ইসরাইলি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর আরেক শীর্ষ নেতা নিহত হয়েছেন। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী রোববার এই দাবি করেছে। লেবাননের গোষ্ঠীটি কয়েকটি ধ্বংসাত্মক আঘাত এবং তাদের নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যার রেশ কাটিয়ে উঠার আগেই এ ঘটনাটি ঘটল।ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানায়, হিজবুল্লাহর কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের উপপ্রধান নাবিল কাউক শনিবার নিহত হয়েছেন। হিজবুল্লাহ তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি, এবং কোথায় হামলাটি হয়েছে তাও জানা যায়নি।
সাম্প্রতিক সপ্তাহে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর বেশ কয়েকজন সিনিয়র কমান্ডার নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে গোষ্ঠীটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যরাও রয়েছেন- যারা কয়েক দশক ধরে মৃত্যু বা আটক এড়িয়ে গিয়েছেন এবং নাসরুল্লাহর ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
হিজবুল্লাহকে তাদের পেজার এবং ওয়াকি-টকির মাধ্যমে একটি অত্যাধুনিক হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়। এ হামলায় ব্যাপকভাবে ইসরাইলকে দায়ী করা হয়। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুসারে, লেবাননের বড় অংশজুড়ে ইসরাইলের কয়েকটি ধাপে বিমান হামলার ১৫৬ জন নারী এবং ৮৭ জন শিশুসহ কমপক্ষে ১,০৩০ জন নিহত হয়েছে।
সাম্প্রতিক হামলায় লেবাননে লাখ লাখ মানুষ তাদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত হয়েছে। পরিবেশমন্ত্রী নাসের ইয়াসিন দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন, সরকার অনুমান করেছে যে প্রায় ২৫০,০০০ জন আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে, আর তিন থেকে চারগুণ বেশি মানুষ বন্ধু বা আত্মীয়দের সাথে বা রাস্তায় ক্যাম্পিং করে থাকছে।
হিজবুল্লাহ ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে রকেট এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু, এর বেশিভাগই ভূপাতিত করা হয়েছে বা খোলা জায়গায় গিয়ে পড়েছে। ফলে, অল্প কিছু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে এবং শুধুমাত্র বিক্ষিপ্ত ক্ষতি হয়েছে।
কাউক ১৯৮০-এর দশক থেকে হিজবুল্লাহর একজন অভিজ্ঞ সদস্য ছিলেন এবং ২০০৬ সালে ইসরাইলের সাথে যুদ্ধের সময় দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর সামরিক কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
তিনি প্রায়ই স্থানীয় গণমাধ্যমে আসতেন এবং রাজনীতি এবং নিরাপত্তাজনিত ঘটনা নিয়ে মন্তব্য করতেন। তিনি সিনিয়র হিজবুল্লাহ সদস্যদের জানাজায় তাদের জীবনযাত্রা নিয়ে প্রশংসাত্মক স্তুতি করতেন। যুক্তরাষ্ট্র ২০২০ সালে তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয়।
গাজায় ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর যুদ্ধ শুরু হলে হিজবুল্লাহ ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন নিক্ষেপ শুরু করে। হিজবুল্লাহ এবং হামাস হলো মিত্র যারা নিজেদেরকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরান সমর্থিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’-এর অংশ বলে মনে করে।
জবাবে ইসরাইল ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে, এবং সংঘাতটি ক্রমাগতভাবে পুরোদমে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। ফলে অঞ্চলব্যাপী বিশাল দাবানলের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
ইসরাইল বলেছে, তারা তাদের প্রায় ৬০ হাজার নাগরিককে এক বছর আগে উচ্ছেদ করা উত্তরের এলাকাগুলোতে ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর। হিজবুল্লাহ বলেছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি না হওয়া পর্যন্ত তারা তার রকেট নিক্ষেপ বন্ধ করবে না।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, কাতার এবং মিসরের নেতৃত্বে ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যে কয়েক মাস পরোক্ষ আলোচনা সত্ত্বেও যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা