আজ সিনেমার ‘নবাব’-কে হারানোর দিন

আনোয়ার হোসেন

আজ ঢাকাই চলচ্চিত্রের ‘নবাব’ আনোয়ার হোসেনকে হারানোর দিন। ২০১৩ সালের এই দিনে তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। দীর্ঘ পাঁচ দশকের ক্যারিয়ারে পাঁচ শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। বিশেষ করে ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ ছবিতে অভিনয় করেই জিতে নেন ভক্তদের মন।

বলা যায়, বাংলা সিনেমার নন্দিত অভিনেতার নাম আনোয়ার হোসেন। রুপালি পর্দায় নবাব সিরাজউদ্দৌলা হিসেবে খ্যাত তার নাম।  আনোয়ার হোসেনের জন্ম ১৯৩১ সালের ৬ নভেম্বর জামালপুর জেলার মুরুলিয়া গ্রামের মিয়াবাড়িতে। বাবা এ কে এম নাজির হোসেন ছিলেন জেলা সাবরেজিস্ট্রার।

১৯৪০ সালে দেওয়ানগঞ্জ প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হন এবং স্কুলের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হন তিনি। ১৯৫১ সালে জামালপুর হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে ময়মনসিংহ কলেজে ভর্তি হন

কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্রাবস্থায় আসকার ইবনে শাইখের ‘পদক্ষেপ’ নাটকে অভিনয় করার পর থেকে নাটকের প্রতি দুর্বার আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিয়ে বাবার বন্ধু আবদুল্লাহ খানের ‘সেলকন ইঞ্জিনিয়ারিং’ ফার্মে সুপারভাইজারের চাকরি নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ১৯৫৯ সালে ননী দাসের পরিচালনায় ‘এক টুকরো জমি’ নাটকে অভিনয় করেন।

ঢাকা বেতারে অডিশন দিয়ে নির্বাচিত হয়ে ‘হাতেম তাই’ নাটকে একটি ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন। মঞ্চনাটকে অভিনয় করতে গিয়ে পরিচয় হয় আব্দুল জব্বার খান, মোহাম্মদ আনিস ও হাবিবুর রহমানের সঙ্গে।

১৯৬১ সালে আনোয়ার হোসেন মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘তোমার আমার’ ছবিতে ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করেন। এরপর সালাহউদ্দিন পরিচালিত ‘সূর্যস্নান’ ছবিতে নায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৬১ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ১৮টি ছবিতে কাজ করেন তিনি।

১৯৬৭ সালে ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ ছবিতে নবাবের চরিত্রে অভিনয় করে পান ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি। সিরাজের দেশপ্রেমের যন্ত্রণা দর্শকদের মনে জাগিয়ে দিতে পেরেছেন বলে ছবিটি প্রশংসিত হয়। আনোয়ার হোসেন ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, সাহিত্যনির্ভর, শিশুতোষ, লোককাহিনিভিত্তিক, পোশাকি ফ্যান্টাসি, পরিচ্ছন্ন সামাজিক, পারিবারিক মেলোড্রামা, বক্তব্যধর্মী—সব ধরনের ছবিতে অভিনয় করেছেন।

আনোয়ার হোসেন ২০১০ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পান। ১৯৭৫ সালে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী অভিনেতা তিনি। নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘লাঠিয়াল’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য তাকে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার দেওয়া হয়। এরপর আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ ছবিতে সহ-অভিনেতার পুরস্কার পান ১৯৭৮ সালে।

অভিনয় জীবনের ৫১ বছরে প্রায় পাঁচ শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। ২০০৭ সাল পর্যন্ত অভিনয় করেছেন আনোয়ার হোসেন। ১৯৫৮ সালে ‘তোমার আমার’ সিনেমার মাধ্যমেই অভিনয়ের সূচনা। ১৯৬৪ সালের ১ মে তার অভিনীত ‘দুই দিগন্ত’ ছবি দিয়ে ঢাকার ‘বলাকা’ সিনেমা হলের উদ্বোধন হয়েছিল।

তার অভিনীত অন্যতম ছবিগুলোর মধ্যে মধ্যে রয়েছে জহির রায়হান পরিচালিত ‘কাঁচের দেয়াল’ ও ‘জীবন থেকে নেয়া’, মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘তোমার আমার’ ও  ‘সূর্যস্নান’, কাজী জহির পরিচালিত ‘বন্ধন’, খান আতাউর রহমান পরিচালিত ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’, এম এ হামিদ পরিচালিত ‘অপরাজেয়’, সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’, জহিরুল হক পরিচালিত ‘রংবাজ’, আলমগীর কবির পরিচালিত ‘ধীরে বহে মেঘনা’, নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘লাঠিয়াল’, আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘নয়নমনি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘ভাত দে’ প্রভৃতি।

LEAVE A REPLY