মধ্যপ্রাচ্যে নতুন দাবানল

ইসরাইল গেল বছরের অক্টোবরে ফিলিস্তিনের গাজায় নৃশংসতা শুরু করে, যা এখনো চলছে। সেপ্টেম্বরে লেবাননেও ব্যাপক হামলা চালায় দেশটি। মাসের শেষদিকে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রধান নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে তারা হত্যা করে, যা ছিল হিজবুল্লাহ এবং তাদের অন্যতম শুভাকাঙ্ক্ষী ইরানের জন্য বড় ধাক্কা। এর প্রতিশোধ নিতে মঙ্গলবার ইসরাইলে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে ইরান। এর মধ্য দিয়ে নতুন করে ‘দাবানল’ জ্বলে উঠল মধ্যপ্রাচ্যে।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর পালটাপালটি হুমকিতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানকে চড়া মূল্য দিতে হবে। দেশটির সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বুধবার রাতেই তারা প্রতিশোধ নেবে। ইসরাইলের প্রধান সহযোগী যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ইসরাইলের প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন অব্যাহত থাকবে। ইসরাইলে আবারও হামলা হলে কড়া জবাব দেবে তারা।

জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। এ নিয়ে বুধবার বৈঠকে বসে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। ইরান বলেছে, ইসরাইল যদি পালটা হামলা চালায়, তাহলে দেশটির সব অবকাঠামোর ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হবে। এদিকে ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইরান, ইরাক ও লেবাননে উল্লাসে মেতেছে মানুষ। এ সময় আতশবাজির ঝলকানি দেখা গেছে। খবর বিবিসি, রয়টার্স, এএফপিসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের।

মঙ্গলবার রাতে ইসরাইলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে ১৮০টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। ইসরাইলের বিমানবন্দর ও ডিমোনা এলাকার পারমাণবিক গবেষণাকেন্দ্রের মতো স্পর্শকাতর কৌশলগত স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়। এসব ক্ষেপণাস্ত্রের অধিকাংশই আকাশে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। ফলে এ হামলায় অল্প কয়েকজন আহত হওয়া ছাড়া বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি বলে দাবি ইসরাইলের। তবে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে ইসরাইল। হামলার সময় লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় দেশটির আকাশসীমা। বাংকারে আশ্রয় নেন ইসরাইলের মন্ত্রিসভার সদস্যরা। তেহরানের দাবি, তারা ইসরাইলের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অকার্যকর করে দিতে দেশটির বিমানঘাঁটি ও রাডার সিস্টেমগুলোকে লক্ষ্যস্থল করেছে। ইরান বলেছে, ৯০ ভাগ ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যভেদ করেছে।

ইরানের হামলার পর কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। নিজস্ব নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে তিনি বলেন, তেহরান তেল আবিবে হামলা চালিয়ে বড় ভুল করেছে। তাদেরকে এর চড়া মূল্য দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, ইসরাইলের শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষেত্রে তার দেশের দৃঢ়সংকল্পের বিষয়টি ইরান বুঝতে পারছে না। নেতানিয়াহু বলেন, আমরা যে নিয়ম প্রতিষ্ঠা করেছি, সেটাই বলবৎ থাকবে-আমাদের ওপর যে আক্রমণ চালাবে, আমরাও তাদের ওপর পালটা আক্রমণ করব।

অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে বুধবার রাতেই শক্তিশালী হামলা চালানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছিল ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগেরি এক বিবৃতিতে বলেন, বিমানবাহিনী তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। আজ (বুধবার) রাতেই মধ্যপ্রাচ্যে শক্তিশালী হামলা চালানো হবে। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে তেহরান।

ইসরাইলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। বুধবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ইরান ও তার সমর্থনপুষ্ট সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে ইসরাইলে আর কোনো হামলা চালানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে স্পষ্টভাবে বলতে চাই, মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের সেনাঘাঁটি, ইসরাইল এবং ওই অঞ্চলে আমাদের মিত্র ও অংশীদারদের লক্ষ্য করে যদি পরবর্তী সময়ে কোনো ধরনের হামলা চালানো হয়, তাহলে আমরা ইসরাইল ও আমাদের মধ্যপ্রাচ্যের মিত্রদের পাশে থাকব এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী সেই হামলার সমুচিত জবাব দেবে।

মার্কিন ও ইসরাইলি হুমকির জবাবে ইরান বলেছে, ইসরাইল যদি আবারও ইরানে হামলার ধৃষ্টতা দেখায়, তবে তেহরান দেশটির সর্বত্র হামলা চালাবে। ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি বলেন, ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যারেজ ব্যাপক তীব্রতার সঙ্গে পুনরাবৃত্তি করা হবে এবং ইসরাইলের অবৈধ রেজিমের সব অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করা হবে।

ইরান, ইরাক ও লেবাননে উল্লাস, আতশবাজি : ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনায় ইরান, ইরাক ও লেবাননের মানুষ সড়কে নেমে উল্লাস করেছে। এ সময় আতশবাজির ঝলকানি দেখা গেছে। হামলার খবর জানার পরপরই ইরানের রাজধানী তেহরানের সড়কে নেমে আসেন শত শত মানুষ। তাদের অনেকেই ইরান ও হিজবুল্লাহর পতাকা ওড়ান। অনেকের হাতে ছিল হিজবুল্লাহর নিহত নেতা হাসান নাসরুল্লাহর ছবি। লেবাননের রাজধানী বৈরুতে আতশবাজির ঝলকানি ও ফাঁকা গুলির শব্দ শোনা যায়। বৈরুতের একটি বিদ্যালয়ে দুজন তরুণ বিজয়সূচক ‘ভি’ চিহ্ন দেখান। চিৎকার করে বলেন, আমরা বিজয়ী হয়েছি। আমরা খুবই খুশি। এছাড়া ইরাকেও উল্লাস করেছে মানুষ।

জাতিসংঘের মহাসচিবকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ইসরাইলের : জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ইসরাইল। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাৎজ বুধবার এ ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ইরান ইসরাইলে যে হামলা চালিয়েছে, সেটির পর্যাপ্ত নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব। এ কারণে তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি ইসরাইলে প্রবেশ করতে পারবেন না।

LEAVE A REPLY