সংস্কারের পর হবে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ

ফাইল ছবি

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনাররা (ইসি) পদত্যাগ করায় নির্বাচন কমিশনে এই মুহূর্তে এসব পদ শূন্য রয়েছে। নতুন কমিশন গঠনের আগে বিদ্যমান আইনসহ অন্যান্য বিষয়ে আমূল সংস্কার আনা হবে। এ বিষয়ে দ্রুত কাজ শুরু করবে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত কমিশন। সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ওই কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, বিগত তিনটি সাধারণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশের নির্বাচনব্যবস্থার ওপর থেকে মানুষের আস্থা উঠে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত ওই তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে ছিল রকিব, হুদা ও আউয়াল কমিশন। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি ছাড়া বড় কোনো দল অংশ নেয়নি। ওই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ৪১.৮ শতাংশ থাকলেও নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে বিভিন্ন মহল।

এমন পরিস্থিতিতে গত ৫ আগস্ট সাবেক সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা দেশে ছাড়ার পর নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের পদত্যাগের দাবি ওঠে। গত ৫ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল ও কমিশনাররা। পুরো কমিশন একযোগে পদত্যাগ করায় সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে এই মুহূর্তে নতুন ইসি গঠন করছে না অন্তর্বর্তী সরকার।

সরকার নতুন কমিশন গঠনের আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে চায়। গত ১০ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। তিনি নির্বাচন কমিশন সংস্কারে ড. বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে কমিশন গঠনের কথা জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ওই কমিশন আগামী ১ অক্টোবর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করবে। এর আগে কমিশনের অন্য সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

কমিশনের সদস্য হিসেবে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ, সরকার ও ছাত্রদের প্রতিনিধিরা থাকবেন। এই কমিশন সংশ্লিষ্ট আইন, বিধি-বিধান ও অন্য বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করে খসড়া প্রস্তাব প্রণয়ন করবে। তারা নির্বাচন ইস্যুতে সক্রিয় সংগঠন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ করবে। সর্বশেষ খসড়া প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে চূড়ান্ত প্রস্তাব প্রণয়ন করা হবে। এই কাজে তিন মাস সময় লাগতে পারে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

তবে নির্ধারিত সময়ের সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়ন করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সরকার গঠিত কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আমাদের পুরো নির্বাচন ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে। নির্বাচনী আইনগুলোতে অনেক দুর্বলতা রয়েছে। এসব দুর্বলতা দূর করতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে হবে। নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে বর্তমান ব্যবস্থায় যিনি ক্ষমতায় থাকবেন, তিনি যাকে খুশি তাকে নিয়োগ দিতে পারেন। এটা বন্ধ করতে হবে। সর্বশেষ ২০২২ সালে নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে এসংক্রান্ত আইনের খসড়া তৎকালীন আইনমন্ত্রীর কাছে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু সময়স্বল্পতার অজুহাতে তা আমলে নেওয়া হয়নি। সেটা এখন বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে।’

আইন সংস্কারের পাশাপাশি আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে জানিয়ে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ২০০৬ সালে আদালতের নির্দেশে চালু করা নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামা দেওয়ার বিষয়টি যুগোপযোগী করতে হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) কিছু পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে। ভোটার তালিকা প্রণয়নে কিভাবে আরো স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায়, সেটা দেখতে হবে। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন পর্যালোচনা করতে হবে।

LEAVE A REPLY