাই ভালো। তাদের এটা জানানোর পর তারা প্রত্যাখ্যান করেন।

তারা বলেন, কাল (৭ সেপ্টেম্বর) আমরা এখানে থাকবো আপনারা আসতে পারেন বা পরবর্তীতে আর একটা সময় নির্ধারণ করা যেতে পারে। ওইদিন আবুল হায়াতের জন্মদিন, আমাদের একটা আয়োজন ছিল। তাই আর ওখানে যাওয়া হয়নি। তা ছাড়া পরবর্তীতে আলোচনার সুযোগ রয়েছে বলে আর যাইনি। এরমধ্যে আমাদের অফিসে কিন্তু ৬০-৭০ জনের একটা দল আলোচনার জন্য এসেছিল। তারা সবাই সংগঠনের সদস্য।

তাদের কিছু দাবি-দাওয়া আছে, সেসব নিয়ে আপনাদের মন্তব্য কী?

সেখানে বলা আছে প্রকাশ্যে মাফ চাইতে হবে। কিন্তু সেটা কিভাবে ও কে কে মাফ চাইবে বলা হয়নি। আবার সংস্কার বিষয়ে বলেছে, কিন্তু সেটা কিভাবে হবে সেটা কিন্তু বলছে না।

কিন্তু তারা তো স্পষ্ট করেছে দায়িত্বশীলদের ক্ষমা চাওয়া বা পদত্যাগ

আমি না হয় পদত্যাগ করলাম কিন্তু কার কাছে করব? এক্ষেত্রে সাংগঠনিক গঠনতন্ত্র ব্যত্যয় ঘটবে। কারণ গঠনতন্ত্রে আছে আরেকটা কমিটির কাছে পদত্যাগ করতে হবে। এখানে তো আরেকটা নতুন কমিটি তৈরি হয়নি। নতুন কমিটির জন্য সাধারণ সভা বা ভোট। ভোটের তো দেরি আছে। কিন্তু সাধারণ সভার মাধ্যমে হয়তো এডহক কমিটি করা যেতে পারে। তারা ভোটের মাধ্যমে নতুন কমিটি দেবে।

পুরা দেশেরই কিন্তু এই সমস্যা ছিল। অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে নেই কিন্তু প্রয়োজনে সেটা করতে হয়েছে। দেশও চলছে।

এটা তো হচ্ছে। তবে আমরা এখন যেটা ভাবছি, তাদের মতো আরো গ্রুপ আছে। তাদেরও ক্ষুব্ধতা আছে। আমাদের পূর্নাঙ্গ সদস্য আছে ৭০০-৮০০। তাদেরও কথা আছে। আমাদের মেয়াদ ২০২৫ এর এপ্রিল অবধি আছে। কিন্তু আমরা এই মুহুর্তে চিন্তা করছি অতি দ্রুত একটা বিশেষ সাধারণ সভার ঘোষ্যণা দেব। সেখানেই সব বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হবে।

কিন্তু তারা তো সময় বেঁধে দিয়েছে, ১০ সেপ্টেম্বর

এতে করে তারা আলোচনার পথটা বন্ধ করে দিয়েছে। এই তিন দিনে আমরা কার কাছে পদত্যাগ করব বা কে কে ক্ষমা চাইবে সেটা পরিষ্কার না।

এই যে এক অভিনয়শিল্পী সংঘ থেকে তিন-চারটা গ্রুপ দাঁড়িয়ে গেলে, এটার মূল কারণ কী বলে আপনার মনে হয়?

যখন আন্দোলনটা শুরু হয়, তখন আমরা একটা বিবৃতি দিয়েছিলাম। যেটা সার্বজনীন হয়নি। এটা একটা চেতনার বিবৃতি হয়েছে। এ কারণে হতে পারে। 

তো এটা কি সরকারের পতনের আগে বুঝেছেন নাকি পরে?

না না, আগেই বুঝেছি। চেতনায় হওয়ার কারণে এটা কেউ বিশ্বাস করতেও পারেন, নাও পারেন।

তাহলে এটা দেয়ার কারণ কী?

১৪ তারিখে আমাদের কাছে একটা স্লোগান আসে। তখনই আমরা দিয়েছি। কিন্তু পরে বুঝতে পেরেছি এটা সার্বজনীন হয়নি। এ কারণে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম মানবতার পক্ষে ও ছাত্র হত্যার বিপক্ষে দাঁড়াতে হবে। সেটা আমরা যখন জুলাই ২৯/৩০ তারিখের দিকে আলোচনা করছি। তারপর দিন ৩১ জুলাই ‘আলো আসবেই’ গ্রুপটা খোলা হয়। ওই গ্রুপটা খোলা হলে তারা ইচ্ছামতো সবাই যুক্ত করে। ওখান থেকে বলা হলো আমরা বিটিভিতে যাব এই সময়ে। তখন আমরা অসম্মতি জানাই। আমরা কিন্তু ঢাকা মেডিক্যালে গেলাম। ফার্মগেট থেকে এসে যুক্ত হলেন মামুন ভাই (মামুনুর রশীদ)। যখন ঢাকা মেডিক্যালে টিভিতে কথা বলছিলাম তখন ফেরদৌসসহ অনেকেই এসে পাশে দাঁড়ান। তখন সবাই ভাবে আমরা তাদের সঙ্গে আছি।

ওই দিন স্বাভাবিক দুটি গ্রুপ ছিল। একদল গিয়েছিল বিটিভিতে আরেকদল ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের সামনে। আপনারা সংঘের সভাপতি সেক্রেটারি আসলে কোথায় ছিলেন? চুপচাপ থাকার দলে?

