সংগৃহীত ছবি
যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদায় শুভ মহালয়া উদযাপনের মধ্য দিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। গতকাল বুধবার ভোরে চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে নেমে আসার আমন্ত্রণ জানানো হয়। আগামী ৯ অক্টোবর থেকে দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। আর ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পাঁচ দিনের এই উৎসব শেষ হবে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। দুর্গাপূজার প্রস্তুতি পর্ব বা মহালয়ার প্রথম প্রহরে পিতৃপক্ষ শেষ হয়ে শুরু হয় দেবীপক্ষ। তাই ভোর থেকে সব পূজামণ্ডপে পুরোহিতের ভক্তি কণ্ঠে ‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেন সংস্থিতা-নমস্তৈস্য নমস্তৈস্য নমঃ নমঃ’ মন্ত্র উচ্চারণ শোনা যায়। এ উপলক্ষে মন্দির ও পূজামণ্ডপগুলোয় ধর্মীয় নানা আচার-অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
চণ্ডীপাঠ ছাড়াও মঙ্গলঘট স্থাপন এবং ঢাক-কাঁসর ও শঙ্খ বাজিয়ে দেবীকে মর্ত্যে আহ্বান জানান ভক্তরা। ভক্তিমূলক সংগীত, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় আলোচনা ছিল এই আনুষ্ঠানিকতার অংশ। অনেক ভক্ত তাঁদের মৃত আত্মীয়-পরিজন ও পূর্বপুরুষদের আত্মার সদগতি প্রার্থনা করে তর্পণ করেছেন।
মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাপস চন্দ্র বলেন, মহালয়ার অন্যতম অনুষঙ্গ হলো তর্পণ শ্রাদ্ধ।
তর্পণের মাধ্যমে পিতৃপক্ষের অবসান ঘটে শুরু হয় দেবীপক্ষের। ঘট স্থাপনের পর নানা স্তব-স্তুতিতে দেবীকে মর্ত্যে আহ্বান জানানো হয়।
এদিকে গতকাল ভোর ৬টায় রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপে চণ্ডীপাঠ করে দেবীকে আহ্বান জানানো হয়। সকাল ৯টায় ত্রিভঙ্গচরণ ব্রহ্মচারীর চণ্ডীপাঠের সঙ্গে সমবেত কণ্ঠে ইয়াচণ্ডী অর্চনা করা হয়। সকাল ১১টা পর্যন্ত বিশেষ পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ মন্দিরেও ছিল একই ধরনের আনুষ্ঠানিকতা। সেখানে মিশনের অধ্যক্ষ চণ্ডীপাঠ ও চণ্ডীপূজা ছাড়াও আবাহন সংগীত পরিবেশন করেন। এ ছাড়া স্বামীবাগের লোকনাথ মন্দির, রমনা কালীমন্দির ও মা আনন্দময়ী আশ্রম, সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী পূজামণ্ডপ এবং খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে সনাতন সমাজকল্যাণ সংঘের (সসকস) পূজামণ্ডপসহ রাজধানীর অন্যান্য মন্দির ও মণ্ডপে মহালয়া উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, আগামী ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠী তিথিতে হবে বোধন, দেবীর ঘুম ভাঙানোর বন্দনাপূজা। পাঁচ দিনের দুর্গোৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতার সূচনা হবে ওই দিন। পরদিন ১০ অক্টোবর সপ্তমী পূজার মাধ্যমে শুরু হবে দুর্গোৎসবের মূল আচার। অষ্টমী ও নবমী শেষে ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসবের। এবার দেবী দুর্গা মর্ত্যে আসছেন দোলায় চেপে আর ফিরবেন গজের পিঠে চড়ে।