শক্তিশালী হারিকেন হেলেনের তাণ্ডবে যুক্তরাষ্ট্রে নিহত অন্তত ৪৩

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে হারিকেন হেলেনের কারণে শুক্রবার অন্তত ৪৩ জন মারা গেছে এবং লক্ষাধিক মানুষ বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে। বছরের সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়টি প্রথমে ফ্লোরিডার বিগ বেন্ডে আঘাত হানে সকালে এরপর জর্জিয়া এবং ক্যারোলিনাসে ওপর দিয়ে উত্তর দিকে চলে গেছে। এ সময় কমতে থাকে ঝড়ের গতিবেগও।

শুক্রবার বিকেলের দিকে সাধারণ মৌসুমি ঝড়ে পরিণত হয় হেলেন, ঘণ্টায় ৫৫ থেকে ৩৫ কিলোমিটারে নেমে আসে বাতাসের গতিবেগ।

 তবে কতৃপক্ষ ব্যাপক বাতাস, বন্যা এবং টর্নেডোর বিষয়ে সতর্ক করেছে। 

আটলান্টিক মহাসাগরে উদ্ভূত ঘূর্ণিঝড় হেলেনের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে ফ্লোরিডার বিগ বেন্ড শহরের উপকূলে আছড়ে পড়ে হেলেন। এ সময় ওই এলাকায় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৪০ মাইল।পানিতে রাস্তা এবং বাড়িগুলো ডুবে যায়।

ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (ফেমা) অনুসারে হেলেন, যেটি একটি ক্যাটাগরি ৪ ঝড় ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে উপকূলে এসে আছড়ে পড়ে এবং ছয় ঘন্টা ধরে তাণ্ডব চালায়।

ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার (এনএইচসি) বলেছে, ফ্লোরিডা উপকূলের কিছু অংশজুড়ে প্রচণ্ড বাতাসের কারণে পানি স্থলভাগ থেকে ১৫ ফিট (৪.৫ মিটার) ওপরে পৌঁছায়।

এনএইচসি আরো জানিয়েছে, শুক্রবার জলোচ্ছ্বাস কমে গেলেও সম্ভাব্য ভূমিধসসহ ব্যাপক বাতাস এবং বন্যার হুমকি অব্যাহত থাকবে। জায়গাগুলিতে এখনও ৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানা ১৪তম সবচেয়ে শক্তিশালী হারিকেন এটি। আনুমানিক ৪২০ মাইল (৬৭৫ কিমি) চওড়া। এর বিশাল আকারের কারণে শক্তিশালী বাতাস এবং ভারী বৃষ্টিপাত ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, টেনেসি এবং ক্যারোলিনাসজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।গত শুক্রবার থেকে ফ্লোরিডায় কমপক্ষে আটজন মারা গেছে। 

জর্জিয়ার হুইলার কাউন্টিতে আরো দুইজন মারা গেছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। জর্জিয়ার গভর্নর ব্রায়ান কেম্প বলেছেন, তার রাজ্যে অন্তত ১৫ জন মারা গেছে। কেম্প উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করার জন্য এক হাজার ন্যাশনাল গার্ড সেনাদের নির্দেশ দিয়েছে।

জর্জিয়ার গভর্নর বলেছেন, ১৫০ টিরও বেশি রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যজুড়ে এক হাজার ৩০০টি ট্র্যাফিক সিগন্যাল কাজ করছে না এবং লোকেরা এখনও ভবনগুলোতে আটকা পড়ে আছে।

বিবিসির মার্কিন সহযোগী সিবিএস নিউজের মতে, দক্ষিণ ক্যারোলিনায় অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছে এবং ভার্জিনিয়ায় একজন নিহত হয়েছেন। বন্যাকবলিত বাড়িতে আটকে পড়া লোকদের সাহায্য করার জন্য হেলিকপ্টার, নৌকা এবং বড় যানবাহন ব্যবহার করে উদ্ধারের কাজ চলছে। 

ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস উত্তর ক্যারোলিনায় দুটি টর্নেডো আঘাত হানার কথা জানিয়েছে। টর্নেডোর আঘাতে ১১টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ১৫ জন আহত হয়েছে। চারজনকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। অঞ্চলজুড়ে ত্রিশ লক্ষেরও বেশি বাড়ি এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান শুক্রবার বিদ্যুৎবিহীন ছিল।

ফ্লোরিডার উপসাগরীয় উপকূলে টাম্পার উত্তরে পাসকো কাউন্টিতে ৬৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং দক্ষিণে লি কাউন্টিতে অনেক রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও ফ্লোরিডা উপকূল বরাবর হোটেলগুলো পানিতে প্লাবিত হয় এবং উত্তরে সুওয়ান্নি কাউন্টিতে গাছপালা বাড়ির ওপর ভেঙ্গে পড়ে।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউস থেকে বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ড জো বাইডেন বাসিন্দাদের স্থানীয় কর্মকর্তাদের কথা শুনতে এবং সরিয়ে যাওয়ার সতর্কতা অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

সূত্র : বিবিসি

LEAVE A REPLY