অবশ্যই চুপচাপ থাকার দলে না। আমরা তো ঢাকা মেডিক্যালে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে টিভির সামনে কথা বলেছি। আমার বক্তব্য পরিষ্কার করেছি। আমাকে কয়েকটা গ্রুপ থেকে একবার এটা বলছে, আবার আরেক গ্রুপ অন্যটা বলছে। আমি তো দৃশ্য মাধ্যমের গ্রুপেও ‍ছিলাম। আবার আলো আসবেই গ্রুপে ছিলাম। এখন দৃশ্য মাধ্যমের ক্রেডিট কি আমাকে তুমি দিবা?

সেটা তো আমি দেয়ার কেউ না। তবে ওই দৃশ্য মাধ্যম গ্রুপে আমিও ছিলাম। ওই গ্রুপটা কিন্তু কাজটা শেষ হওয়ার পরেই বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আলো আসবেই একটিভ ছিল।

আমরা অবশ্যই ছাত্র হত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছি। আমাদের হয়তো সাংগঠনিক ভূমিকা নেওয়া হয়নি। যে আন্দোলনে গিয়েছিল কিংবা বিরোধীতা করেছে কাউকে নিষেধ করিনি। এটা তো সংগঠন করতে পারে না।

কিন্তু সংগঠন তো ন্যায় অন্যায়টা বলতে পারে। বিটিভির ধংস্বস্তুপের চেয়ে ছাত্রদের মৃত্যু বেদনাদায়ক এটা তো বলতে পারে?

সেটা পারে। আমরা বলেছিও। আমাদের বিবৃতিটা যখন সাবর্জনীন হয়নি তখনই আসলে সমস্যাটা হয়ে যায়।

আপনারা তো বিবৃতিটা এখন অবধি প্রত্যাহারও করেননি।

আনুষ্ঠানিকভাবে করা হয়নি। এটাও আমরা সাধারণ সভায় তুলবো। তখন সবার সম্মতি নিয়ে বিবৃতি প্রত্যাহার করবো।

কিন্তু আপনার কি মনে হয় না, ওই সময় প্রত্যাহার একরকম আর এতদিন পরে এসে আরেকরকম হবে বিষয়টা?

আমাদের আসলে শুরু থেকেই টাইমিংটা ঠিক হয়নি। আমি যদি ব্যক্তি নাসিম হতাম তাহলে আমার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হতো। এই যে ধরো আলো আসবেই গ্রুপে এড করা হয়েছে সেখানে তো আমি কোনো ভূমিকা রাখিনি।

কিন্তু আপনাকে তো এক ধরণের আস্থা থেকেই রাখা হয়েছে। নিশ্চয় আপনি তাদের হয়েই কথা বলবেন বলেই। যেমনটা আমাদের লিমন আহমেদ নামে এক বিনোদন সাংবাদিককে রাখা হয়েছিল। অন্য কোনো বিনোদন সাংবাদিককে কিন্তু রাখা হয় নাই।

কাকে যে কে অ্যাড করেছে বলা মুশকিল। বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। আর বের হয়ে গেলেও সেখানে নাম থাকতো। যাই হোক ওইটার মধ্যে আমি আর ঢুকিই নাই। প্রথমদিন যখন দেখেছি আমার সঙ্গে মিলে নাই, তখনই এড়িয়ে গিয়েছি। ওই সময় কমপক্ষে ১৫-২০টা গ্রুপ হয়েছিল।

অভিনয়শিল্পী সংঘ তো নিশ্চয় সামাজিক কিছু বিষয়ে দায়বদ্ধ। সেটা কি এ আন্দোলনের মাধ্যমে প্রমাণ করতে পেরেছে?

অবশ্যই দায়বদ্ধ। এই সংগঠনের অনেকেই কিন্তু আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিল। মুষ্টিমেয় হয়তো বিরোধীতা করেছে। সমর্থন করেনি।

এই মুষ্টিমেয়র বিরুদ্ধে কি কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবেন?

এরইমধ্যে সেটা শুরু হয়েছে। আমরা শোকজ করেছি। অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দুই-চারজনের নাম কি বলবেন, যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন?

এইটা এখনই বলতে চাইছি না। এটা জানা যাবে।

সবশেষ প্রশ্ন, আপনি অভিনয়শিল্পী সংঘের দুই বারের সাধারণ সম্পাদক ও এখন সভাপতি হিসেবে আছেন। আবার সাড়ে ১৫ বছরে সরকার ক্ষমতায় ছিল। এই সময়ে এই সরকারের কোনো ভুল বা অন্যায় চোখে পড়েছে?

মানুষ কথা বলতে পারেনি। এটা একটা বড় সমস্যা ছিল না। 

কিন্তু এটা নিয়ে কোনো ভূমিকা কি অভিনয়শিল্পী নিয়েছিল?

এবার ২০২০ বা ২১ সালের দিকে স্কুলের প্রতিযোগিতা থেকে অভিনয় ও চিত্রাঙ্গন বিষয়টা বাদ দেওয়া হয়েছিল। সেটার জন্য আমরা চিঠি দিয়েছি। পোস্ট করেছি। পরে সেটা আবার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। 

ধন্যবাদ আপনাকে।

তোমাকেও ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY